নির্যাতিতার সেই ৩২ দিনের লড়াই
৯ অক্টোবর ২০২০২ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ঐ নারী পালিয়ে মাইজদীতে ছোট বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ ৪ অক্টোবর সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার আগে তারা দুই নির্যাতনকারীর মা-বাবা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ মেম্বারকে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন বলে জানান ঐ নারীর বোন৷ এই ৩২ দিনে (২ সেপ্টেম্বর-৪ অক্টোবর) তাদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ ‘‘যদি দশ হাজার টাকা দ্যাস তাইলে তোর এই ছবিগুলা আমরা ডিলিট কইরা দিমু, তাইলে আর ছাড়মু না৷ আর যদি টাকাটা না দ্যাস তাইলে ছাইড়া দিমু,’’ নির্যাতনকারীরা ঐ নারীকে এই হুমকি দিয়েছিল বলে ডয়চে ভেলেকে জানান ঐ নারীর বোন৷
৩২ দিনে যা ঘটেছে
মাইজদীতে ছোট বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার পর তাকে ওই রাতের নির্যাতনের বিস্তারিত জানিয়েছিলেন ঐ নারী৷ এছাড়া বছরখানেক আগে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলেও বোনকে জানান তিনি৷ এরপর তার ছোট বোন একলাশপুরে তার বোনকে নিয়ে ফেরেন৷ ডয়চে ভেলেকে তার বোন জানান, প্রথমে দেলোয়ার বাহিনীর দেলোয়ার এবং আরো এক সদস্য বাদলের পরিবারের কাছে তারা নালিশ দেন৷ কিন্তু তাদের বাবা-মা বিষয়টি আমলে না নিয়ে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়৷ তারা দাবি করেন, তাদের ছেলেরা ‘ভালো'৷ ওই নারীই ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করছে৷ এরপর তিনি তার বোনকে নিয়ে সোহাগ মেম্বারের কাছে যান সোহাগ মেম্বার প্রথমে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন তবে সে আশ্বাস দিয়ে আসলে সময়ক্ষেপণ করছিলেন৷ প্রথমে অনেক সহানুভূতি দেখালেও পরে চোখ উলটায়৷ এক পর্যায়ে দুই বোন থানায় অভিযোগ করার কথা বললে মেম্বার তাদের ভয় দেখায়৷ বলে, ‘‘থানায় গিয়ে কাজ হবে না ৷ ওরা অনেক শক্তিশালী৷ ওদের সাথে পারা যাবে না৷ তোমাদের টাকা পয়সা নাই৷ উলটো তোমরাই বিপদে পড়বে৷’’ নির্যাতিতার বোন জানান, ‘‘এরপর তো ভিডিও প্রকাশ পেলো৷ পুলিশ তৎপর হলো৷ পুলিশ এসে মাইজদীতে আমার বাসা থেকে আমার বোনকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে যায়৷ এখন তিনি পুলিশের নিরাপত্তার মধ্যেই থানায় আছেন৷’’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘এই বর্বরতার পিছনে আমার বোনের সাবেক স্বামী সুমন মিয়ারও হাত আছে বলে আমি ধারণা করছি৷ কারণ, ১২ বছর আগে আমার বোনের সাথে তার সম্পর্ক ভেঙে গেছে৷ আর ওই দিন রাতে সে আমার বোনের সাথে দেখা করতে আসার কয়েক মিনিট পরই সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢোকে৷’’
ঐ নারীর বোন আরো অভিযোগ করেন, ‘‘নির্যাতনের পর আশপাশের কয়েকজন বয়স্ক লোকও এসেছিলেন৷ তারাও কোনো কথা বলেননি৷’’
মাইজদীতে পালিয়ে যাওয়ার পরও দেলোয়ার বাহিনী ওই নারীর পিছু ছাড়েনি বলে জানান তার বোন৷ তারা তাকে বাড়িতে ফিরে আসার জন্য নানাভাবে চাপ দিতো৷ ফোন করতো৷ ফিরে না এলে ভিডিও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়৷ এরপর ফোনে আবার ওই নারী সোহাগ মেম্বারকে অনুরোধ করেন তারা যেন এখন তাকে মুক্তি দেয়৷ যেন আর ‘ঝামেলা' না করে৷ তাতেও কোনো কাজ হয়নি৷ সোহাগ মেম্বার শুধু বলেছেন ওদের অনেক ক্ষমতা, ওরা যা বলে তা করাই ভালো৷ তারা ১০ হাজার টাকা চাঁদাও দাবি করে, নয়ত ওই বর্বর নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেয়৷ কিন্তু নির্যাতিত নারীর কাছে টাকা না থাকায় দিতে পারেননি৷ তখন তিনি বোনের বাড়িতে থাকেন, টাকা দেবেন কোথা থেকে৷ এমন পরিস্থিতিতেই ওই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷
পুলিশকে জানাননি কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘মেম্বার জানাতে দেয়নি৷’’ আর পুলিশকে জানালে আরো ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে বলে তারা হুমকি দেয়৷ তারা বলে পুলিশ কিছুই করবে না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন যা হয়েছে ভালো হয়েছে৷ এই ভিডিও প্রকাশ না পেলে আমার বোন আরো নির্যাতনের শিকার হতো৷ বিচারতো দূরের কথা৷ এখন আশা করছি আমরা বিচার পাবো৷ সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই৷’’
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার এবং ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ মেম্বারসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে৷ এর মধ্যে নয়জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷
নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘‘আমরা দ্রুতই এই মামলার চার্জশিট দেবো৷ আসামিদের যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেই চেষ্টায় আমাদের কোনো ঘাটতি থাকবে না৷’’
ঘটনা ঘটনার ৩২ দিন পর কেন বিষয়টি আলোচনায় আসছে, পুলিশ উদ্যোগ নিচ্ছে সেই বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার৷
বেগমগঞ্জ থানার ওসি হারুন অর রশীদ দাবি করেছেন, তিনি আগে কোনো অভিযোগ পাননি৷ তার কথা, ‘‘আমি অভিযোগ বা তথ্য না পেলে ব্যবস্থা নেবো কিভাবে?’’