সিসিটিভি ফুটেজ বসদের কাছে
২১ জানুয়ারি ২০২০বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, পুলিশের কাছে অনেকবার চেয়েও ঘটনার সময়ের সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া যায়নি৷ আর তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, সিসিটিভির ফুটেজ আছে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর অভিযোগ করেছেন,‘‘যেসব ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত থাকে তার তদন্ত শেষ পর্যন্ত হয় না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি আসলে সময়ক্ষেপণ ছাড়া আর কিছুই করছে না৷ আর সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন তাৎক্ষণিকভাবে তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও বাকিরা এখন প্রকাশ্যেই ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷’’
গত ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে ভিপি নুর ও তার অনুসারীদের ওপর বাতি নিভিয়ে হামলা হয়৷ ওই হামলায় নুরসহ ১৮ জন আহত হন৷ ঘটনার পর পুলিশ উদ্যোগী হয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিনজনকে আটক করে৷ পুলিশ এই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করার পর ভিপি নুর বাদী হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ছাত্রলীগের ৩৭ জন নেতার নাম উল্লেখ করে আরেকটি অভিযোগ করেন৷ এই অভিযোগটি মূল এজাহারের সাথে সংযুক্ত করা হয়৷
হামলার দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷ কমিটির প্রধান করা হয় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে৷ তদন্ত কমিটিতে আছেন শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া সাহা, সিনেট সদস্য অসীম কুমার সরকার, স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন, সিন্ডিকেট সদস্য মিজানুর রহমান ও সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাঈনুল করিম ৷
কমিটিকে প্রথম ছয় কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়৷ এরপর তারা আরো ১০ দিন সময় বাড়িয়ে নেন৷ ১৬ দিনেও তারা তদন্ত শেষ করতে পারেননি৷ তারা আরো ১০ দিন (১৬ জানুয়ারি থেকে) সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন৷
নুর বলেন, ‘‘২০১৮ সালে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছিল৷ ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করা হয়৷ ওই বছরই ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের লাইব্রেরির সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়, শহীদ মিনারে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে, এসএম হলে প্রভোস্টসহ আমি লাঞ্ছিত হয়েছিলাম৷ প্রত্যেক ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে৷ তারা বার বার সময় নিয়েছে৷ কিন্তু কমিটির প্রতিবেদন আর হয়নি৷ কারণ, প্রত্যেকটি ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংঠন জড়িত৷ সরকার বা প্রশাসন চায় না ছাত্রলীগের কারো বিচার হোক ৷ আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের তাঁবেদার৷ তাই তদন্ত কমিটির নামে তারা সময় পার করছেন ঘটনাকে আড়াল করার জন্য৷’’
তবে নুরের এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন৷ তিনি বলেন,‘‘ডাকসু ভিপি কী বলল সেটা আমার বিচার্য বিষয় না৷ সে আমার বাড়িতেও থাকে না৷ আমি তার সাথে কথাও বলিনি৷সে যদি জানে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রদত্ত কোনো পাওয়ার আছে তার৷
প্রথম ছয় দিন তো অমানবিক পরিস্থিতি ছিল৷ সবাই কথা বলার মতো অবস্থায় ছিল না৷ আমরা এখন পর্যন্ত ২০ জনের বক্তব্য নিয়েছি৷ এবার আশা করছি আর সময় বাড়াতে হবে না৷আমরা চেষ্টা করেও হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি৷ পুলিশকে চিঠি দিয়েও পাইনি৷’’
এই মামলায় আটক তিন জন এখনো কারাগারে থাকলেও অভিযুক্তদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ জামিন নিয়েছেন৷
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ইন্সপেক্টর আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন,‘‘এটা তো মারামারির মামলা তাই আসামিদের জামিন পাওয়ার কথা৷ পেয়েছে হয়তো৷ তবে আমি খোঁজ নেইনি৷ ঘটনার সময় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে৷ এরপর আর কেউ গ্রেপ্তার হয়নি৷’’
কবে চার্জশিট দেয়া হবে বা মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আসলে এগুলো নির্ভর করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার ওপর৷ আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঠিকই, কিন্তু আমরা একটা টিমের মতো কাজ করি৷ তাই আমার একার পক্ষে তদন্ত শেষ করা সম্ভব নয়৷ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি৷ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি৷ সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ বসদের কাছে আছে৷’’
প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় পরে ছাত্রলীগের এক নেতা ডাকসু ভিপি নুরসহ ২৮ জনের কিরুদ্ধেও ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল আইনে একটি মামলা করে৷