পশ্চিমবঙ্গ: পদ খালি, স্কুল খুললে পড়াবেন কে?
৯ অক্টোবর ২০২১করোনাকালে আর্থ-সামাজিকভাবে পশ্চাৎপদ শ্রেণি আরও পিছিয়ে যাচ্ছে৷ জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদন বলছে, করোনার সময় সারাদেশে প্রায় ১৫ লাখ স্কুল বন্ধ হয়েছে৷ আর এর ফলে দেশজুড়ে ২৮ কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতির মুখে পড়েছে৷
এমন ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দরকার উপযোগী পদক্ষেপ৷ তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে করা ইউনেস্কোর আরেক প্রতিবেদন ভাবনায় ফেলছে৷
সম্প্রতি প্রকাশিত সংস্থাটির ‘নো টিচারস, নো ক্লাস’ সমীক্ষা বলছে, দেশে এক লাখেরও বেশি স্কুলে মাত্র একজন করে শিক্ষক আছেন৷
শিক্ষকের পদ খালি থাকা রাজ্যগুলোর মধ্যে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের পরেই পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান৷ অথচ ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এর সুপারিশ অনুযায়ী, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে প্রতি ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রতি ৪০জন পড়ুয়া জন্য একজন শিক্ষক থাকা দরকার৷
কাকদ্বীপের শিবকালীনগর ঈশানচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলের শিক্ষক গৌতম মণ্ডল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই প্রান্তিক এলাকার অনেক স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই৷ অথচ অধিকাংশ পড়ুয়াই পরিবারে প্রথম শিক্ষার আলো দেখেছে৷ দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকার পর আগামীতে যখন স্কুল খুলবে, তখন পড়ুয়ারা বেসিকটাই ভুলে যাবে৷’’
ইউনেস্কোর সমীক্ষা অনুযায়ী, সারাদেশে ১১ লক্ষ ১৬ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য৷ এর মধ্যে শতকরা ৬৯ শতাংশ গ্রাম অঞ্চলের স্কুলগুলিতে৷ অর্থাৎ পরিসংখান অনুযায়ী, শিক্ষকের ঘাটতি থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা৷
সমীক্ষাটি আরো জানায়, পশ্চিমবঙ্গে মোট স্কুলের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৮২৮৷ আর রাজ্যজুড়ে এক লাখ ১৬ হাজার শিক্ষক পদ ফাঁকা রয়েছে৷
এ অবস্থায় দীর্ঘদিন বন্ধ ধাকার পর নতুন করে স্কুল শুরু হলে যেখানে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আলাদা নজরদারি প্রয়োজন সেখানে শিক্ষকের এমন ঘাটতি থাকায় পড়াশোনা কতোটা এগোবে সে প্রশ্ন সামনে এসেছে৷
কলকাতার বাগবাজারের হরনাথ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজি মাসুম আখতার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গ্রামে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত খুবই খারাপ৷ উৎসশ্রী পোর্টালের সৌজন্যে গ্রাম থেকে শিক্ষকদের শহরাঞ্চলে চলে যাওয়ার ঢল নেমেছে৷ ফলে গ্রামের স্কুলে শিক্ষকরা থাকছেন না৷ শহরে অভিভাবকেরা বেসরকারি স্কুলে পড়াতে চান, এই অবস্থায় কলকাতায় ১৮০টি সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷’’
উৎসশ্রী পোর্টাল আসার পর বদলি নিয়ে শিক্ষকমহলে খুশির হাওয়া বইলেও তাতে শিক্ষক নিয়োগের সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করেন শিক্ষক কিঙ্কর অধিকারী৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষক বদলি হলেও মোট শূন্যপদ পূরণ হচ্ছে না৷ সব জায়গাতেই অন্যের জায়গায় বদলি হয়ে শিক্ষকেরা যাচ্ছেন, তাতে সামগ্রিক শূন্যপদের সংখ্যা বদলাচ্ছে না৷ সুষ্ঠুভাবে বদলির পাশে নিয়োগটাও দরকার৷’’
শিক্ষক বদলির এমন প্রক্রিয়ায় অনেক স্কুলের ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন কাজি মাসুম আখতার৷ তার বক্তব্য, ‘‘যে স্কুলে ৫০ জন শিক্ষার্থী, সেখানে শিক্ষক আসছেন, অথচ যে স্কুলে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী, সেখানে শিক্ষক নেই৷’’
এদিকে জেলার স্কুলগুলিতে পূর্ণকালীন শিক্ষকের অভাব ও স্কুলছুটদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷
মামলার প্রেক্ষিতে আদালত রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির বর্তমান পরিস্থিতি কেমন, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতই বা কেমন, এ বিষয়ে আগস্ট মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলে৷ কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে মাসের মধ্যেও রাজ্য কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি৷
তবে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ হলো, রাজ্যের বেশিরভাগ সরকারি স্কুলের পরিকাঠামোয় ঘাটতি রয়েছে৷ ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত যা থাকা দরকার, তা বেশিরভাগ স্কুলেই নেই৷ শিক্ষকের অভাবে অনেক স্কুল বন্ধ হওয়ার উপক্রম৷ অনেক স্কুলে পূর্ণকালীন শিক্ষক না থাকায় প্যারাটিচার দিয়ে কাজ চালাতে হয়েছে৷
নিজের স্কুলের বর্ণনা দিয়ে গৌতম মণ্ডল বলেন, "আমাদের স্কুলে দুই হাজারের বেশি ছাত্র রয়েছে৷ প্যারাটিচার, ভোকেশনাল টিচার দিয়ে কাজ চলে৷ পূর্ণকালীন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীর অনুপাত ১:৫৫৷’’