1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরাভব না মানা এক উৎসব

১৬ এপ্রিল ২০১৮

নববর্ষ বাঙালির আত্মপরিচয়ের উৎসব৷ নানা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এই সার্বজনীন উৎসবের একটি অর্থনৈতিক ভিতও দাঁড়িয়েছে৷ পরাধীনতা, জঙ্গি হামলা আর মৌলবাদী অপপ্রচারকে দূরে ঠেলে দিয়ে এ উৎসব আলোর পথে নিয়ে যাচ্ছে বাঙালিকে৷

https://p.dw.com/p/2w309
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস অনেক পুরোনো৷ এর সঙ্গে কৃষিকাজের যেমন যোগ আছে, যোগ আছে ব্যবসা বাণিজ্যের৷ এক সময় বাংলা নববর্ষ পালিত হতো ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে ফসলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে৷ তারপর যোগ হয় ব্যবসা-বণিজ্য৷ ব্যবসার পুরোনো হিসাব শেষ করে নতুন হিসাবের খাতা খোলার হালখাতা৷ আর এখন এটা বাঙালির সার্বজনীন উৎসব৷ জীবনের নানা দিক জড়িয়ে গেছে এর সঙ্গে৷ তাই এর একটি রাজনৈতিক দিকও প্রবল৷ ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রমনা বটমূলে ছায়ানটের বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল আইয়ুব খানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষায়৷ আর চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে শিল্পের প্রকাশ হিসেবে৷ আর এখন বাংলা নববর্ষের অর্থনৈতিক দিকও প্রতিষ্ঠিত৷ তাই পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ এখন বাঙালির জীবনে স্থায়ী এক সার্বজনীন উৎসব৷ 

কৃষিকাজের সুবিধার জন্য মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে বাংলা সন প্রবর্তন করেন৷ আর তা কার্যকর হয় তাঁর সিংহাসন-আরোহণের সময় থেকে (৫ নভেম্বর ১৫৫৬)৷ হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়েছিল৷ প্রথমে একে বলা হতো  নতুন ‘ফসলি সন'৷ পরে এর পরিচিতি হয় ‘বঙ্গাব্দ' নামে৷ আর তখন বছরের শেষ দিন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ এবং পরদিন নতুন বছরে মিষ্টিমুখ করাতেন ভূস্বামীরা৷ বসতো মেলা৷ ধীরে ধীরে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে পহেলা বৈশাখ আনন্দময় ও উৎসবের এক দিনে পরিণত হয়৷ বর্তমানে বাংলা একাডেমি বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার করে ইংরেজি ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ হিসেবে ঠিক করে দিয়েছে৷

পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথের গানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে৷ ধর্মের নাম করে আঘাত আসে বাঙালি সংস্কৃতির ওপর৷ আর তার প্রতিবাদ জানাতে, বাঙালি সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ছায়ানট রমনা বটমূলে শুরু করে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান৷ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গানে গানে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেয়ার এই আয়োজন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে৷

ছায়ানটের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, ‘‘ছায়ানটের মূল অনুষ্ঠান রমনার বটমূলে বৈশাখের প্রথম প্রত্যুষে বাংলা নববর্ষের আবাহন৷ ছায়ানটের গণ্ডি ছাড়িয়ে এটি এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত৷ ঢাকার রমনা উদ্যানের অশ্বত্থ গাছের নিচে ১৯৬৭ সালের মধ্য এপ্রিলে (১৩৭৪ বঙ্গাব্দের প্রথম প্রভাত) হয়েছিল প্রথম অনুষ্ঠান৷ পঞ্চবটী বলতে অশ্বত্থ, বট, বিল্ব, আমলকি ও অশোক বোঝায়৷ ভালো শোনায় বলে অনুষ্ঠানস্থলের নাম করা হয় বটমূল৷ ১৯৭১ সালে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের বছর ছাড়া প্রতিটি পহেলা বৈশাখেই নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়ে আসছে সুরের মূর্চ্ছনা আর কথামালায়৷'' আর রবীন্দ্রনাথের গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো' যেন হয়ে উঠেছে বাংলা বর্ষবরণের গান৷

‘বাঙালির এই প্রাণের উৎসবের শক্তি অনেক গভীরে’

ছায়ানটের জন্মকথায় বলা হয়েছে, ‘‘বাংলা ১৩৬৮, ইংরেজি ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রশতবার্ষিকী পালন করবার ঐকান্তিক ইচ্ছায় পাকিস্তানি শাসনের থমথমে পরিবেশেও কিছু বাঙালি একত্র হয়েছিলেন আপন সংস্কৃতির মধ্যমণি রবীন্দ্রনাথের জন্ম শতবর্ষপূর্তির উৎসব করবার জন্যে৷ তমসাচ্ছন্ন পাকিস্তানি যুগে কঠোর সামরিক শাসনে পদানত স্বদেশে রবীন্দ্রসংগীত ও রবীন্দ্রভাবনা অবলম্বন করে ছায়ানাট যাত্রা শুরু করে৷ সারাবিশ্বে শতবার্ষিকীর আয়োজন বাংলার এই প্রান্তের সংস্কৃতিসচেতন মানুষের মনেও চাঞ্চল্য জাগায়৷ বিচারপতি মাহবুব মুর্শেদ, ডক্টর গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ বুদ্ধিজীবী যেমন উদ্যোগী হলেন, তেমনি ঢাকার কিছু সংস্কৃতিকর্মীও আগুয়ান হলেন শতবর্ষ উদযাপনের উদ্দেশ্যে৷ অগ্রাহ্য হলো অনতিউচ্চারিত নিষেধ৷ সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস এনে দেয় রবীন্দ্র শতবার্ষিকীর সফল উদ্যোগ৷ শতবার্ষিকী উদযাপন করবার পর এক বনভোজনে গিয়ে সুফিয়া কামাল, মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই), সায়েরা আহমদ, শামসুন্নাহার রহমান (রোজ বু), আহমেদুর রহমান (ইত্তেফাকের ‘ভীমরুল'), ওয়াহিদুল হক, সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান, সনজীদা খাতুন, মীজানুর রহমান (ছানা), সাইফউদ্দীন আহমেদ মানিকসহ বহু অনুপ্রাণিত কর্মী সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্যে সমিতি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন৷ জন্ম হয় ছায়ানটের৷''

জন্মের মাত্র ছয় বছরের মাথায় ছায়ানট বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে বাঙালি সংস্কৃতির অগ্রযাত্রার যে কৌশল হিসেবে নিয়েছিল, তা আজ প্রতিষ্ঠিত৷ রমনা বটমূল ছাড়িয়ে বাংলা নববর্ষের উৎসব এখন বাংলার প্রতি প্রান্তে৷ বৈশাখি মেলা, পিঠা-পুলি, নতুন পোশাক, দেশীয় বাদ্যযন্ত্র, রঙের সমারোহ- সব মিলয়ে বাঙালি জীবনকে রঙিন করে দেয় এই উৎসব৷ আর এই উৎসব এখন বাঙালির চেতনার উৎসব৷

‘১৯৮৮ সালে আমরা যশোরে জামায়াতের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলাম’

কিন্তু ২০০১ সালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলা স্তম্ভিত করে দেয় পুরো জাতিকে৷ ওই হামলায় ১০ জন নিহত হন৷ তারপরও বটমূলের বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অপশক্তির কাছে পরাভব মানেনি৷ তখন ড. সনজীদা খাতুন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘পাকিস্তানিরাই বন্ধ করতে পারেনি, আর এখন তো স্বাধীন বাংলাদেশ৷''

সংগীত শিল্পী এবং ছায়নাটের সহ সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘১৯৬১ সাল থেকেই আমরা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করে আসছি৷ তবে রমনা বটমূলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে শুরু করি ১৯৬৭ সাল থেকে৷ আমরা বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্যই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকৃতির কোলে নববর্ষ উদযাপন শুরু করি৷ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী পালনে পাকিস্তানি শাসকদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার মধ্য দিয়ে ছায়ানটের শুরু থকেই একটি প্রতিবাদী চরিত্র গড়ে ওঠে৷''

বাংলা নববর্ষের আরেক বর্ণাঢ্য আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা৷ নববর্ষের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারকলা ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গন থেকে বের হয় এই অসূর বিনাশী বর্ণিল মিছিল৷ আর এখন এই শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ৷

‘বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ধর্ম পালনের কোনো বিরোধ নেই’

২০১৬ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে প্রমাণ করতে হয়েছে এই শোভাযাত্রা অসাম্প্রাদয়িক, বিশ্বজনীন ও মানব কল্যাণে নিবেদিত৷ ১৯৮৯ সালে ঢাকায় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯৮৫ সালে, যশোরে৷ তখন ছিল দেশে সামরিক স্বৈরশাসন৷ তখন এ আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল দেশের লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে সব মানুষকে এক করা৷ এক যাত্রায় নিয়ে আসা৷ আর সেই শোভাযাত্রায় অশুভের বিনাশ কামনা করে শুভ শক্তির আগমনের প্রার্থনা করা৷ এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন চারু শিল্পী মাহবুব জামাল শামিম৷  তিনি ঢাকার চারুকলা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যশোরেই ‘চারু পীঠ' নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন৷ পহেলা বৈশাখে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল দু'টি৷ দেশের লোকজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরা৷ আর তার মাধ্যমে সবাইকে সত্য এবং সুন্দরের পথে আহ্বান করা৷ তাই শোভাযাত্রায় স্থান পায় নানা ধরনের চিত্র, হাতে বানানো পাখা, ঘোড়া, হাতি, ঢোল, বাঁশি প্রভৃতি৷ থাকে মুখোশ৷ শোভাযাত্রাটি থাকে নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ৷

শিল্পী মাহবুব জামাল শামিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরুর আগে ১৯৮৮ সালে আমরা যশোরে জামায়াতের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলাম৷ ওই বছর পহেলা বৈশাখ পড়েছিল রোজার মাসের মধ্যে৷ তখন তারা এই শোভাযাত্রাকে ইসলামবিরোধী বলে তা বন্ধের জন্য নানা তৎপরতা চালায়, হুমকি দেয়৷ কিন্তু তাতে আমাদের সুবিধাই হয়৷ কারণ সাধারণ মানুষ আমাদের পক্ষে দাঁড়ায়৷ অশুভ শক্তি কোণঠাসা হয়৷ আমাদের শোভাযাত্রা আরো বিস্তৃত হয়৷''

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

সেই শোভাযাত্রায় প্রতিবছরই একটি ‘থিম' থাকে – শান্তির পক্ষে, অশুভের বিরুদ্ধে৷ কখনো ময়ূর, কখনো হাতি, কখনো ঘোড়া আবার কখনো পেঁচার মাধ্যমে সেই থিমকে তুলে ধরা হয়৷

অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ‘‘ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বাংলা নববর্ষকে এক স্থায়ী রূপ দেয়৷ আর মঙ্গল শোভাযাত্রা নতুন মাত্রা দেয়৷ বাংলা নববর্ষ এখন তাই জঙ্গিবাদ, সম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার, অপশাসনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী চেতনার, সার্বজনীন বাঙালির উৎসব৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন বাংলা নববর্ষের সঙ্গে অর্থনীতিরও বড় যোগ হয়েছে৷ পহেলা বৈশাখের পোশাকের বাঙালি ফ্যাশন এখন প্রতিষ্ঠিত৷ সবাই পোশাক কেনেন উৎসবে যোগ দিতে৷ থাকে নানা খাবারের আয়োজন৷ এই অর্থনীতির যোগসূত্র বাংলা নববর্ষকে আরো শক্তি দিয়েছে৷''

বাংলা নববর্ষে বৈশাখি মেলা বসে সারাদেশে৷ আছে হালখাতা৷ আর এসব মেলায় বসে দেশীয় পণ্যের সমাহার৷ আর এটাকে কেন্দ্র করে বিকশিত হচ্ছে দেশের কারু ও চারু শিল্প৷

পহেলা বৈশাখের এই উৎসব আয়োজনের আছে নানা রূপ, নানা রঙ৷ বাংলাদেশে আদিবাসীরা বাংলা নববর্ষে বৈসাবি নামে একটি উৎসব পালন করে৷ এটা ধর্মীয় উৎসব হলেও সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান ৩টি আদিবাসী সমাজের বর্ষবরণ উৎসব এটি৷ ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুক বা বৈসু, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত৷ বৈসাবি নাম হয়েছে এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে৷ বৈসাবি উৎসবে অংশ নিতে সারাদেশ থেকে উৎসাহীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে যান৷

বছরের শেষ দু'দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিনই মূলত বর্ষবরণ উৎসব ‘বিজু' পালিত হয়৷ এ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আদিবাসী মেলার আয়োজন করা হয়৷

বাংলা নববর্ষের দিন মারমারা ঐতিহ্যবাহী পানি খেলার আয়োজন করে৷ পানিকে পবিত্রতার প্রতীক ধরে নিয়ে মারমারা তরুণ-তরুণীদের পানি ছিটিয়ে পবিত্র ও শুদ্ধ করে নেয়৷

বৈসাবি উৎসবকে তিনটি ভাগে পালন করা হয়৷ প্রথম দিনটির নাম ফুলবিজু৷ এ দিন শিশু-কিশোররা ফুল তুলে ঘর সাজায়৷ দ্বিতীয় দিনটি হচ্ছে মুরুবিজু৷ এদিন নানারকম সবজির সমন্বয়ে এক ধরনের নিরামিষ রান্না করা হয়, যার নাম পাঁচন৷ এটি বৈসাবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য৷ বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী পিঠা ও মিষ্টান্নও তৈরি করা হয়৷ অতিথিদের জন্য এদিন সবার ঘরের দরজা খোলা থাকে৷

দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাংলা নববর্ষে থাকে লাঠি খেলা, ঘোড়দৌড়, বলি খেলা, নৌকাবাইচসহ নানা আয়োজন৷

এখনো বাঙালির এই উৎসবকে নিয়ে নানা অপপ্রচার আছে৷ আছে ধর্মের দোহাই৷ দু'বছর আগেও ‘হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি' বলে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের দাবি তোলে একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী৷ আর কিছু লোক এই উৎসবে বার বার নারীদের ওপর সুযোগ নিতে চায়৷ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘‘সরকার হয়ত নিরাপত্তার কারণে সময় বেঁধে দিতে পারে উৎসবের৷ অশুভ শক্তি নানা দাবি তুলতেই পারে৷ দুর্বৃত্তরা নানা অপতৎপরতা চালাতেই পারে৷ কিন্তু বাঙালির এই প্রাণের উৎসবের শক্তি অনেক গভীরে৷ বাংলা নববর্ষ সব অপশক্তিকে দূর করে দেয়৷ পরাজিত করে৷''

আর ছায়ানটের খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘‘আমাদের ওপর আঘাত এসেছিল৷ আর আঘাতের মূল কারণ ছিল, যারা আঘাত করেছে, তারা মনে করেছে বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতি নয়৷ যারা এই ভাবনার মধ্যে রয়েছেন, তাদের বোঝার মধ্যে ভুল রয়েছে৷ বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ধর্ম পালনের কোনো বিরোধ নেই৷ যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে৷ কিন্তু বাঙালির নববর্ষ সবার৷ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব বাঙালির নববর্ষ৷ এখানে আমরা কোনো ধর্মীয় পরিচয়ে উপস্থিত হই না৷ এই একটি জায়গায় আমরা এক হই৷ এক হয়ে আমরা গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করি, আমরা বাঙালি৷ আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে৷ আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, যা গর্বের৷''

আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷