নেপালের কারাগারে বন্দি বাবা-মার সন্তানদের জন্য নতুন জীবন
২৯ মে ২০১১নেপালের চাইল্ড কেয়ার সেন্টারের উঠোনের এক কর্মব্যস্ত সকাল৷ চারপাশে খেলনা ছড়িয়ে বাচ্চাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করাচ্ছেন যিনি তাঁর নাম পুষ্প৷ পুষ্প বললেন, ‘‘সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমাকে এভাবেই এই উঠোনের এদিক থেকে সেদিক দৌঁড়ঝাপ করতে দেখবেন৷ তবে আমি কখনও ক্লান্ত হইনা৷ আমার বন্ধুরা সবসময় এখানে আসে এবং আমাকে বলে এভাবে চলতে থাকলে একসময় তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়বে৷ কিন্তু আমি যদি আমার কাজকে ভালোবাসি তাহলে কেন আমি ক্লান্ত হবো?''
ছাব্বিশ বছরের এই নারী এই শিশু নিবাসটির দায়িত্বে আছেন৷ বাচ্চাদের গল্প শোনাচ্ছেন৷ তাদের নাকের পানি মুছে দিচ্ছেন আবার কখনওবা চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন৷
সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের একেবারে প্রথম দিকে রয়েছে সনাজি৷ এই শিশুটি পুষ্পর জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে৷ পুষ্প'র এখনও মনে পড়ে সেই দিনটির কথা৷ যে দিন তিনি নেপালের একটি কারাগারে তাকে প্রথম দেখেছিলেন৷ এই শিশুটিকে দেখার সেই অভিজ্ঞতা পুষ্প এখনও ভুলতে পারেননা৷
পুষ্প বলেন, বাড়ি ফিরে এসে আমার বাবা-মা'কে আমি বলি, কারাগারে আমি একটি শিশুকে দেখেছি৷ আমার বাবা-মা বলেন,‘‘তুমি এটা ভুলে যাও৷ রাস্তা-ঘাটে তুমি এমন অনেক শিশুকে দেখবে, যাদের অনেকেই অনাথ, এটা কোনো ব্যাপার না৷ দু'এক দিনের মধ্যেই তুমি এটা ভুলে যাবে৷'' পুষ্প বলেন, কিন্তু আমি এই শিশুর মুখখানা ভুলতে পারছিলামনা৷ তারপর থেকেই পুষ্প সিদ্ধান্ত নেন নেপালের কারাগারে বন্দি বাবা-মাদের সন্তানদের জন্য তিনি কিছু করবেন৷ কেননা, এইসব শিশুদের অনেককেরই আবাস হয়ে ওঠে কারাগার৷ সেখানকার কঠোর আইন কানুনের বেড়াজালে থাকতে বাধ্য করা হয় তাদের৷ কারণ এই শিশুদের দেখাশোনা করার মতো কেউ থাকেনা৷
এরপর পুষ্প তাঁর বাবা-মার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেন৷ কাটমাণ্ডুতে ভাড়া করেন একটি দোতলা বাড়ি৷ সেখানে গড়ে তোলেন চাইল্ড কেয়ার সেন্টার৷ সেসময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর৷
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক