পশ্চিমবঙ্গে পিছিয়ে পড়েছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা: প্রতিবেদন
২১ জানুয়ারি ২০২৩অতিমারি কালে মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ ছিল৷ এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারেনি৷ এদের একাংশ পড়াশোনা চালিয়েছে অনলাইনে৷ অতিমারি কাটিয়ে স্কুল শুরু হওয়ার পর ভর্তি বেড়েছে, শুরু হয়েছে নিয়মিত পঠনপাঠন৷ কিন্তু প্রায় বছর দুয়েক পড়াশোনা বন্ধ থাকার ফল নেতিবাচক হতে পারে, এমনটা আশঙ্কা করেছিলেন শিক্ষাবিদরা৷
তাদের আশঙ্কার সঙ্গে মিলে গেছে একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন৷ চলতি সপ্তাহে ‘প্রথম' নামক সংস্থা তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, শিক্ষার্থীরা তাদের এক ক্লাস নীচের পাঠ্যপুস্তক গড়গড় করে পড়তে পারছে না৷ সাধারণ যোগ-বিয়োগ করতেও বেগ পেতে হচ্ছে তাদের৷
দ্বিতীয় শ্রেণির বই দেওয়া হয়েছিল তৃতীয় শ্রেণির ছেলেমেয়েদের৷ প্রতি ১০ জনে মাত্র তিন জন ঠিকঠাক রিডিং পড়তে পেরেছে৷ বাকিরা পড়তে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে, উচ্চারণে সমস্যা হচ্ছে৷ সাধারণ যোগ-বিয়োগ করতে দিয়েছিলেন সমীক্ষকরা৷ এ ক্ষেত্রেও প্রতি ১০ জনে চার জন শিক্ষার্থী সেটা পারেনি৷
অথচ রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ২০২২ সালে ৬-১৪ বছর বয়েসিদের মধ্যে ৯২ শতাংশের বেশি পড়ুয়া স্কুলে ভর্তি হয়েছে৷ উপস্থিতির হার ২০১৮ সালের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে৷ এখন পড়াশোনা চললেও মাঝের দু'টি বছরে যে তারা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে, তা সমীক্ষা থেকে বোঝা যাচ্ছে৷
স্কুলে ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়লেও পড়ুয়ারা কি সেখানকার শিক্ষকদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পাচ্ছে? ‘অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অব এডুকেশন' শীর্ষক প্রতিবেদনটি অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়ারা গৃহশিক্ষকদের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে৷ এ রাজ্যে ৭৮ শতাংশের বেশি ছাত্রছাত্রী প্রাইভেট টিউশনের উপর নির্ভর করে৷
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ও বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী প্রতি ৩০ জন ছাত্রের জন্য এক জন শিক্ষক থাকতে হবে৷ নইলে কীভাবে পড়ানো সম্ভব? প্রাথমিকে ১ লাখ ৯০ হাজার শিক্ষক পদ খালি৷ অথচ ১১ হাজারের কিছু বেশি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছে৷''
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন৷ খোদ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ তার আমলের একাধিক কর্তা এখন জেলে৷ নিয়োগ ঘিরেও অনিশ্চয়তা রয়েছে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরীর আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ বাড়ানো দরকার৷ স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতিতে সরকার কী করছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ৷''
অনেক শিক্ষকই পাশ-ফেল প্রথার বিলোপকে দায়ী করছেন৷ তাদের মতে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়া হয় বলে পড়াশোনার তাগিদ কমে গিয়েছে৷ যদিও প্রাইভেট টিউশনের ক্ষেত্রে ঢিলেমির সুযোগ কমে যায়, তিন চতুর্থাংশের বেশি পড়ুয়া টিউশন নিতে পারে?
শিক্ষক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক কার্তিক মান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কত শতাংশ অভিভাবকের টিউশন পড়ানোর আর্থিক সামর্থ্য আছে, সেটা দেখতে হবে৷ শহরে এর হার কিছুটা বেশি হলেও গ্রামের ছবিটা আলাদা৷ সঙ্গতি থাকলে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করেন৷''