পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসনের অবস্থা
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই তৃতীয়বার কোনও অ্যাটর্নি জেনারেল পদত্যাগ করলেন৷ কারণটা সেই একই৷ রাজ্য সরকারের সঙ্গে মতে মিলছে না৷ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সরকারের আইনি অবস্থান নিয়ে লাগাতার মতবিরোধ৷ মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল জয়ন্ত মিত্র৷ তারপর তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর আইনি পরামর্শ রাজ্য সরকার মানছিল না, অগ্রাহ্য করছিল এবং সরাসরি জানিয়েও দিচ্ছিল যে তাঁর প্রস্তাব ‘গ্রহণযোগ্য নয়’৷ প্রবীণ আইনজীবীর কাছে তা অত্যন্ত অসম্মানজনক মনে হয়েছে৷ তা ছাড়া তাঁর সুচিন্তিত আইনি অবস্থানের সঙ্গে রাজ্য সরকারের চিন্তা-ভাবনারও লাগাতার বিরোধ চলছিল৷ এভাবে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছিল না বলেও তিনি জানিয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্তাও একই সঙ্গে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন৷ তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর ক্ষেত্রে আইনি পরামর্শ বা সুপারিশ রাজ্য সরকারের না মানার কোনও ঘটনা ঘটেনি৷ কিন্তু যেহেতু জয়ন্ত মিত্রের নেতৃত্বে একটি দল হিসেবে তাঁরা কাজ করতেন, জয়ন্তবাবু পদত্যাগ করার পর তাঁর পক্ষেও আর কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না৷
তবে সাধারণ ধারণা হলো, সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে আইনি অবস্থানের বিরোধের কারণেই এভাবে একের পর এক অ্যাটর্নি জেনারেল দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছেন৷ ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ইস্তফা দিয়েছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দেশের প্রথম সারির আইনজীবীদের অন্যতম, অনিন্দ্য মিত্র৷ এরপর আরেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিমল চ্যাটার্জিও একইভাবে ইস্তফা দেন৷ সেই তালিকায় জয়ন্ত মিত্র হলেন তৃতীয় নাম, যিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন মাত্র দু’বছর আগে৷
মঙ্গলবার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী জয়ন্তবাবুর পদত্যাগ নিয়ে আইনমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন৷ সুজন চক্রবর্তী বলেন, ৬ বছরে ৩ জন অ্যাটর্নি জেনারেলের ইস্তফা থেকেই পরিস্কার, রাজ্যে আইনের শাসন নেই৷ এবং সরকারের একের পর ভুল সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপকে আইনত বৈধ প্রমাণ করতে গিয়ে আদালতে কার্যত অপদস্থ হচ্ছেন আইনজীবীরা৷ এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরার প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যর মন্তব্য, অ্যাটর্নি জেনারেল একটি সাংবিধানিক পদ৷ যে পদে সরাসরি নিয়োগ করেন রাজ্যপাল৷ সেই পদে থেকে কোনও সরকার বা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করা সম্ভব নয়৷
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের মুখ্য কৌঁসুলি, অর্থাৎ চিফ পাবলিক প্রসিকিউটর মনজিৎ সিংও মাসখানেক আগেই পদত্যাগ করেছেন৷ বিভিন্ন মামলায় বারবার কলকাতা হাইকোর্টের কাছে তিরস্কৃত রাজ্য সরকার এখন সব শূন্য পদ ভরাটের জন্যই যোগ্য লোক খুঁজছে৷ আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর বলেছেন, ‘‘চিরকাল শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলেছি৷ যা ঠিক নয়, তার কাছে নত হতে শিখিনি৷’’ নিজের কথা বললেও, আসলে পশ্চিমবঙ্গের বেহাল পরিস্থিতির কথাই বলে গেলেন তিনি৷