নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তৎপরতা বাড়াচ্ছে ইডি-সিবিআই
১০ অক্টোবর ২০২৩স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে ইডি খোঁজ পায় আর এক দুর্নীতির। ধৃত অয়ন শীলের হেফাজতে মেলা নথি থেকে সন্দেহ জাগে, পুরসভার নিয়োগেও অনিয়ম হয়েছে। তারই তদন্তে একাধিক দিনে, বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে ইডি, সিবিআই।
রবিবার পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও তৃণমূল বিধায়ক, সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্রের বাড়িতে অভিযান নিয়ে বিস্তর হইচই হয়েছে। কামারহাটির সাবেক পুরপ্রধান মদন। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চলে দুই নেতার বাড়িতে।
গত বৃহস্পতিবার ইডি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে অভিযান চালায়। সাড়ে ১৯ ঘণ্টা চলে তল্লাশি। রাত পৌনে দুটো নাগাদ ইডি আধিকারিকেরা মন্ত্রীর বাড়ি ছাড়েন।
দুই মন্ত্রীর বাড়িতে কেন্দ্রীয় সংস্থার তল্লাশিতে তৃণমূল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছে। ফিরহাদ রবিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সংস্থার দিকে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন।
দিকে দিকে অভিযান
ঠিক তার পরের দিন, সোমবার আরো বড় মাপের অভিযান চালিয়েছে সিবিআইয়ের কয়েকটি দল। তাদের নিশানায় ছিলেন এক বিজেপি বিধায়কও।
সপ্তাহের প্রথম দিন চার জেলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল হানা দেয়। সাত সকালেই নদিয়ার উত্তর-পশ্চিম রানাঘাট কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে সিবিআই হানা দেয়।
রানাঘাট পুরসভার সাবেক পুরপ্রধান পার্থসারথী। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে। তৃণমূলের পুরপ্রধান থাকাকালীন তার ভূমিকা এখন সিবিআইয়ের নজরে।
নদিয়ার তৃণমূল পরিচালিত বীরনগর পুরসভায় অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা। এখানকার পুরপ্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেও তারা হানা দেয়।
মধ্যমগ্রাম পুরসভাতেও হানা দেন সিবিআই আধিকারিকরা। এখানকার প্রধান ছিলেন রথীন ঘোষ। ইডি আধিকারিকরা নথি বাজেয়াপ্ত করার পরই সিবিআই অভিযান।
সোমবার হাওড়ার উলুবেড়িয়া সাবেক পুরপ্রধান অর্জুন সরকারের বাড়িতে যায় সিবিআই। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। উলুবেড়িয়া পুরসভাতেও যায় সিবিআইয়ের দলটি।
নজর অভিষেকের ঘাঁটিতে
তৃণমূলের শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের গড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারেও পৌঁছে যায় সিবিআই। এই কেন্দ্রের সাংসদ অভিষেক।
ডায়মন্ড হারবার পুরসভার সাবেক পুরপ্রধান মীরা হালদারের বাড়িতে সিবিআই আধিকারিকরা হানা দেন। পুরভবনে গিয়ে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা। পুরপ্রধান প্রণব দাসের সঙ্গে কথা বলে।
অয়ন শীলের সংস্থা যে সব পুরসভায় নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছিল, সেগুলিতেই নজর দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার। তার হুগলির বাড়ি এবং সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। অভিযোগ, অফিস থেকে পুরসভায় নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর শিট উদ্ধার হয়। মিলেছে নিয়োগের নথিও।
অয়ন নীরব, সরব নেতারা
এর পরেই পুরসভায় নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি সিবিআই ও আদালতকে জানায় ইডি। পৃথক ভাবে এফআইআর দায়ের করে শুরু হয় তদন্ত। অয়নকে আজ আদালতে পেশ করা হয়। আদালত চত্বরে তল্লাশি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মুখ খোলেননি তিনি। 'বিচারাধীন বিষয়' বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, "দলীয় বিধায়কের বাড়িতে তল্লাশি প্রমাণ করে কেন্দ্রীয় সংস্থা নিরপেক্ষ।" যদিও তৃণমূল একে 'নাটক' বলে তকমা দিয়েছে। কুণাল ঘোষের বক্তব্য, "অভিষেকের ধর্না হিট। নজর ঘোরাতেই ঘন ঘন অভিযান।"
ভোটে কী প্রভাব?
লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা আরো বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাতে কি নির্বাচনে প্রভাব পড়বে?
সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "দুর্নীতির তদন্ত ও অপরাধীদের ধরার উদ্যোগ জরুরি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি কি আদৌ সিরিয়াস? ভোট এলে তারা তৎপর হয়, বিজেপি এর সাহায্যে বিরোধীদের চাপে রাখে।"
ভোটের ফল প্রসঙ্গে তার মত, "সারদা-নারদের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়েনি। বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের সাজা হলেও আরজেডির সমস্যা হয়নি। ছত্তিশগড়ে দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও প্রাক্ নির্বাচনী সমীক্ষায় এগিয়ে কংগ্রেস। সুতরাং প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম।"