মালয়েশিয়ার প্রস্তাব বাণিজ্যিক
১৬ মার্চ ২০১৩পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে মালয়েশিয়া৷ সেদেশের অবকাঠামো বিষয়ক বিশেষ দূত দাতো সেরি সামি ভেলু ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া তাঁর প্রস্তাবে বলেছেন, ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে তারা ২৬ বছরে ৫২০ কোটি ডলার তুলে নেবেন সেতুর টোল থেকে৷ সেতু নির্মাণ শেষ হবে তিন বছরে৷ আর বাংলাদেশের কাছে সেতু হস্তান্তর করা হবে ২৬ বছর পর৷
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির সময় সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার৷ ফলে মালয়েশিয়া যে অর্থ বিনিয়োগ করবে তার বাইরের অর্থ বাংলাদেশকে যোগান দিতে হবে৷ এই বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশও টোলের একটি অংশ পাবে৷ তার পরিমাণ ২১৯ কোটি ডলার৷
তবে মালয়েশিয়ার এই বিনিয়োগ প্রস্তাবকে বিশ্বব্যাংক বা অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণের সঙ্গে তুলানামূলক আলোচনায় আনার কোন সুযোগই নেই বলে মনে করেন বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. কে এস মুরশেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিশ্বব্যাংক যে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার দেয়ার কথা বলেছিল তার সুদের হার ছিল মাত্র ০.৭৫ শতাংশ৷ প্রথম ১০ বছরে কোন অর্থই ফেরত দিতে হতো না৷ আর ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য এই ঋণের মোট সুদ দিতে হত মাত্র ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার৷ জাইকা, এডিবি এবং আইডিবির সুদের হার আরো কম৷
ড. কে এস মুরশেদ মনে করেন, মালয়েশিয়ার এই বিনিয়োগ প্রস্তাব পুরোপুরি বাণিজ্যিক৷ আর যেহেতু দাতা সংস্থার অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের আর কোন আশা নেই, তাই সরকারকে বাণিজ্যিক ভাবেই সাম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখতে হবে৷ তাঁর মতে, সব দিক দিয়ে পদ্মা সেতু একটি লাভজনক প্রকল্প৷ ফলে শুধু মালয়েশিয়া নয়, এই ব্যাপারে আরো আগ্রহী কোন দেশ বা কনসোর্টিয়াম আছে কিনা সরকারকে তা খুঁজে দেখতে হবে৷ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে তাড়াহুড়ো করে কোন সিদ্ধান্ত নিলে তা আবারো কোন বিতর্ক এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ আর যদি শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই হয় তাহলে অভ্যন্তরীণ অর্থায়নের বিষয়েও উদ্যোগ নেয়া যায়৷ কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমেও বিনিয়োগ আসতে পারে৷
দাতো সেরি সামি ভেলু দাবি করেছেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তারা এই প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তবে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রণালয় এখনো তাদের প্রস্তাব নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি৷ জানা গেছে, এই প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রণালয়ের মনোভাব ইতিবাচক নয়৷
তবে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে মালয়েশিয়ার প্রস্তাব জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখেই বিবেচনা করা হবে৷ অন্যকোন দেশ বা সংস্থার প্রস্তাবেও আপত্তি নেই৷ তিনি জানান, সরকার সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করবে মে মাসে৷ জমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসনের কাজ শেষ হয়েছে৷