পচা খাবার যখন শিল্পকর্ম
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ছিল খাদ্য, এখন অবশ্য আর খাবার যোগ্য নয়৷ এমন ছবি দেখলে কিছু মানুষের গা গুলিয়ে উঠবে৷ বাকিদের কাছে এর সৌন্দর্য কম নয়৷ কারো আবার দুটোই মনে হতে পারে৷ অস্ট্রিয়ার ফটোগ্রাফার ক্লাউস পিশলার-এর ছবি এমনই বিরক্তিকর৷ তিনি বলেন, ‘‘লুকানো বস্তু আমাকে আকর্ষণ করে৷ যা আমাদের চোখের আড়ালে থাকে ফটোগ্রাফার হিসেবে তাই আমাকে প্রেরণা দেয়৷ মানুষ এ সব দূরে সরিয়ে রাখে অথবা প্রতিদিন দেখেও দেখে না৷''
দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যের প্রতি আমাদের মনোভাব ভিয়েনার এই ফটোগ্রাফারের বিষয়বস্তু৷ জাতিসংঘের এক রিপোর্ট তাঁকে বিষয়টির প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিল৷ তাতে বলা হয়েছিল, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ হারিয়ে যায়, ফেলে দেয়া হয়৷ তার অর্ধেকই ঘটে সাধারণ গৃহস্থের সংসারে৷
ক্লাউস পিশলার অবশ্য আবর্জনার স্তূপ খোঁজেন না, তিনি অন্য ধরনের ছবি তোলেন৷ যেমন ছবির মতো সুন্দর বাসি তরমুজ৷ অথবা পচতে থাকা সালাদ যেন তুলি দিয়ে আঁকা৷ কখনো বা ভুলে যাওয়া সসেজ কেমন যেন নাটকীয় ভঙ্গিমায়৷
ক্লাউস যা বাজার করেন, তা ছবির স্বার্থে পচানো হয়৷ ভোক্তা হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের অলীক রূপ তুলে ধরেন তিনি৷ যেমন শীতকালে স্ট্রবেরি অথবা বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে আনা সবুজ পেপে৷ তিনি বলেন, ‘‘শুরুর দিকে আমি খোলা মনে ভাবতাম৷ যেমন একটি কমলা লেবু, স্পেনের কোনো প্লান্টেশনে বেড়ে উঠেছে৷ তারপর সেটি তুলে দূরে কোথাও পাঠানো হয়৷ তারপর আমরা সেটি ফেলে দেই৷ খুবই দুঃখজনক দৃষ্টান্ত৷''
মন দিয়ে বাজার করার পর ক্লাউস সেগুলি পচানোর নির্দিষ্ট জায়গায় রাখেন৷ তাঁর ফ্ল্যাটে মাসের পর মাস ধরে পচতে থাকে সেগুলি৷ যেমন মিশর থেকে আনা স্ট্রবেরির সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগে৷ অন্য খাদ্য পচতে আরও অনেক সময় লাগে৷ অন্যদের বমি পাবে – এমন অবস্থা তাঁর কাছে কিন্তু খুবই আনন্দের বিষয়৷ তিনি বলেন, ‘‘নিজের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ভেবেছিলাম এমন পচা খাবার-দাবারের মধ্যেই বসবাস করবো৷ নিজের আস্তানার মধ্যেই সচেতনভাবে এটা করতে হবে, যাতে আমার কাজের প্রক্রিয়ায় গভীরতা আসে৷ যাতে আমি পরীক্ষা করে দেখতে পারি, আমি এটা পারি কি না৷''
ক্লাউস পিশলার একটি স্টুডিও খাড়া করে সেই পচা খাদ্যকে স্পটলাইটের সামনে নিয়ে আসেন৷ সাধারণত এ সব আবর্জনার পাত্রে স্থান পায়৷ কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে ছত্রাকের প্রতিটি সূক্ষ্ম ফারাক ফুটিয়ে তোলা হয়৷ ঠিক যেন এক বিজ্ঞাপন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকেই শীতকালে একবার না একবার স্ট্রবেরি খেয়েছে৷ কার্বন নির্গমন থেকে শুরু করে দীর্ঘ পরিবহন – কত কাঠখড় পুড়িয়ে অসময়ে এমন ফল আমাদের হাতে এলে একটু বিবেক দংশন হওয়াই স্বাভাবিক৷''
ছাতা ধরা বিস্কিট, ডালিম অথবা আনারস৷ ক্লাউস পিশলার তাদের মায়াবী করে তোলেন৷ কারণ অনেকের কাছেই খাদ্যের চেয়ে তার মোড়ক আর সাজসজ্জাই বেশি জরুরি৷ তবে ক্লাউস-এর মনে এখনো আশা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, মানুষ আবার খাদ্যের সঙ্গে স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়৷ বিশাল আকারের খাদ্য উৎপাদন, দীর্ঘ পরিবহন – এ সব থেকে দূরে থাকতে চায়৷ প্লেটে যা পৌঁছয়, তা ভালো করে দেখতে চায়৷''
এমন গা-গুলানো বস্তুগুলি প্রায় প্রাচীন ছবির মতো দেখতে৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য সুন্দর ছত্রাককেও বিদায় নিতে হয়, কারণ এমন ‘সুন্দরী মডেল'-দেরও ফেলে দেন ক্লাউস পিশলার৷