নির্বাচনের আগে ভুয়া খবর বাড়ছে
নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে অনলাইনে গুজব ও ভুয়া খবরের সংখ্যা তত বাড়ছে৷ জাতীয় নির্বাচনকে জড়িয়ে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যম ও দেশীয় গণমাধ্যমে ৭৪টি ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷
নির্বাচনকে জড়িয়ে আট মাসে ৭৪টি ভুল তথ্য
গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যম ও দেশীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ১,০৮২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে তথ্য যাচাইসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করা রিউমর স্ক্যানার (https://rumorscanner.com/)৷ এর মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (২৪৮) ভুল তথ্য ছড়িয়েছে৷ গতবছর এই সংখ্যাটি ছিল ৯২৷ শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে জড়িয়ে গত আট মাসে ৭৪টি ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷
সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ভুয়া খবর
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ভুয়া খবরটি হচ্ছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মির্জা ফখরুল ৫০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা নিয়েছেন’৷ রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, চেকটি বার কাউন্সিলের একটি প্রণোদনার চেক থেকে সম্পাদনা করা এবং এর নম্বরটি ভুল ছিল৷
যাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর
অনলাইন যাচাই ও মিডিয়া গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ডিসমিসল্যাবের (https://dismislab.com/) হিসাবে গত জুলাই থেকে আগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত যত মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে তার ৪৪.৪ শতাংশই রাজনীতিবিষয়ক৷ রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে৷ এরপর ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী৷
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার
সম্প্রতি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণার সাথে সাথে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ প্রবাসী দেশে আসতে প্রস্তুত’ শীর্ষক একটি তথ্য দৈনিক কালবেলার সূত্রে ফেসবুকে প্রচার করা হয়৷ কিন্তু আসলে এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি৷ বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদের নামে পরিচালিত দুটি ভুয়া ফেসবুক পেজেও এটি প্রচার করা হয়েছিল৷ তবে শামা ওবায়েদ রিউমর স্ক্যানারকে জানান, তার নামে একাধিক ভুয়া ফেসবুক পেজ আছে৷ এ বিষয়ে তিনি জিডি করেছেন৷
১০ বছর আগের প্রতিবেদন নতুন করে প্রচার
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইকোনমিস্ট ২০১৩ সালের এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন জনমত জরিপের ভিত্তিতে বলেছিল, বাংলাদেশের চার-পঞ্চমাংশ মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়৷ ঐ প্রতিবেদন প্রকাশের তিনদিন পর বাংলাদেশের আমার দেশ পত্রিকায় ‘ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়’ নামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল৷ প্রায় ১০ বছর আগের সেই প্রতিবেদনটির ছবি গত কয়েকমাসে ফেসবুকে আবার পোস্ট করা হয়েছে৷
পুরোনো ছবি দিয়ে আরাফাতের টুইট
মোহাম্মদ এ আরাফাত ২৯ জুলাই চারটি ছবি পোস্ট করে সেগুলো পুলিশের ওপর বিএনপি কর্মীদের সেদিনকার হামলার ছবি বলে দাবি করেন৷ তবে একটি ছবি ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের সংঘর্ষ নিয়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত হয়েছিল৷ আরেকটি ২০২১ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিলের সময় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় তোলা৷ তৃতীয় ছবি ২০১৫ সালে জাগোনিউজে প্রকাশিত হয়েছিল৷
মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে ভুয়া তথ্য
‘অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাচ্ছেন ড. ইউনূস: পিটার হাস’ এই তথ্য দিয়ে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনের আদলে তৈরি একটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে প্রচার করা হয়৷ কিন্তু বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এমন কোনো মন্তব্য করেননি৷ প্রথম আলোও এমন সংবাদ প্রকাশ করেনি৷ প্রকৃতপক্ষে প্রথম আলোর ওয়েব পেজের স্ক্রিনশট এডিট করে পিটার হাসের নামে ভুয়া বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে৷
গয়েশ্বরের পুরোনো ছবি ব্যবহার
২৯ জুলাই ঢাকায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ধোলাইখালে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আহত হন৷ এই ঘটনার খবরের সঙ্গে ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর তোলা একটি রক্তাক্ত ছবি জুড়ে ফেসবুকে প্রচার করা হয়৷ ঐ বছরের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা-৩ আসনে গণসংযোগে চলাকালে কেরানীগঞ্জে এক হামলায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছিলেন৷ উপরের ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
নিউইয়র্ক টাইমসকে উদ্ধৃত করে ভুল তথ্য প্রচার
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে গত ২৯ আগস্ট থেকে ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে’ এমন একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার শুরু হয়৷ কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমসে এমন কোনো বক্তব্য প্রকাশিত হয়নি৷
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা চায়নি যুক্তরাষ্ট্র
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- এমন একটি খবর দৈনিক কালবেলার সূত্র দিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচার করা হয়৷ এর আগে গত মাসে কোনো সূত্রের উল্লেখ না করেই খবরটি প্রচার করা হয়েছিল৷ তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধান করে দেখেছে, কালবেলা এমন কোনো খবর প্রকাশ করেনি৷