পরিবেশ সংরক্ষেণ করছেন ইমাম
৩১ আগস্ট ২০১৬থাইল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিমে ক্রাবি উপকূলে ম্যানগ্রোভ বন আবার ফুলেফেঁপে উঠছে৷ মাছ, কাঁকড়া ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীব শক্ত শিকড়ের আশেপাশেই বসবাস করে৷ সেখানকার মাকাক বানরগুলিও জঙ্গলে বেশ বহাল তবিয়েতে আছে বলে মনে হয়৷
কয়েক কিলোমিটার দূরেই কো ক্লাং নামের ছোট্ট দ্বীপ৷ সেখানে কিন্তু সবুজের সমারোহের কোনো চিহ্ন নেই৷ ধ্বংসলীলার ফলে প্রাণের চিহ্ন প্রায় লোপ পেয়ে গেছে৷ পুকুর খুঁড়তে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল সাফ করা হয়েছে৷ কয়েক দশক আগেই দ্বীপের অনেক অংশে চিংড়ি চাষের জন্য এমন পুকুর খোঁড়া হয়েছিল৷ সে সময়ে এই ব্যবসা বেশ লাভজনক ছিল৷
আজ থাইল্যান্ডের চিংড়ি চাষের ব্যবসা মূল ভূখণ্ডে বড় বড় ফার্মের হাতে চলে গেছে৷ দ্বীপের অনেক পুকুর তাই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে৷ ঠিক সে কারণেই পরিবেশকর্মী জারুওয়ান এনরাইট বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন৷ দ্বীপবাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি একের পর এক পুকুরকে আবার ম্যানগ্রোভ অরণ্যে রূপান্তরিত করছেন৷ এর জন্য মাটি অতি শুকনা বা অতি ভিজে থাকলে চলবে না৷ এ কাজে প্রায়ই বাইরের সাহায্য লাগে৷ জারুওয়ান বলেন, ‘‘কিছু এলাকায় জল জমে আছে৷ তাই আমরা জল বার করার চেষ্টা করি৷ এমনকি ভাটার সময়েও জল জমা হতে দেই না৷ কারণ খুব ভিজে অবস্থায় ম্যানগ্রোভ বাড়তে পারে না৷''
‘ম্যানগ্রোভ অ্যাকশন প্রজেক্ট' নামের এক এনজিও-র হয়ে জারুওয়ান এনরাইট, ৪ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন৷ পুকুর বুজিয়ে ম্যানগ্রোভ এলাকা গড়ে তোলাই তাঁর লক্ষ্য৷ অনেক জমি মালিকের কাছেই এমন প্রচেষ্টা অদ্ভুত৷ তাই তারা বিলম্ব করছেন৷ জারুয়ান বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে তিনি মৎসপালন করছেন৷ তাই অপেক্ষা করে দেখবেন, এতে তাঁর ভালো হয় কিনা৷ তারপর হয়ত সিদ্ধান্ত বিবেচনা করবেন৷''
এই উদ্যোগের সার্থকতা বোঝাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে৷ চাই অনেক ধৈর্য্য৷ কাজ মাঝে মাঝে বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে৷ সে কারণেই হাতেনাতে সাফল্য পাওয়া জরুরি৷ দ্বীপের সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের ইমাম সানে ক্লংরুয়া বহু বছর ধরে কাঁকড়া ধরে আসছেন৷
বছর দুয়েক আগেই তিনি তাঁর পুকুরটি জারুওয়ান এনরাইট-এর প্রকল্পের কাজে উৎসর্গ করেছেন৷ তাঁর পছন্দের কাঁকড়া ম্যানগ্রোভ এলাকায়ই বেশি দেখা যায়৷ সুস্বাদু খাবার হিসেবে সেগুলি ভালোই বিক্রিও হয়৷ সানে ক্লংরুয়া বলেন, ‘‘আমি বেশি কাঁকড়া ধরি না, কারণ তাদের বাঁচিয়ে রাখতে চাই৷ মাঝে মাঝে চা-কফি কেনার জন্য টাকার দরকার হলে ধরি৷ তবে দরকার ছাড়া এ কাজ করি না৷''
পুনর্বনানিকরণের উদ্যোগ শুরু হবার পর আবার নতুন করে কিছু গাছ গজাচ্ছে৷ ঘন ম্যানগ্রোভ জঙ্গল সৃষ্টি হতে অনেক বছর লেগে যাবে৷ কিন্তু সূচনা তো হয়েছে! জারুওয়ান এনরাইট প্রায়ই পরিদর্শন করতে আসেন৷ কিন্তু এবার যা দেখলেন, তা তাঁর মোটেই ভালো লাগলো না৷ তাঁর মনে হয় ছাগল চারাগাছের গোড়া খেয়ে ফেলছে৷
কিছুক্ষণ পরেই তিনি ছাগলদের হাতেনাতে ধরে ফেললেন৷ বেড়ার একটা জায়গায় গর্ত করে তাদের প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কো ক্লা-এ পরিবেশ সংরক্ষণ তাই সহজ কাজ নয়৷ ইমাম নিজে কাঁটাতারের বেড়া ও সিমেন্ট পাঠিয়ে দেন৷ চারাগাছ বাঁচাতে বেড়া মেরামত করে ভবিষ্যতে ছাগল ঢোকা বন্ধ করার চেষ্টা চলছে৷
কারণ একমাত্র এভাবেই ম্যানগ্রোভ বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে৷ জারুওয়ান এনরাইট এই পুকুরকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরতে চান৷ বাকি দ্বীপবাসী ইমামের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একই পথে চলেন – এমনটাই তাঁর ইচ্ছা৷
একদিন কো ক্লাং দ্বীপ উপকূলের মতে সবুজ হয়ে উঠবে – পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা এমন স্বপ্ন দেখেন৷ আজই সেখানে ঘন জঙ্গল দেখা যায়৷ অথচ কয়েক দশক আগে পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ গাছ কেটে অনেক এলাকা সাফ করে দিয়েছিল৷ এখন সেখানে আবার ম্যানগ্রোভ বন ফিরে এসেছে৷ ফলে অনেকের উপকার হচ্ছে৷ শখের মাছ শিকারি সুরাদেত নিমকাটিআইয়ং বলেন, ‘‘এখানে যখন কোনো বন ছিল না, মাছও উধাও হয়ে গিয়েছিল৷ এখন অনেক মাঝ আর কাঁকড়া পাওয়া যায়৷ তারা ফিরে এসেছে৷ আমরাও বেশি করে ধরছি৷ আগে যেখানে দিনে তিনটি মাছ ধরতাম, আজ সেখানে ১০ কিলো পাই৷ অনেক ভালো হয়েছে৷''
অক্ষত ম্যানগ্রোভ এলাকা রাজ্যের অনেক মানুষের কাছে রুজি-রোজগারের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে৷