নোবেল পুরস্কার
১১ ডিসেম্বর ২০১২বিশ্বের অনেক দেশের অনেক মানুষের জন্যই ইউরোপ স্বর্গরাজ্য৷ তাই প্রতি বছর কত মানুষ যে ভাগ্যাণ্বেষণে এই ভূখণ্ডে পা রাখতে চান, তার হিসেব বের করা কঠিন৷ ইউরোপ তাঁদের চোখে শান্তিতে নিরাপদ জীবনযাপনের আদর্শ জায়গা৷ ধারণাটা একেবারে ভুল নয়৷ তাই বলে নিরবচ্ছিন্ন শান্তির নীড় কি ইউরোপকে বলা যায়? এ অঞ্চলকে শান্তিময় ভূখণ্ড করতে পেরেছে – এমন দাবি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যে এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হলো, তা কি যোগ্য স্বীকৃতি? পুরস্কার ঘোষণার পরপরই এ প্রশ্ন উঠেছিল৷ তারপর চলে গেছে অনেকগুলো দিন, দেখতে দেখতে চলে এসেছে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেয়ার শুভক্ষণ৷ কিন্তু এ অনুষ্ঠান যখন শুরু হবে তখনও আয়োজনস্থল অসলোতে চলছিল বিক্ষোভ, প্রতিবাদ৷ বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে শান্তি পুরস্কার দিয়ে নোবেল কমিটি ঠিক করেনি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ পুরস্কার পাবার যোগ্য নয়৷
এটা যে একেবারে সাধারণ লোকদের দাবি তা-ও কিন্তু নয়৷ অতীতে শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন এমন মানুষও জানিয়েছেন তাঁদের আপত্তির কথা৷ দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, উত্তর আয়ারল্যান্ডের মাইরিড মাগুয়ের আর আর্জেন্টিনার পেরেস এসকিভেল সরাসরি চিঠিও লিখেছেন নোবেল কমিটির কাছে৷ চিঠিতে এই তিন নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী লিখেছেন, ১৮৯৫ সালে যে সব যোগ্যতার কথা ভেবে আলফ্রেড নোবেল এ পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন সেসব বিবেচনায় নিলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন স্বীকৃতির জন্য পুরোপুরি অযোগ্য৷
পেরেস ফ্রানসিসকা কেলার মনে করেন, নোবেল কমিটি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পুরস্কারটা দিয়ে হাস্যকর কাজ করেছে৷ সোমবার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে থাকবেনই না এসকিভেল৷ ভাবছেন, এমন একজন অনুষ্ঠানে না থাকলে কী আসে যায়? ফ্রানসিসকা কেলার কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদ৷ তাঁর মতো একজনের এ পুরস্কারকে এবং পুরস্কার দেয়ার অনুষ্ঠানকে খাটো করে দেখা কি অস্বাভাবিক নয়, বলুন?
নিজের ব্লগে ফ্রানসিসকা কেলার কী লিখেছেন জানেন? লিখেছেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন পুরস্কারটা পাচ্ছে এটা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হয়েছিল আজকের দিনটার সঙ্গে এপ্রিলের ১ তারিখের কোনো সম্পর্ক নেই তো!'' বুঝতেই পারছেন ফ্রান্সিসকা কেলার বোঝাতে চেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে শান্তি পুরস্কার দেয়া অনেকটা ‘এপ্রিল ফুল' করার মতো ব্যাপার৷
ভল্ফগার গ্রেনৎস নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে এতটা হাস্যকর বলেননি৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জার্মানির জেনারেল সেক্রেটারি নানান দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোন কোন জায়গায় মানবাধিকার রক্ষা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ৷ স্বাভাবিক কারণেই সেখানে উঠেছে রোমাদের কথা৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রোমাদের বর্তমান অবস্থা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি সমাজে বৈষম্য দূর করার জন্য একটা দিক নির্দেশনা ঠিক করেছে৷ এটা খুব ভালো কাজ৷ কিন্তু বাস্তব অবস্থা তাতে একটুও পাল্টায়নি৷ রোমাদের আর সবার মতো শিক্ষাক্ষেত্রে সমান অধিকার নেই, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান এবং শ্রমবাজারেও তাঁরা বৈষম্যের শিকার৷ আমি তো বলব, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো কোনো সদস্য রাষ্ট্রে তাঁদের ওপর হামলা বন্ধ করার জন্যও তেমন কিছু করা হয়নি৷''
আফ্রিকা মহাদেশে আরব বসন্তের ঢেউ লাগার পর থেকে যে শত শত মানুষ ইউরোপের নানা দেশে যেতে গিয়ে সাগরে ডুবে মরছে, কোনো দেশে প্রবেশ করলে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয় না দিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে
ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশে – এসব দৃষ্টান্তও তুলে ধরেছেন ভল্ফগাং গ্রেনৎস৷ তিনি মনে করেন এতভাবে যাঁরা মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ, তাঁদের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়াটা ভুল৷