পরিবেশ রক্ষায় ‘গ্রিন ইসলাম’
৪ জুলাই ২০১১বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ছে, সমুদ্রের পানির স্তর ওপরে উঠে এসেছে, কোথাও বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেছে আবার কোথাও প্রবল বর্ষণ সৃষ্টি করছে ভয়াবহ বন্যা৷ আর এসবই হচ্ছে আবহাওয়া এবং পরিবেশের পরিবর্তনের ফলাফল৷ এর সঙ্গে রয়েছে সুনামি এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ৷
এশিয়ার দুটি দেশে সুনামি ধ্বংসযজ্ঞের যে স্বাক্ষর রেখে গেছে তা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায়নি৷ দেশ দুটি জাপান এবং ইন্দোনেশিয়া৷ অনেক ইন্দোনেশিয় মনে করেন এগুলো খোদার প্রতিহিংসা৷ অন্যায় কাজ করার ফলে সৃষ্টিকর্তা অসন্তুষ্ট হয়েছেন৷ আবার অনেকে মনে করেন, এটা হচ্ছে মানুষের ধৈর্যেরই পরীক্ষা৷
সম্প্রতি বেশ কিছু ইমাম কোরানের আয়াত ব্যবহার করছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে৷ কোরান থেকে বেশ কিছু উদ্ধৃতি তারা সরাসরি তুলে ধরছেন যেমন ‘তোমরা পৃথিবীকে ধ্বংস কোরো না৷' কোরান শরিফের কোন কোন জায়গায় মানুষের জীবনকে একটি গাছের জীবনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে,‘নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু, বেসামরিক মানুষ এবং গাছ – এদের হত্যা কোরো না৷'
হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মনিকা আর্নেজ গ্রিন ইসলম সম্পর্কে বললেন,‘‘গ্রিন ইসলামের ব্যাখ্যা বিভিন্নভাবে হতে পারে৷ পরিবেশ ও প্রকৃতি বাঁচানোর কথা ইসলাম ধর্মেও বলা আছে৷ এর অর্থ হতে পারে মুসলমানরা পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বসবাস করতে পারে এবং পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য কোরান শরীফের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে৷''
উনবিংশ শতাব্দী থেকেই ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন স্কুলে পরিবেশ রক্ষা করার বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হয়৷ তখন কেউ-ই সবুজ পৃথিবী, উত্তরমেরুর বরফ গলে যাওয়া, বন্যা এবং ক্ষরা নিয়ে মাথা ঘামাতো না৷
পূর্ব জাভার মাদুরা দ্বীপে আল-নুকায়াহ স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৭ সালে৷ প্রতিষ্ঠা করেন মুহাম্মদ সিয়ারকাওয়ি৷ তিনি মূলত ইসলামের বিভিন্ন দিক বাচ্চাদের পড়াতেন এবং সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে দূরে থাকতে বলতেন৷ কিছুদিনের মধ্যেই তিনি দেখেন যে দ্বীপের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল প্রকৃতি এবং পরিবেশ৷ পানির অভাব দেখা দেয়ায় দ্বীপবাসীদের মধ্যে সারাক্ষণই সংঘর্ষ লেগে থাকতো৷ তিনি তার শিক্ষকতায় পরিবর্তন আনেন৷ ইসলামের সঙ্গে যুক্ত করেন প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করার নানা কৌশল৷
সেই একই স্কুলে এখন বাচ্চাদের প্রকৃতিকে রক্ষা করার বিভিন্ন কৌশল শেখানো হয়৷ গাছ লাগানোর কথা বলা হয় বাচ্চাদের৷ সেই একই কাজ করছে মসজিদগুলো৷ ইমামরা সারাক্ষণই মানুষদের উদ্বুদ্ধ করছেন গাছ লাগাতে, প্রকৃতি ও পরিবেশের পরিবর্তনের ওপর নজর রাখতে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক