পথের ধারে বিনামূল্যে রান্না প্রশিক্ষণ প্যারিসে
১৭ নভেম্বর ২০১০রন্ধনকলার হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে এবং স্থানীয় বাজার থেকে মৌসুমী সব উপকরণ কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে প্যারিসের নগর কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ৷ নগর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে প্যারিসের বিভিন্ন বাজারে রান্নার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন দক্ষ রাঁধুনিরা৷
পথের ধারের বাজার৷ যেখানে ছাগলের দুধের পনির থেকে শুরু করে টাটকা সার্ডিন মাছ সবকিছুই পাওয়া যায়৷ আর বাড়ি ফেরার আগে সেখানে একবারের জন্যও হলেও ঢুঁ মারেন ফরাসিরা৷ কেনেন রান্না করার বিভিন্ন উপকরণ, যাতে বাড়িতে গিয়েই উপাদেয় খাবার তৈরি করতে পারেন৷ ফ্রান্সের অন্যান্য ঐতিহ্যের মধ্যে এটিও একটি৷ কিন্তু এখন চিত্রটা ভিন্ন৷ বাস্তবতা হচ্ছে, ফরাসিদের আশি শতাংশ এখন বিশালায়তন চেইন সুপারমার্কেটগুলোর উজ্জ্বল বাতির আলোয় কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন৷ প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষ এবং ফ্রেঞ্চ অ্যামেচার কুকিং ফেডারেশন প্যারিসবাসীকে এটাই বোঝাতে চাচ্ছে যে, রান্না করা ক্লান্তিকর কোনো বিষয় নয়৷ রান্নাটা মজার বিষয় হতে পারে৷
প্রতি সপ্তাহে শহর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে শহরের বাজারগুলোতে বিনামূল্যে রান্না শেখানো হচ্ছে৷ একজন রন্ধন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে আটজন স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রান্নার নানা উপকরণ কিনছেন৷ একসঙ্গে রান্না করছেন এবং রান্না শেষে সবাই খাচ্ছেন৷ নগর কর্মকর্তা সোফি ব্রেট অভিনব এই পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, ‘‘বয়স্ক লোকজনের বাজার থেকে কেনাকাটা করার অভ্যাস রয়েছে৷ কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম বয়সিরা বাজারে তেমন একটা যায় না৷ সমস্যাটা এখানে যে, তরুণ-তরুণীদের অনেকেই জানেইনা কিভাবে রাঁধতে হয়, যেভাবে তাদের মা বা নানি-দাদিরা রান্না করতেন৷ সেজন্য তারা তৈরি খাবার কেনে যা এসব বাজারে বিক্রি হয়না৷''
রান্নার এই দলে রয়েছেন সাতজন নারী ও একজন পুরুষ৷ তাদের কেউ ভেনেজুয়েলা, কেউবা ইটালি কিংবা চীন থেকেও এসেছেন৷ একটা রান্নাঘরে যে ধরণের জিনিসপত্র থাকে এই ভ্রাম্যমাণ রান্নার ক্লাসেও সেই ধরণের জিনিসপত্র রয়েছে৷ রয়েছে কিচেন কেবিনেট৷ আর কিচেন কেবিনেটের ড্রয়ার ছুরি এবং রান্নাঘরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে ঠাসা৷ রয়েছে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর জন্য কাটাকাটি করার কাটিং বোর্ডও৷
রাঁধুনি পিয়ের-আঁজে ওর্সিনি বলছেন, রান্না যে কত সহজ এবং মজার বিষয় হতে পারে নতুন এই পদ্ধতি মানুষের সামনে তা তুলে ধরছে৷ ওর্সিনি বলেন, ‘‘রান্না করা মানে রান্নাঘরে তিন চার ঘণ্টা আটকে থাকা নয়৷ দশ মিনিটেও একটা খাবার তৈরি করা যায়৷ উদাহরণ হিসেবে আজ আমি একটা মিষ্টান্ন তৈরি করে দেখাবো, যা সহজেই তৈরি করা যায়৷''
ওর্সিনি বলেন, তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন তাঁর নানির কাছ থেকে রান্না করা শিখেছিলেন৷ কিন্তু পরিবার থেকে রান্না শেখার সেই ঐতিহ্যটা এখন হারিয়ে যাচ্ছে৷ শহরের কর্মব্যস্ত জীবনে প্রতিদিনের কাজের তালিকায় রান্নাকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে রাখা হয়না৷ আজ যারা রান্না শিখছেন তাদের মধ্যে একজন আনে৷ আনে বলছেন, ‘‘ আমি মাঝে মাঝে রান্না করি, অবশ্যই প্রতিদিন না৷ কারণ এতে অনেক সময় লাগে এবং সবকিছু প্রস্তুতির একটা ব্যাপারও আছে৷''
অপর অংশগ্রহণকারী ইয়ান বলছেন, ‘‘চাইনিজ খাবার কীভাবে রাঁধতে হয় আমি তা জানি৷ কিন্তু ফরাসি খাবার কীভাবে রাঁধতে হয় তা আমি জানিনা৷ আমি কেবল রেসিপি দেখে রাঁধতে পারি৷ কিন্তু এতে ছোটোখাটো অনেক কৌশলের অভাব থেকে যায়, যেসব কৌশল প্রকৃতপক্ষে ভালো একটা খাবার প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজন৷ সেইজন্য এখানে আমি রান্না শিখতে এসেছি৷''
ফরাসি মহিলা ম্যাগাজিনের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফ্রান্সের কেবল ঊনষাট শতাংশ মানুষ প্রতিদিন রান্না করে৷ এবং তাদের এক-তৃতীয়াংশ কেবল এই কাজে আধাঘণ্টার বেশি সময় দেন৷ তাই রান্নার এই প্রশিক্ষণের সফলতা নির্ভর করছে এইসব প্রশিক্ষণার্থীর উপর, যে বাড়িতে গিয়ে আসলেই তারা আগের চেয়ে বেশি রান্না করছেন কিনা!
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক