নোউহাইলা বেনজিনা: বিশ্বকাপ ফুটবলের মঞ্চে প্রথম হিজাবি
মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবলে ইতিহাস গড়লেন মরক্কোর নোউহাইলা বেনজিনা৷ বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনিই প্রথম নারী যিনি হিজাব পরে মাঠে নামছেন৷
কে তিনি?
ইনি নোউহালিয়া বেনজিনা৷ মরক্কোর অ্যাটলাস লায়োনেসেস দলের ডিফেন্ডার৷ প্রথমবারের মতো মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবলে সুযোগ পাওয়া উত্তর আফ্রিকার দেশটির স্কোয়াডে আছেন ২৫ বছর বয়সি এই নারী৷ বিশ্বকাপের মঞ্চে সুযোগ পেয়েই গড়লেন ইতিহাস৷
প্রথম হিজাবি
নোউহালিয়া বেনজিনা প্রথম কোনো নারী ফুটবলার যিনি বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে হিজাব পরে খেলতে পারছেন৷ ২৪ জুলাই জার্মানির কাছে ৬-০ গোলে হারের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পাননি৷ তবে ৩০ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে মরক্কোর ১-০ গোলের জয়ে রক্ষণভাগ সামলানোর দায়িত্ব ভালোভাবেই সেরেছেন বেনজিনা৷ কয়েক বছর আগেও তার মতো হিজাব পরিহিতদের ফিফার কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নেয়াটাই অকল্পনীয় ছিল৷
বিতর্কের অবতারণা
বিতর্কের শুরু ২০০৭ সালে৷ ১১ বছর বয়সি ক্যানাডার আসমাহান মানসুর স্থানীয় এক ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গিয়ে সংবাদ শিরোনাম হন৷ হিজাব পরে মাঠে নামলে রেফারি ফিফার নিয়ম দেখিয়ে তাকে হেডস্কার্ফ খোলার নির্দেশ দেন৷ মানসুর তা প্রত্যাখ্যান করে, তার দল প্রতিবাদ জানিয়ে আসর ত্যাগ করে৷
ফিফার দুই যুক্তি
পরবর্তীতে ফিফা এই বিধানের সত্যতা নিশ্চিত করে স্বপক্ষে দুইটি যুক্তি তুলে ধরে৷ এক, হেডস্কার্ফের কারণে খেলোয়াড়দের আঘাত পাওয়ার শঙ্কায় এমন পোশাককে তারা বিপদজনক মনে করে৷ দুই, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বার্তা দেয়া যাবে না ফিফার এমন নিয়মের বরখেলাপ হয় হেডস্কার্ফ পরলে৷
পাল্টা যুক্তি
সমালোচকদের মতে, হেডস্কার্ফের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয় এমন প্রমাণ নেই৷ তাদের অভিযোগ ধর্ম নিয়ে ফিফার অবস্থানে আসলে দ্বিচারিতা খুব স্পষ্ট, কেননা, খেলোয়াড়েরা মাঠে নামার আগে, পেনাল্টি শুটের আগে বা গোল উদযাপনের সময় ধর্মীয় বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটালে তাতে ফিফা বাধা দেয় না৷
হেডস্কার্ফের বদলে ক্যাপ
২০১০ সালে সিঙ্গাপুরে যুব অলিম্পিক গেমের আগে ইরানের জুনিয়র নারী দলের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷ কারণ, খেলোয়াড়েরা হিজাব পরে মাঠে নামতে চেয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য তাদেরকে হেডস্কার্ফের বদলে ক্যাপ পরে খেলার অনুমতি দেয়া হয়৷ পরের বছর অলিম্পিক বাছাইয়ে হিজাব পরে অংশ নিতে চাওয়ায় ইরানের জাতীয় নারী ফুটবল দলের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷
হিজাবের সূচনা
২০১১ সালে জর্ডানের প্রিন্স আলী বিন আল-হুসেইন ফিফা ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন৷ তার সময়ে হিজাব সমর্থকরা ফিফার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নিজেদের জোরালো দাবি জানানোর সুযোগ পায়৷ ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি) পরীক্ষামূলকভাবে দুই বছরের জন্য ‘অ্যাথলেটিক হিজাবের’ অনুমোদন দেয়৷
পরীক্ষা শেষে
পরীক্ষা পর্ব শেষে হিজাব বিপদজনক নয় বলে রায় দেয় আইএফএবি৷ ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচে হিজাব পরে খেলার অনুমতি দেয় তারা৷ ২০১৬ সালে জর্ডানে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে আয়োজক দেশের দুই ফুটবলার হিজাব পরে খেলতে নামেন৷ ফিফার কোনো টুর্নামেন্টে যা প্রথম হিজাব পরে খেলার ঘটনা৷
নিষিদ্ধ ফ্রান্সে
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবলে হিজাবকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিলেন মরক্কোর বেনজিনা৷ তবে ফ্রান্সে এখনও ফুটবল মাঠে হিজাব পরে নামা নিষিদ্ধ৷ দেশটির কাউন্সিল অব স্টেটের এই সিদ্ধান্তের সমর্থন দিয়েছে সুপ্রিম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্টও৷ তবে একটি সংগঠন হিজাবের অনুমোদন পেতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে৷