পশ্চিমবঙ্গে গ্রামবাংলার ঈদ
অবশেষে বর্ষা এসেছে বাংলায়। এসেছে উৎসবও। সবুজে ঘেরা গ্রাম-গ্রামান্তরে বাঙালি মুসলমানরা মাতলেন ঈদের আনন্দে। ত্যাগ ও উৎসর্গের আবহে বেশ খুশি খুশি মেজাজ। কাছ থেকে গ্রামবাংলার এ উৎসব দেখেছে ডয়চে ভেলে।
কোরবানির ঈদ
শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার ট্রেনে পৌঁছানো যায় মসলন্দপুর। রেলের এই শাখার আশপাশে বিস্তীর্ণ এলাকায় সংখ্যালঘু মুসলমানদের বাস। বৃহস্পতিবার তাদের ঘুম ভেঙেছে খুব সকালে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনেকে অবশ্য এমনিতেই ভোরেই ওঠেন৷ এ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম তো গানও লিখে গেছেন, ‘ভোর হল ওঠ জাগ মুসাফির, আল্লা রসুল বোল।’
ঈদের আগে প্রস্তুতি
কোরবানির ঈদে প্রিয় পশুকে সর্বশক্তিমানের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। কেউ বছরভর লালন করেন। কেউ ঈদের কিছু দিন আগে পশু কিনে আনেন। বিভিন্ন হাটে গবাদি পশুর কেনাবেচা চলে।
পশুর হাট
বছরভরই নানা ধরনের পশুর হাট চলতে থাকে। প্রতি বুধ ও শনিবার বসে উত্তর ২৪ পরগনার বাগজোলার বিখ্যাত হাট। কোরবানির আগে বাজার জমে ওঠে। কিন্তু এবার ঈদের আগের দিন প্রবল বৃষ্টিতে কিছুটা মার খেয়েছে কেনাবেচা। ছাগল এ বার বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে।
ঈদগাহের পথে
কোরবানির আগে হয় ঈদের নামাজ। স্নান সেরে ‘শুদ্ধ’ বস্ত্রে তৈরি হন সকলে। সব পথ এসে মেশে ঈদগাহে। সকাল সাতটা ও সাড়ে আটটার দুদফার নমাজ। সবার জায়গা হয় না ঈদগাহ প্রাঙ্গণে। তাই রাস্তাতেও প্রার্থনা সারতে হয় নমাজিদের।
ছোট-বড়র নেই ভেদাভেদ
ঈদের আনন্দ সকলের। বড় থেকে ছোট, সবাই হাজির নামাজে। ইমামের কণ্ঠ ভেসে আসে মাইকে। বেকারত্ব দূর করা থেকে শুরু করে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি- জীবনের প্রায় সব দিক ছোঁয়া কত চাওয়ার পাঠ দেন তিনি।
তারাও শামিল
মলিন বেশ। শ্রম, ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। চৌরাস্তার মোড়ে ওদেরও চোখে পড়ে। প্রার্থনার দরবারে ওরাও শামিল। দোয়া চাইছেন, ‘‘পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু…’’
নামাজের পরে
আকাশ তখন ঘনিয়ে এসেছে। বৃষ্টি পড়ছে টিপটাপ। বাড়ির পথে রওনা হলেন নামাজিরা। এরপর কোরবানির প্রস্তুতি নিতে হবে। আনন্দের মুহূর্তে যেখানে মিশে যায় ত্যাগের অঙ্গীকার।
‘প্রাণের মাঝে আয়’
ফেরার পথে কতজনের সঙ্গে দেখা। উৎসবে বাড়ি না এলে এ সুযোগ কি মেলে! ছোটবেলার ক্লাসমেট একে অপরের কুশল সংবাদ নেন।
সম্প্রীতি
সবারই পাশাপাশি বাস। এক বাড়িতে তুলসীমঞ্চ, তার পাশের বাড়িতে লেখা ‘৭৮৬’। পরম করুণাময়কে স্মরণ। ঈদের জমায়েতে ওদের দেখা হয়ে যায়। কোলাকুলি বাদ থাকে কেন! আর সঙ্গে একটা সেলফি তো মাস্ট।
উল্টোরথের পথে
যে রাস্তায় বুধবার বিকেলে চলেছে জগন্নাথদেবের উল্টোরথ, সেই পথেই বৃহস্পতিবার সকালে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা। এই দুই উদযাপনের মধ্যে সেতু বেঁধে দেয় পাঁপড়ভাজা। বাঙালির আনন্দ-মুহূর্তের এক চিরকালীন উপাদান।
সঙ্গে চাই জিলিপি
পাঁপড় কি জিলিপি ছাড়া জমে? নামাজের পর দোকানে হামলে পড়ে ভিড়। ১০০ টাকা কেজি। কয়েকদিন ধরে দোকান বসিয়েছেন মকবুল-বিশ্বনাথরা। বিক্রিবাটা ভালো হওয়ায় তাদের মুখে চওড়া হাসি্।
আনন্দের ভাগ
কোরবানির ঈদে প্রিয় সন্তানের মতো উৎসর্গ করতে হয় পশুকে। পরিবারের কাছে আনন্দ-বিষাদে ঘেরা সেই সময়। নিয়মানুযায়ী তিনভাগের একভাগ মাংস রেখে বাকিটা বিতরণ করতে হয়। এ নিয়ে তুমুল ব্যস্ততায় দুপুর গড়িয়ে যায়।
মিষ্টিসুখের আহ্লাদে
কোরবানির মাংস রান্না ঈদের রাতে বা পরের দিন। তার পরও জাল দিয়ে রাখা যায় মাংস। তবে মিষ্টির থালা উৎসবের আগেই তৈরি। ভাজা সেমাই, দুধেল সেমাই, চিনির পাকে গজার সঙ্গে আরো কত কী!