পরমাণু চুক্তি পরিত্যাগ করার হুমকি দিল ইরান
১৫ আগস্ট ২০১৭ইরানি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ঐ ভাষণে রোহানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বলেন, ‘‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও জোরজবরদস্তি ব্যর্থ হওয়ার অভিজ্ঞতা ওদের আগের প্রশাসনগুলিকে আলাপ-আলোচনায় বসতে বাধ্য করেছে৷ ওরা যদি (আগের) সেই অভিজ্ঞতায় ফেরৎ যেতে চায়, তাহলে খুব স্বল্প সময়ে – কয়েক সপ্তাহ কিংবা মাস নয়, বরং কয়েক ঘণ্টা কি দিনের মধ্যে আমরা আরো জোরালো ভাবে আমাদের পূর্বতন অবস্থানে প্রত্যাবর্তন করব৷''
ট্রাম্প আসা যাবৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু ইরানের জন্যই নয়, বরং ওয়াশিংটনের মিত্রদেশগুলির পক্ষেও এক অনির্ভরযোগ্য সহযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে, বলেন রোহানি৷ ‘‘সাম্প্রতিক কয়েক মাসে বিশ্ব দেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে জিসিপিওএ (পরমাণু চুক্তি)-র আঙ্গিকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিসমূহ একটানা ও বারংবার ভঙ্গ করা ছাড়াও, একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তি উপেক্ষা করেছে ও (যুক্তরাষ্ট্রের) মিত্রদের দেখিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালো সহযোগী কিংবা আপোশের জন্য নির্ভরযোগ্য অংশীদার নয়,'' রোহানি মন্তব্য করেন৷
পরমাণু চুক্তি পরিত্যাগ করার পর ইরান কী ধরনের পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কার্যকরি করার ক্ষমতা রাখে, রোহানি তাঁর ভাষণে সে কথার কোনো উল্লেখ করেননি৷ অপরদিকে রোহানি তাঁর হুমকিকে কিছুটা নরম করেন এই বলে যে, ইরান পরমাণু চুক্তিতে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিসমূহের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে আগ্রহী৷
মার্কিন কংগ্রেসের বিল ও জাতিসংঘের প্রস্তাব
আগস্ট মাসের গোড়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে উত্তরোত্তর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সংক্রান্ত মার্কিন কংগ্রেসের বিলটিতে স্বাক্ষর করেন৷ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল এই বিলের লক্ষ্য৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবটিকে ভঙ্গ করেছে৷ ২০১৫ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য ও জার্মানি, এবং ইরানের মধ্যে যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, জাতিসংঘের প্রস্তাবটিতে তা অনুমোদন করা হয়েছে৷ প্রস্তাবে ইরানের প্রতি আণবিক বোমা বহণে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হলেও, সে ধরনের গতিবিধি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি৷
ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে, এই কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে – যার ফলশ্রুতি স্বরূপ মার্কিন ট্রেজারি জুলাই মাসের শেষে ছ'টি ইরানি শিল্পসংস্থার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে, কেননা এই সংস্থাগুলি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বিকাশে সাহায্য করেছে৷ বস্তুত ইরান এমন একটি রকেট পরীক্ষা করেছিল, যা একটি কৃত্রিম উপগ্রহকে কক্ষপথে স্থাপন করতে সক্ষম৷
ইরানের মতে তার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি জাতিসংঘের প্রস্তাব ভঙ্গ করে না – অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে যে সব নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করেছে, তা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির বিরোধী৷
ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেন যে, ইরান পরমাণু চুক্তির আদর্শ অনুসরণ করে চলছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না৷ অপরদিকে ইরান সংসদে রোহানির মন্তব্য সম্ভবত শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং সেই সঙ্গে স্বদেশে কট্টরপন্থিদের ঠান্ডা করার একটা প্রচেষ্টাও বটে – বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)