পম্পেই খনন করে ট্রোজান যুদ্ধের দেয়াল চিত্র
ইটালির নেপলসের কাছেই পম্পেই শহরে ইতিহাসের সন্ধানে খনন শুরু করেছেন একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ৷ সেই খননে দেখা মিলল এক ব্যাঙ্কোয়েট হলের, যেখানে রয়েছে গ্রিক পুরাণের মহাকাব্যিক ট্রোজান যুদ্ধের দেয়াল চিত্র৷
অভূতপূর্ব সন্ধান
৭৯ খ্রিস্টাব্দের কথা৷ মাউন্ট ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ছাই আর শিলায় ঢেকে যায় নেপোলিয়ান শহর পম্পেই৷ ওই দুর্যোগে মারা যায় হাজারো রোমান৷ সেই ধ্বংসাবশেষে টিকে ছিল অনেক কাঠামো৷ তার একটিই হলো এই ট্রোজান যুদ্ধের এই দেয়াল চিত্র৷ যার মধ্য দিয়ে দেখা গেলো, দেবতা অ্যাপোলোর সঙ্গে কাসান্দ্রার যোগসূত্র, যিনি এই ট্রোজান যুদ্ধের বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন৷
অতি পরিচিত আখ্যান
ট্রোজান যুদ্ধের গল্পটা জানতে প্রাচীন রোমানেরা৷ রাজা মেনেলাউসের কাছ থেকে তার সুন্দরী স্ত্রী হেলেনকে কেড়ে নিয়েছিলেন প্যারিস৷ এরপর গ্রিকরা আক্রমণ করেছিল ট্রয় শহরে৷ এক দশকের এই সংঘাতের সময় গ্রিক দেবতারাও পক্ষ নিয়েছিলেন৷ দেয়াল চিত্রে চিত্রিত করা হয়েছে গ্রিক রাণী লেডাকে৷ রাজহাঁসের রূপ নিয়ে দেবতা জিউস ধর্ষণ করেছিলেন রাণী লেডাকে৷ তারপর জন্ম হয়েছিল সুন্দরী হেলেনের৷
ধনীদের বিনোদন কামরা
এই হলটির দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার আর প্রস্থ ছয় মিটার৷ বিনোদনের জন্যই এটির ব্যবহার হতো৷ দেয়ালের রঙ ছিল কালো৷ তেলের বাতি জ্বালিয়ে ঘরকে আলোকিত করার জন্য এটি অবশ্য ওই সময়ের সাধারণ একটি কৌশল৷
প্রাণবন্ত ছবি, প্রবাহিত ওয়াইন
পম্পেই প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্যানের প্রধান গাব্রিয়েল সুখট্রিগেলের মতে, দেয়ালচিত্রগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে চরিত্রগুলো প্রাণবন্ত হয়ে উঠে৷ তিনি বলেন, ‘‘সূর্যাস্তের পর মানুষের খাওয়ার জন্য একত্রিত হতো, তখন প্রদীপের ঝিকমিক আলো ছবিগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলত৷ বিশেষ করে ওয়াইন খাওয়ার পর সেগুলো আরো মুগ্ধতা ছড়াতো৷’’ উপরের ছবিতে হেলেন আর প্যারিসকে আঁকা হয়েছে৷
প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের নতুন দ্বার
১৬ শতকে পুনঃআবিষ্কার করা হয় ধ্বংস হওয়া পম্পেইকে৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে এটি দীর্ঘকাল ধরে মুগ্ধতা ছড়িয়ে রেখেছে, কারণ এটি তাদের খাছে খননের একটি তীর্থস্থান৷ আর এই দেয়াল চিত্রের আবিষ্কার প্রত্নতাত্ত্বিক কাজকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে৷ প্রত্নতত্ত্বের প্রতি উদাসীনতা কমিয়ে আনতে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নতুন আবিষ্কার করা হলটির মোজাইক করা মেঝে৷