পরীক্ষা থেকে মুক্তি পাচ্ছে শিশুরা
১৬ জানুয়ারি ২০২০বাংলাদেশে স্কুলে শিশুদের পরীক্ষা ও পড়াশোনার চাপ কমাতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এই বিষয়ে এবার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার৷ যার প্রেক্ষিতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়া হচ্ছে৷ ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সবার জন্য থাকবে একই বই৷ বিভাগ বেছে নিতে হবে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে৷ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা ডয়চে ভেলেকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘‘আরো কিছু প্রস্তাব নিয়ে আমরা কাজ করছি৷ ধাপে ধাপে এগুলো বাস্তবায়ন হবে৷ কিছু চূড়ান্ত হয়েছে৷ বাকিগুলো শেষ পর্যন্ত কিভাবে চূড়ান্ত হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷ এনিয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে৷ এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী৷''
পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিকে তৃতীয় শেণি পর্যন্ত কোনো পাশ-ফেল থাকবে না, থাকবে না কোন বার্ষিক পরীক্ষাও৷ তবে একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি থাকবে৷ যা প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে নেয়া হবে৷ শিক্ষকেরা নিজেরাই মূল্যায়ন করবেন৷ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হবে চতুর্থ এবং পঞ্চম শেণিতে৷একই সঙ্গে বইয়ের সংখ্যা কমিয়ে এমন ব্যবস্থা করা হবে যে ছাত্ররা ক্লাসেই শিখবে৷ এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে৷
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাই একই ধরনের বই পড়বে৷ সায়েন্স, আর্টস ও কমার্স ভাগ থাকবে না৷ মাধ্যমিকের পরীক্ষা হবে দশম শ্রেণির সিলেবাসে৷
অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন,‘‘প্রি পাইমারি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলাম নিয়ে আমরা কাজ করছি৷ ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সবার জন্য একই বই থাকবে৷ বিভাগের প্রশ্ন আসবে উচ্চ মাধ্যমিকে৷ আর একাদশ শ্রেণিতে একটি পাবলিক পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে আরেকটি পাবালিক পরীক্ষা নিয়েও কাজ হচ্ছে৷''
২০২১ সাল থেকে প্রাথমিকে প্রথম শেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়ার কাজ চলছে বলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড চেয়ারম্যান জানান৷ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ তিনি চান শিশুদের ওপর থেকে বইয়ের বোঝা এবং পরীক্ষার চাপ কমানো হোক৷
নারায়ন চন্দ্র সাহা জানান,‘‘২০২১ সাল থেকে ষষ্ঠ শেণিতে সবাইকে ১০টি বই দেয়া হবে৷ ২০২৫ সালে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে যাবে৷''
এখন ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ১২ থেকে ১৪টি বই পড়তে হয়৷ নতুন নিয়মে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই ১০টি বই পড়তে হবে৷ বইগুলোর বিষয় এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে যাতে একাদশ শ্রেণিতে যে যার পছন্দমত বিভাগ বেছে নিতে পারে৷
প্রাথমিকেও বইয়ের সংখ্যা কমানোর কাজ চলছে৷ এখন গড়ে ছয়টি বই পড়তে হয়৷ নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘প্রাথমিকে বই কমিয়ে টিচার্স গাইড করা হবে৷ ওই গাইড অনুয়ায়ী শিক্ষকরা ক্লাসে পড়াবেন৷ কিন্তু ছাত্রদের কোনো বই থাকবে না৷''
এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রাথমিকে মাত্র তিনটি বই থাকবে, বাংলা , ইংরেজি ও গনিত৷ আর অন্য যেসব বিষয় আছে তা অ্যাকটিভ লার্নিং-এর আওচায় চলে যাবে৷ শিশুরা খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিখবে৷ শিক্ষকরা গাইড হিসেবে কাজ করবেন৷ তাদের জন্য নির্দেশিকা থাকবে৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘২০২১ সালে প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে এবং ‘ফেল' বলতে কিছু থাকবে না৷ প্রতিদিনের মূল্যায়নে কোনো শিক্ষার্থী যদি দুর্বল হয় তাকে বিশেষ যত্নের মাধ্যমে তুলে আনার দায়িত্ব শিক্ষকের৷''
চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে মূল্যায়ন ও পরীক্ষা দুটোই থাকবে আংশিক ভাবে৷ দেশের ১০০টি স্কুলে এই বছরের প্রথম চার মাস অ্যাকটিক লার্নিং-এর পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করা হয়েছে৷