পর্নো সাইট রুখতে সরকারি নির্দেশ
৯ আগস্ট ২০১৫মোদী সরকারের টেলিকম তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ভারতের সাংস্কৃতিক বিন্যাসের কথা মাথায় রেখে ৮৫৭টি পর্নো সাইট বন্ধ করতে তৎপর হয়ে উঠেছিল৷ এর জন্য গত ৩১শে জুলাই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) ওপর একটা অস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছিল নতুন দিল্লি৷ কিন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমগুলিতে এ কথা প্রচার হতে তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহল সরব হয়ে ওঠে ভারতে৷ তাঁদের প্রশ্ন, শ্লীল-অশ্লীলের সর্বজনগ্রাহ্য কোনো সংজ্ঞা নেই৷ তাহলে কে ঠিক করবে সেই সংজ্ঞা? যদি মনে করা হয় ভিক্টোরিয়ান যুগের রক্ষণশীল মানসিকতা নিয়ে পর্নো সাইটগুলি বন্ধ করা না গেলে দেশটা গোল্লায় যাবে, ভারতীয় সংস্কৃতির সর্বনাশ হবে, তাহলে খাজুরাহোর প্রাচীন ভাস্কর্যগুলির কী হবে? এই ধরণের ইন্টারনেট সেন্সরশিপ ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কি? কারো কারো মতে, বিজেপি সরকার হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা প্রসারে শিক্ষা, ইন্টারনেট, চলচ্চিত্র, বই প্রকাশের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে৷ আর তার জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা৷
তারপর আর কী? চাপের মুখে পড়ে সরকার তড়িঘড়ি তার নির্দেশিকা সংশোধন করেছে৷ সঙ্গে সঙ্গে এ-ও জানিয়েছে যে, সব পর্নো সাইট নয়, একমাত্র শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফিক বা অশ্লীল সাইটের ক্ষেত্রেই এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে এবং এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশেই৷
কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ গত ৪ঠা আগস্ট বিষয়টি খোলসা করে বলেছেন যে, আজকের এই ইন্টারনেটের যুগে পর্নোগ্রাফিক সাইট যে কার্যত বন্ধ করা সম্ভব নয়, সেটা বুঝেই এই সংশোধন৷ তবে এটা সাময়িক সিদ্ধান্ত মাত্র৷ সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় জানার পর সরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতি প্রণয়ন করবে৷ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষগুলির মধ্যে থাকবে এনজিও, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, অভিভাবক এবং শিশুদের কাউন্সিলার৷ তবে নৈতিক পুলিশের ভূমিকা নেবার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই৷ কেউ কেউ এই নিষেধাজ্ঞাকে তালিবানি শাসনের সঙ্গে তুলনা করায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেন, এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন৷ এছাড়া ইন্টারনেট সেন্সরশিপেও সরকার বিশ্বাসী নয়৷ তবে শিশু পর্নো সাইট বন্ধ করতে সরকার কৃতসংকল্প৷ ‘‘শিশুদের নিয়ে যৌনাচার এক উদ্বেগজনক সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে'', বলেন কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী৷
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বিশিষ্ট আইনজীবী কমলেশ ভাসওয়ানি এক জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা দায়ের করে অভিযোগ করেন যে, শিশু বিষয়ক পর্নোগ্রাফিক সাইট ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না৷ তাই এটাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হোক৷ তিনি বলেন, ‘‘অবিলম্বে পর্নো সাইটগুলি বন্ধ না করলে ধর্ষণ ও যৌন অপরাধ সীমা ছাড়িয়ে যাবে৷''
এর প্রেক্ষিতে, গত জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এইচ. এল দাত্তু সরকারের কাছে জানতে চান, ‘‘বিষয়টি যেহেতু খুব গুরুতর৷ তাই সরকার পর্নো সাইট, বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে অশ্লীল সাইট বন্ধ করার জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এ বিষয়ে সরকারের অবস্থানই বা কী?'' এরপর চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে খোদ সরকারের কাছে এ সব প্রশ্নের উত্তর চায় সুপ্রিম কোর্ট৷ পাশাপাশি ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এ কথাও বলে যে, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক যদি তাঁর চার দেওয়ালের মধ্যে পর্নো সাইট দেখতে চান, তাহলে সেটা বেআইনি নয়৷ সেটা তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে৷ সেই স্বাধীনতায় সরকার কখনোই হস্তক্ষেপ করতে পারে না৷