পদ্মা সেতুর জানা-অজানা
দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে রাজধানীর সাথে যুক্ত করবে, গতি আনবে অর্থনীতির- এক যুগ আগে এমন স্বপ্ন নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ৷ দিন যায়, বছর গড়ায়, সেই সাথে বাড়ে নির্মাণ ব্যয়...
যেখান থেকে শুরু
১৯৯৮-১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই করে৷ পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়৷
সহযোগীদের আশ্বাস
পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে বিশ্বব্যাংক৷ ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে সংস্থাটি৷ জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাইকা ৪০ কোটি , এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক ৬৪ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে বলেও চুক্তি স্বাক্ষর করে৷
দুর্নীতির অভিযোগ, সরে গেল দাতারা
ক্যানাডার এসএনসি লাভালিন কোম্পানি পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ পায়৷ কিন্তু ক্যানাডার আদালতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠলে দাতা সংস্থাগুলো প্রকল্প অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়৷
আঙুল নোবেল বিজয়ীর দিকে
অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সরে গেলে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের দিকে আঙুল তোলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেউ কেউ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমাদের দেশের একজন নোবেলজয়ী জড়িত৷’’
যোগাযোগ মন্ত্রীর পদত্যাগ
সেতুর কাজ নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ উঠার পর সরকার সে সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়৷ কিন্তু সমালোচনার মুখে সেখান থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি৷
দূর্নীতির অভিযোগ খারিজ
প্রায় পাঁচ বছর তদন্তের পর দুর্নীতির অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি ক্যানাডার আদালত৷ এ অভিযোগকে আদালত ‘অনুমানভিত্তিক, গালগল্প ও গুজব’ বলে আখ্যায়িত করে৷
নিজস্ব অর্থায়নে তৈরির ঘোষণা
বিশ্ব ব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থা প্রকল্প থেকে সরে গেলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি হবে এমন ঘোষণা দেয় সরকার৷
অবশেষে শুরু হলো কাজ
দীর্ঘ প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন৷ এ কাজের দায়িত্ব পায় চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংকন্সট্রাকশন কোম্পানি৷ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয় কাজ৷
কাজ পেছালো
প্রথম দফায় ডিসেম্বর ২০১৫ সালে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়৷ নদীশাসন, নকশায় পরিবর্তন আনাসহ নানা কারণে আবারো প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়৷ এবার ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলা হয়৷ এদিকে করোনার কারণে কাজের ধীরগতি প্রকল্পকে আবারো পিছিয়ে দিচ্ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের৷
ব্যয় বেড়েছে তিনশ’ ভাগ
এক যুগেরও বেশি সময় আগে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে একনেক-এ পাশ হয় পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার একশ’ ৬২ কোটি টাকা৷ ২০১৮ সালে এ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ত্রিশ হাজার একশ’ ৯৩ কোটি টাকা৷ এক যুগে ব্যয় বাড়লো তিনশ’ ভাগ৷
বেড়েছে কয়েক দফায়
২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদনের পর ২০১১ সালে তা সংশোধন করা হয়৷ প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ৷ ২০১৬ সালে আরেক সংশোধনীতে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা৷ সর্বশেষ হিসেবে খরচ ধরা হয়েছে ত্রিশ হাজার একশ’ ৯৩ কোটি টাকা৷
কেন বাড়ছে ব্যায়?
ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ হলো নকশায় পরিবর্তন আনা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ প্রকল্পের শুরুতেই ত্রুটি ধরা পড়ে নকশায়৷ তাছাড়া নানা সময়ে নতুন পরিকল্পনাও যুক্ত করা হয়েছে৷ নদীশাসনে ধীরগতিও ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷
কাজ এগিয়েছে যতদূর
গত বছর ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যানটি বসানো হয়৷ আর দৃশ্যমান হয় ছয় হাজার একশ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি৷ ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যানটি বসানোর পর এর শেষ স্প্যানটি বসানো পর্যন্ত সময় লেগেছে তিন বছর৷
(সূত্র: বাংলাট্রিবিউন ডটকম, প্রথম আলো, বণিকবার্তা, বিবিসি বাংলা)