আমজনতাকে কি খুশি করতে পারবে বাজেট?
৩১ জানুয়ারি ২০১৭যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সংসদের বাজেট অধিবেশন৷ এই প্রথম দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে বাজেট পেশ করা হবে ১লা ফেব্রুয়ারি, তাও আবার রেল বাজেট ও সাধারণ বাজেট একসঙ্গে৷ অতীতে রেল বাজেট এবং সাধারণ বাজেট পেশ করা হতো আলাদা আলাদভাবে৷ বিমুদ্রাকরণের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ঠেলায় আমজনতাকে যেভাবে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে, এর ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনের ওপর যে অভিঘাত এসে পড়েছে, নতুন বাজেটে সেটা কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেওয়াটা মোদী সরকারের একটা দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে বলে মনে করছেন অনেকেই৷ তাই বিভিন্ন মহলে যে সব প্রশ্ন ঘুরে ফিরেই আসছে, সেগুলো হলো – এই বাজেট দেশের মানুষকে কতটা খুশি করতে পারবে? বিনিয়োগে কতটা উৎসাহ দেবে? উন্নয়নের গতি আনতে পারবে তো? সংস্কার তথা জনমুখী হবে তো নতুন বাজেট? এতে কর্মসংস্থান তথা আয় বৃদ্ধি হবে কিনা, হলে কতটা হবে? বার্ষিক বাজেটে দেশের বৃহত্তর অর্থনীতির সঙ্গে আমজনতার দৈনন্দিন জীবন সম্পৃক্ত৷ তাই সবাই তাকিয়ে আছে ১লা ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করার দিকে৷
অন্যদিকে সংসদের যৌথ অধিবেশন বয়কট করেছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ১লা ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করার দিনও তারা তা বয়কট করবে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে৷ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সেদিন সরস্বতী পুজো৷ এছাড়া ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে সংসদের ভেতরে ও বাইরে তৃণমূল কংগ্রেস বিক্ষোভ করবে নোট বাতিল কাণ্ডের প্রতিবাদে৷ মোটকথা চিট ফান্ড কাণ্ড এবং তাতে জড়িত থাকার অভিযোগে তৃণমূলের দুই সাংসদকে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার গ্রেপ্তার করা নিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে সংঘাতের অবস্থানে অনড় রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবার দেখার পালা, এই সংঘাতের জল কতদূর গড়ায়৷
এদিকে গতকালই সংসদে আর্থিক সমীক্ষা নিয়ে সরকারের রিপোর্ট কার্ড পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ তাতে বলা হয়েছে, ১লা এপ্রিল থেকে যে অর্থবর্ষ শুরু হচ্ছে তাতে জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ দশমিক ৭৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ৷ কৃষি ক্ষেত্রের বিকাশ হার হবে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা কিনা চলতি বছরের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি৷ অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি থাকবে নিয়ন্ত্রণে৷ নোট বাতিলে রাজস্ব ঘাটতি কম হবে, সংস্কার হবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগেও৷ সবথেকে উল্লেখযোগ্য, গরিবি দূরীকরণে সব ভরতুকি তুলে দিয়ে সকলের জন্য ন্যূনতম আয় বা ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম' বাস্তবায়িত করার কথাও বলা হয়েছে৷ তবে এর জন্য এবং পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) কার্যকর করাটা সময়সাপেক্ষ বিষয়৷ বলা বাহুল্য, জিএসটি কার্যকর করলে রাজস্বের পরিমাণ বাড়বে৷
পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, নোট বাতিলে দেশের কতটা উপকার হয়েছে, জনকল্যাণ প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে কতটা সুবিধা হয়েছে, মোদী সরকারকে অবশ্যই তা তুলে ধরতে হবে৷ দেশের ভবিষ্যত আর্থিক এবং সামাজিক প্রবৃদ্ধিকে বিশ্বাসযোগ্য কোরে তুলতে হবে৷ বাজেটে থাকতে হবে তার বিশ্বাসযোগ্য স্বচ্ছ উন্নয়নের পথরেখা৷ মোদী সরকারকে মনে রাখতে হবে নির্বাচন সরকারের কাছে বড় বালাই, তা সে প্রত্যক্ষই হোক বা পরোক্ষ৷ সামনে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট, আগামী বছরের গোড়ার দিকে কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগড়সহ আরও কয়েকটি রাজ্যে ভোট৷ তারপর ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচন৷ তাই মোদী সরকার ভালোমতই জানে এর গুরুত্ব কতটা৷ কিন্তু বিমুদ্রাকরণের পরবর্তি পরিস্থিতিতে রাজকোষ ঘাটতি এবং রাজস্ব ঘাটতি নির্ধারিত সীমার মধ্যে ধরে রাখার প্রয়োজনে সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ ছাঁটাই হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে৷ তবে প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে সেটা হয়ত নাও হতে পারে৷ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে৷ তবে মধ্যবিত্তদের ব্যক্তিগত আয়কর এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির কর হার কম করার দাবি মেটানোর সম্ভাবনা প্রবল৷ এছাড়া করদাতাদের ব্যক্তিগত আয়করের ঊর্ধসীমা বাড়ানো হতে পারে৷ সরল ও উদার করা হতে পারে আয়কর দাখিলের নিয়মকানুন৷ ডিজিটাল পেমেন্টেও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হতে পারে মনে করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা৷