জার্মানির নতুন ক্যাপ্টেন?
১২ আগস্ট ২০১৪বিশ্বকাপ জয়ী জার্মান জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন ফিলিপ লাম ১৩ই জুলাই রিও ডি জানেরোর ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারানোর পাঁচ দিন পরেই ঘোষণা করেন যে, তিনি জাতীয় দলে তাঁর ক্যারিয়ারের অন্ত ঘটাচ্ছেন৷ কাজেই লামের পর কে ক্যাপ্টেন হবেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে যায়৷
সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী গোলরক্ষক মানুযেল নয়ারের নাম তো উঠবেই৷ আবার তিনি গোলরক্ষক বলেই হয়ত নয়ার আকাশছোঁয়া আত্মবিশ্বাস সত্ত্বেও বলেছেন, নিজে কোচ হলে তিনি মিডফিল্ডের কোনো খেলোয়াড়কে ক্যাপ্টেন করতেন৷ সঙ্গে যোগ করেছেন: জাতীয় কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ প্রস্তাব দিলে তিনি সে দায়িত্ব এড়িয়ে যাবেন না – অর্থাৎ তাঁর ক্যাপ্টেন হতে আপত্তি নেই৷
আপত্তি থাকবেই বা কেন৷ গত বিশ্বকাপে জার্মান দলের সাফল্যের নোঙর ছিলেন এই আশ্চর্য গোলকিপার, পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে যার খেলা দেখলে কখনো মনে হবে ডিফেন্ডার, কখনো বা স্টপার – জার্মানে যাকে বলে ‘লিবেরো'৷ সত্যিই, নয়ারের ‘অ্যান্টিসিপেশন', অর্থাৎ বিপক্ষের খেলোয়াড়দের ‘মুভ'-গুলো ‘অ্যান্টিসিপেট' করার ক্ষমতা অসাধারণ৷ নিজের গণ্ডির মধ্যে দাঁড়িয়ে বিপক্ষের আক্রমণের প্রতীক্ষা করার মতো গোলরক্ষক তিনি নন৷ লছমনরেখা ছেড়ে বেরিয়ে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো তাড়া করে – প্রপার ডিফেন্ডারের মতো ট্যাকল করে বল ছিনিয়ে নেওয়া; পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে হেড করে বল ক্লিয়ার করা, এ সব খেলই দেখিয়েছেন নয়ার ব্রাজিল বিশ্বকাপে৷
লম্বা, ঢ্যাঙা মানুষ; শক্তিশালী, সবল দেহ৷ ট্যাকলিং যখন করেন, তখন জান-মালের তোয়াক্কা না করে৷ বলতে কি, নয়ার ইতিমধ্যেই তাঁর নিজস্ব গোলকিপিং-এর স্টাইল তৈরি করে ফেলেছেন৷ ২০১১ সালে শালকে থেকে বায়ার্নে যাওয়ার পর তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়ে বটে, কিন্তু হালের বিশ্বকাপ সেই আত্মবিশ্বাসের এমন একটা বুনিয়াদ গড়ে দিয়েছে, যার উপর ভিত্তি করে মানুয়েল নয়ার অনায়াসে জাতীয় পর্যায়ে আরো এবং অনেক বড় দায়িত্ব নিতে পারেন৷
বিশ্বকাপের সেরা গোল রক্ষক; ২০১৩ সালে বিশ্বের সেরা গোলরক্ষক; এবার জার্মানির ফুটবলার অফ দ্য ইয়ার৷ কাজেই অনেকের কাছে প্রশ্নটা এই নয়: জার্মানির কোচ অফ দ্য ইয়ার ইওয়াখিম ল্যোভ নয়ারকে নতুন ক্যাপ্টেন করবেন কিনা৷ বরং প্রশ্নটা হলো: ল্যোভ নয়ারকে ক্যাপ্টেনসি থেকে বাদ দেবেন কি করে৷ বিশেষ করে নয়ারের বয়সটাও যখন ঠিক ২৮, অর্থাৎ নাইদার টু ইয়ং, নর টু ওল্ড টু বি দ্য ক্যাপ্টেন৷ এক যদি না বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার বলে এক পুরনো বাঘ থাকতেন – যাঁর এখন একটার পর একটা ইনজুরি চলেছে৷
‘কিকার' ম্যাগজিনের বাৎসরিক জরিপে ক্রীড়া সাংবাদিকরা যে ৭০১টি ভোট দিয়েছেন, তার মধ্যে নয়ার পেয়েছেন ১৪৪টি ভোট৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মার্কো রয়েস, যাঁর ১৩৫টি ভোট৷ তৃতীয় স্থানে টোমাস ম্যুলার, যিনি পেয়েছেন ১০৫টি ভোট৷ যা থেকে প্রমাণ হয় যে, জার্মানির ক্রীড়া সাংবাদিকরা বেশ ভেবেচিন্তেই ভোট দেন, সাময়িক উত্তেজনা-উন্মাদনা থেকে নয়৷ কাজেই যোগ করা দরকার যে, ২০১১ সালে নয়ার ঠিক এভাবেই জার্মানির সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ)