জেনারেশন ‘ওয়াই’
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫যেমন রুট ক্লোসে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সকালে বেশিক্ষণ ঘুমাতে ভালোবাসি৷ সকালটা শান্তিতে কাটাই, দেরিতে উঠে কফি তৈরি করি, অফিসের জন্যে কিছু ফল নিয়ে ধীরে-সুস্থে অফিস যাই – সেইমতো অফিসে বেশি সময় থাকি৷ এইভাবে আমি নিজেই কোনটা কখন করব, তা ঠিক করি৷''
তাড়াহুড়ো না করে দিনটা শুরু করা, রুট ক্লোসে-র কাছে সেটা দরকারি৷ ২৮ বছর বয়স৷ এ বছর থেকে এমন একটা চাকরি পেয়েছেন, যা দশটা-পাঁচটা না হয়ে রুট-এর ভেতরের ঘড়ি অনুযায়ী চলে৷ রুট হলেন জেনারেশন ‘ওয়াই'-এর মেয়ে, অর্থাৎ বিশ থেকে ত্রিশ বছরের সেই সব তরুণ-তরুণী, যাদের কাছে নিজের মতো করে বেঁচে থাকাটা ক্যারিয়ারের চেয়ে বেশি জরুরি৷ রুট একটি মার্কিন পিৎসা কোম্পানিতে নতুন চাকরি পেয়েছেন৷ জার্মানিতে কোম্পানিটা নতুন৷ নতুন একটা কিছু গড়ে তোলা, নতুন আইডিয়া আনা, খুব বেশি ওপরওয়ালা না থাকা – জেনারেশন ‘ওয়াই'-এর কাছে খুবই আকর্ষণীয়৷
রুট কোম্পানির কর্মীনিয়োগ বিভাগে কাজ করেন৷ মনের মতো চাকরি, কিন্তু কিছু অসুবিধেও আছে৷ রুট বলেন, ‘‘সুবিধেগুলো স্পষ্ট৷ আমি আমার সময় নিজের মতো করে ভাগ করে নিতে পারি, বাড়ি থেকেও কাজ করতে পারি৷ আমার স্বাধীনতা অনেক বেশি৷ অসুবিধেটাও স্পষ্ট৷ জীবনটা একটু এলোমেলো, বিশৃঙ্খল হয়৷ অন্য কোনো বড় কোম্পানিতে কাজ করে আমার বয়সিরা যে বেতন পায়, আমি তাদের চেয়ে কম রোজগার করি৷''
‘বস-কে বলার সাহসই হতো না'
অপরদিকে রুট চাকরির ইন্টারভিউ-তেই তাঁর ‘বস' স্টেফেন আলফেস-কে নিজের পছন্দ-অপছন্দ জানিয়ে দিয়েছিলেন৷ কী চাই, সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া – এটাও জেনারেশন ‘ওয়াই'-এর একটা বৈশিষ্ট্য বলে রুট-এর বিভাগীয় প্রধান মনে করেন৷ ‘‘আগে আমার বস্-কে বলার সাহসই হতো না: আমি কি আজ ঘণ্টা দু'য়েক কাজ করে ছুটি পেতে পারি? কেন? না ওয়েদারটা ভালো বলে! আজ সেটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক৷ আজ লোকে তা নিয়ে কথা বলে৷ আজ আমার ইচ্ছে হচ্ছে, বিশেষ কিছু করারও নেই৷ আমি গেলে কি কোনো অসুবিধে আছে? অথবা আরো এক ধাপ এগিয়ে: বস-কে শুধুমাত্র খবরটা দেওয়া, আমি চললাম, নিজের একটা কাজ আছে৷ আগে হলে ওপরওয়ালার মাথায় হাত পড়ত: ও ভাবছেটা কী? যা খুশি তাই করবে!''
কিন্তু এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে জেনারেশন ‘ওয়াই' চাকরির বাজারটাকেই বদলে দিচ্ছে৷ ডয়চে পোস্ট ডিএইচএল সংস্থা বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলির মধ্যে পড়ে৷ আলেক্স শ্নাইডার এখানে নতুন নিয়োগের দেখাশোনা করেন৷ এবং সেটা দু'পক্ষের জন্যই একটা চ্যালেঞ্জ বলে তাঁর ধারণা৷ তিনি বললেন, ‘‘জীবনের, কাজের মানে খোঁজাটা আজ অনেক বেশি জরুরি৷ আমি এখানে কী করছি? আমার কাজটা কী? তার মূল্যই বা কতোটুকু? শুধু কোম্পানির জন্য নয়, বরং গোটা সমাজের জন্য৷ জেনারেশন ‘ওয়াই' ও তাদের অর্থ খোঁজার তাগিদ মেটাতে ওপরওয়ালাকে এ সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে৷''
অর্থবহ কিছু একটা করা রুট-এর কাছে কাজের বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই তিনি ছোটদের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য বিনা বেতনে গল্প-কাহিনি লেখেন৷ এই প্রজন্মের অনেকেই সামজ কল্যাণমূলক কিছু একটা করা এবং পারিবারিক জীবনকে ব্যাংক ব্যালান্স কিংবা প্রেস্টিজের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়৷ রুট তাঁর পরিবারের মানুষজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাতের জন্য প্রচুর সময় রাখেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা গাঁয়ের দিকে থাকেন এবং সেখানে আমরা নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ করি, মাসে অন্তত একবার, কিছু একটা করি, দেখি, যাতে যোগাযোগটা থাকে৷ আমি আর আমার পরিবারের লোকেদের কাছে সেটা খুবই জরুরি৷''
‘সুশীল সমাজের পেটোয়া ব্যাপার'?
ঘর-সংসার আর চাকরি, সেটা আজ সম্ভব৷ যেমন অফিসের পাশেই নার্সারি কিংবা কিন্ডারগার্টেন৷ ডয়চে পোস্ট আর অন্যান্য বড় বড় কোম্পানি এ ভাবে কর্মীদের চাহিদা মেটায়৷ দাবি তো শুধু জেনারেশন ‘ওয়াই'-এর একার নয়৷ ডয়চে পোস্ট'এর আলেক্স শ্নাইডার বলেন, ‘‘বিশ থেকে ত্রিশ বছরের মানুষরা আমাদের সমাজের একটা প্রতিচ্ছবি বলে আমার ধারণা৷ কর্মস্বাধীনতা, জীবনে স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, নিজের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার স্বাধীনতা – এগুলো চাই৷ অপরদিকে জেনারেশন ‘ওয়াই' সুশীল সমাজের পেটোয়া একটা ব্যাপার৷ আমি যখন সমাজের অন্যান্য স্তরের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলি, তখন ‘জীবনের মানে' জানাটা তাদের কাছে অতটা জরুরি নয়, বরং যাহোক একটা চাকরি খুঁজে পাওয়া, সুখে থাকা, কাজ করা, এগুলোই অনেক বেশি জরুরি৷''
কাজে ফ্লেক্সিবিলিটি, অর্থবহ কাজ, ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স – এ সবই একটা সামাজিক বিকাশধারা, জেনারেশন ‘ওয়াই' যেটাকে তাদের জীবনধারায় পরিণত করেছে৷