1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অপরাধভারত

পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ-খুনের ধারাবাহিকতায় এবার আলিপুরদুয়ার

২৩ জানুয়ারি ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা থামছে না। এবার আলিপুরদুয়ারে এক যুবতীকে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনা সামনে এসেছে।

https://p.dw.com/p/4pVzr
কলকাতায় ারজি করের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদ।
প্রবল প্রতিবাদ, বিক্ষভ সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ থামানো যাচ্ছে না।ছবি: Prabhakar Tewari/DW

দিল্লিতে নির্ভয়ার ধর্ষণ ও পৈশাচিকভাবে খুন করার ঘটনার পর আইন সংশোধন করা হয়েছিল। সেই সময় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়। সেই আইন নিয়ে আলোচনার সময় বিভিন্ন দলের সাংসদদের মত ছিল, এই ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে গেলে এই চরম শাস্তি দরকার। এই শাস্তির ভয়েই অপরাধীরা এই ধরনের অপরাধ করতে ভয় পাবে।

তারপর আরজি কর-কাণ্ড হয়েছে। তা নিয়ে কলকাতা-সহ সারা পশ্চিমবঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারত, ভারত হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সেই ঘটনার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। এরপরেও একের পর এক জায়গায় ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা সামনে আসছে। যার শেষ ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ারে।

মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের চা-বাগান এলাকায় এক যুবতীর মৃতদেহ পাওয়া য়ায়। ওই যুবতী দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তার সঙ্গে একটি যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তাদের দূরত্ব তৈরি হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। ছেলেটি মেয়েটিকে মারধরও করে। ওই ছেলেটি মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর এক সময় মেয়েটির দেহ চা-বাগান থেকে উদ্ধার হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটির গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। মেয়েটির দিদির অভিযোগ, বোনকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। পুলিশ ওই ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করেছে।

বীরভূম ও কোচবিহারের ঘটনা

মঙ্গলবার রাতে বীরভূমে একটি মুদির দোকানে একটি নাবালিকা চকোলেট কিনতে আসে। মুদির দোকানের মালিক তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। রাতে পুলিশ সেখানে যায়। মালিক তখন পালিয়েছে। পুলিশ তার দাদাকে আটক করে।

পরের দিন স্থানীয় মানুষ রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশ পরে অভিযুক্তকে ধরে। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষাও হয়েছে।

কোচবিহারে একটি ছয় বছরের বাচ্চা মেয়েকে এক নাবালক ধর্ষণ করে। তারপর মেয়েটি চিৎকার করলে সে পালায়। দুইদিন পলাতক থাকার পর পুলিশ তাকে ধরে।

'মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন'

কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর অভিযোগ, ''পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র ধর্ষণ, খুন হচ্ছে। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম সব জায়গায় নারীর নির্যাাতিতা হচ্ছে। তৃণমূলের আমলে প্রতিদিন মেয়েদের জন্য মৃত্যু বা ধর্ষণ অপেক্ষা করছে।'' 

আরজি কর প্রসঙ্গে অধীর বলেছেন, ''মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় পুলিশ ও প্রশাসনের কাছ থেকে গ্যারান্টি পেয়েছেন, এই মামলায় তারা যা করার করে দিয়েছে, আর কিছু হওয়ার নয়।  মুখ্যমন্ত্রী হাইকোর্টে যাচ্ছেন, অথচ তিনি জানেন, ঠিকভাবে তদন্ত তিনি করেননি, পুলিশ করেনি। একটা গাছকে গোড়া থেকে কেটে দিয়ে উপর থেকে জল ঢালার চেষ্টা করছে।''

অধীর বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী অপরাধীর ফাঁসির শাস্তি দাবি করে মানুষকে বোকা বানাবার চেষ্টা করছেন। শাস্তি দিতে হলে তদন্ত করতে হতো। আপনি তো তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করেছেন। এই পুলিশ গোয়ালপোখরে ৪৮ ঘণ্টায় অপরাধীদের ধরে ফেলে। তারা আরজি করে কিছু করতে পারলো না?''

নেপথ্যের কারণ

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আরজি কর-কাণ্ডের অপরাধী সঞ্জয় রায় একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার অঙ্গ। অপরাধাদের যে রাজনীতিকরণ হয়েছে, সেখান থেকে তারা শক্তি পাচ্ছে। তার জেরে তারা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। সঞ্জয় রায় আরজি কর কাণ্ডের দিন যখন রাতে বেশ কিছুটা দূর থেকে হাসপাতালে এসেছে, তখন ১২ বার ট্রাফিক সিগন্যাল ভঙ্গ করেছে। বোঝা যাচ্ছে, সে বেপরোয়া, ট্রাফিক আইনের পরোয়া করতো না।''

শুভাশিস মনে করেন, ''এই অপরাধগুলো চেনা পরিবেশে হচ্ছে। কাজের জায়গা, বাড়ি, পাড়ার চেনা পরিবেশে। সেটাও একদিকে যেমন চিন্তার কথা, তেমনই অপরাধীদের বেপরোয়া মনোভাবের পরিচায়ক। এগুলো রাজনীতি, বাণিজ্যজগত, অপরাোধীদের যোগের কথাটা মনে করিয়ে দিচ্ছে।''

সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী মনে করেন, ''আরজি করে নারী চিকিৎসককে হত্যা হলো একটি প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা। এর সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত ছিল। বাকিদের আড়াল করার চেষ্টাও একটা প্রাতিষ্ঠানিক চেষ্টা।'' তিনি মনে করছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনটা হলো অপরাধীদের জোরের জায়গা।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর চিঠি

গত বছর ২৫ অগাস্ট কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ''পশ্চিমবঙ্গে ৪৮ হাজার ছয়শ ধর্ষণ ও পকসোর অধীনে মামলা বকেয়া আছে, তারপরও কেন ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশ্যাল কোর্ট করা হচ্ছে না?'' পকসো মানে শিশু ও নাবালকদের যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করার আইন।

পশ্চিমবঙ্গে ২০টি পকসো আদালতসহ ১২৩টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।  কিন্তু ২০২৩ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত একটি কোর্টও চালু হয়নি।

মন্ত্রী লিখেছিলেন, ''২০২৩ সালের ৬ জুন পশ্চিমবঙ্গ সরকার চিঠি দিয়ে জানায়, তারা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট শুরু করতে দায়বদ্ধ।  ২০২৪ সালের ৩০ জুনের হিসাব, পশ্চিমবঙ্গে ১৭টি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত চালু করার কথা ছিল। তার মধ্যে ছয়টি পকসো আদালতচালু হয়েছে। আরো ১১টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।'' 

জিএইচ/এসিবি