গোলকধাঁধায় বাংলাদেশের রাজনীতি
২১ মে ২০১৩বিরোধী দল এই নিষেধাজ্ঞার কঠোর সমালোচনা করলেও আইনগতভাবে মোকাবেলার পথ খুঁজে পাচ্ছে না৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, সভা-সমাবেশ বন্ধ করে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে৷ বর্তমান সরকার দ্বিমুখী আচরণ করছে৷ একদিকে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলছে, অন্যদিকে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গণতন্ত্র হরণ করছে৷ বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা গণতন্ত্র হতে পারে না বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ তবে তিনি সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, সরকারের কাছে দাস-ক্ষত দিয়ে বিরোধী দল রাজনীতি করবে না৷ তাই সরকারকে গণতান্ত্রিক আচরণ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে আসতে হবে৷
এর আগে মঙ্গলবার সকালে এক অনুষ্ঠানে খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকার বিরোধী দলকে ভয় পায় বলেই সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছে৷ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন হলে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই হবে৷ সংসদ বহাল রেখে পৃথিবীর কোনো দেশেই নির্বাচন করার নজির নেই৷ সরকার বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায় বলেই এমন আচরণ করছে৷ এদিকে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির এক দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ৷ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে পুলিশ বাধা দেয়৷ পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে অনুষ্ঠানটি না করতে অনুরোধ করেন বিএনপি নেতাদের৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, পুলিশের কাছে তথ্য ছিল যে, অনুষ্ঠান শেষে বাইরে বের হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো নাশকতা করতে পারেন৷ পাশাপাশি ওই অনুষ্ঠানে শিবিরের অনেক লোক জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছে৷ ফলে অনুষ্ঠানটি না করতে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে৷
অপরদিকে, অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীরের পদত্যাগ দাবি করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি৷ একইসঙ্গে সভা সমাবেশের ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়েছে৷ সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সমিতির দক্ষিণ হলে আয়োজিত এক জরুরি সভায় এই দাবি জানানো হয়৷ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপির পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি-পন্থী শীর্ষ আইনজীবীরা৷ প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি পন্থী প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়৷
আইনজীবীদের ওই সভায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার জনগণকে ভয় পেতে শুরু করেছে৷ বর্তমান সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ দেউলিয়া হয়ে গেছে৷ এ জন্য তারা সভা সমাবেশ নিষিদ্ধের মতো অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তিনি অবিলম্বে এই মৌখিক ঘোষণা প্রত্যাহার করে মিছিল সমাবেশের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করেন৷
সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে ‘আপাতত' কাউকে সভা সমাবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না৷ তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধ্যাদেশ অনুযায়ী মেট্রোপলিটন এলাকায় সভা-সমাবেশ করতে হলে পুলিশ কমিশনারের অনুমতি নিতে হবে৷ এখন সেই অনুমতির বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ তবে আইনশৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না – এমন কোনো অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যে কেউ আবেদন করতে পারেন৷ সেই আবেদনগুলো পুলিশ কমিশনার বিবেচনা করে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা৷