পোশাক শ্রমিকরা আতঙ্কে
২৯ জুন ২০১৩যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি স্থগিতের নেতিবাচক প্রভাব যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশে পড়ে তাহলে সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এই নারীরা৷
বাংলাদেশে সাড়ে ৪ হাজার পোশাক কারখানায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷ আর তাদের ৯০ ভাগই নারী৷ এই নারীরা কোন রকম দক্ষতা ছাড়াই পোশাক কারখানায় কাজ পেয়েছেন৷ এবং এখানে কাজ করেই তারা দক্ষ হয়ে উঠেছেন৷ তাদের সর্বনিম্ন মজুরি তিন হাজার টাকা৷ পরিমাণে কম হলেও বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থায় এই টাকা একজন পোশাক কর্মীর সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং তার ক্ষমতায়ন হয়েছে৷ ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় সিউইং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ফারজানা আক্তার (২৩) জানান, দুই সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে তার সংসার৷ তিনি ওভার টাইম মিলিয়ে মাসে ৬ হাজার টাকা পান৷ তার স্বামী রিকশা চালান৷ দু'জনের আয়ে তাদের সংসার চলছে৷ তার আয় বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়বেন৷ তিনি জিএসপি বোঝেন না৷ তবে পোশাক কারখানা কোন কারণে বন্ধ হলে তিনি যে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তা নিশ্চিত বোঝেন৷ তার কাছে প্রশ্ন ছিল, তার কারখানায় মজুরী এবং নিরপত্তায় সে সন্তুষ্ট কিনা৷ তার জবাব মালিক চাইলে আরেকটু বেশি বেতন দিতে পারেন৷ আর পরিবেশ নিয়ে তার আছে অসন্তোষ৷ একদিকে অসন্তোষ আর আরেকদিকে পথে বসার ভয় এই দুই চাপে বিপর্যস্ত পোশাক কর্মীরা৷
বাংলাদেশ ‘রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের' সভানেত্রী লাভলি ইয়াসমিন ডয়চে ভেলেকে জানান, যদি যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি স্থগিতের প্রভাব ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে পড়ে তাহলে পোশাক রপ্তানি কমে যাবে৷ তাতে কিছু কারখানা বন্ধ হবে৷ কোন কোন কারখানার উত্পাদন কমে যাবে৷ আর তাতে ছাঁটাইয়ের শিকার হবেন এই নারী শ্রমিকরা৷ কিন্তু তিনি এজন্য দায়ী করেন মালিক এবং সরকারকে৷ তিনি বলেন, ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র এব্যাপারে বাংলাদেশকে সতর্ক করে আসছিল৷ কিন্তু সরকার যেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি তেমনি মালিকরা অতি মুনাফার লোভে শ্রমিক নিরাপত্তা, শ্রমিক অধিকার এবং কাজের পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেয়নি৷ কারাখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু হলে শ্রমিকদের অনেক সমস্যা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত৷ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে সরকার এবং মালিকদের উচিত হবে কারখানাগুলোতে শ্রমিক নিরাপত্তা, শ্রমিক অধিকার এবং কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা৷ মনে রাখাতে হবে, শেষ পর্যন্ত শুধু শ্রমিক নয় মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ তাঁর মতে, এই নারী শ্রমিকদের যদি এক তৃতীয়াংশও বেকার হয় তাহলে শুধু অর্থনৈতিক নয় বড় ধরনের সামাজিক সংকট দেখা দেবে৷
বিজিএমইএ'র সহ সভাপতি এস এ মান্নান কচি ডয়চে ভেলেক জানান, তারাও আতঙ্কিত৷ তিনি জানান, এরই মধ্যে তারা নানা ব্যবস্থা নিয়েছেন৷ ২০টি গার্মেন্টস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ ৩০০ গার্মেন্টসকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দেয়া হচ্ছে৷ বেতন বাড়ানোর জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে৷ তাই যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি স্থগিতের সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পায়না, তবে ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ আরো যেসব দেশে তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পায় তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে তাহলে তা হবে পোশাক শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা৷ এর এই ধাক্কায় প্রথমেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শ্রমিক বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা৷ তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে৷ যদিও তারা বলছে শ্রমিকদের কল্যাণেই তাদের জিএসপি স্থগিতের সিদ্ধান্ত৷