1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে রাম-উন্মাদনা, কী বলছেন বুদ্ধিজীবীরা

২৪ জানুয়ারি ২০২৪

অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের জের ভালোভাবেই পড়লো কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে। তিন দশকের উপর ধরে যে রাজ্য শাসন করেছেন বামপন্থিরা, সেখানে এই ছবি অনেকের কাছেই অচেনা লেগেছে।

https://p.dw.com/p/4bcAN
কলকাতায় রামমন্দির উদযাপন
অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের জের পড়েছে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গেছবি: Satyajit Shaw/DW

নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কলকাতা এখন আমূল বদলে গিয়েছে। তাই ঠিক কোনটা কলকাতার সংস্কৃতি, সেটা বুঝতে পারি না। এদিনের ছবিটা দেখে সেটা আবার মনে হল।" 

তবে শিক্ষাবিদ ড. পবিত্র সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কলকাতার দৃশ্য দেখে আমার অস্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। শিক্ষিত মানুষ মানেই চেতানাসম্পন্ন, এটা ভাবার কারণ নেই। বিশেষ করে রাজনীতি যেখানে থাকে। বাবরি মসজিদ যারা ধ্বংস করেন, তাদের অন্যতম নেতা ছিলেন বিজেপির মুরলী মনোহর জোশী।  পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট জোশী বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার শিষ্য ছিলেন। তাই এসব দেখে আমার আর অবাক লাগে না।" 

চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত পুরো ঘটনাক্রমে বিরক্ত। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "স্কুল-কলেজে গেলে মানুষের বুদ্ধি হয় না। মানুষ নিজের ভালোটা বোঝে। তা সত্ত্বেও যদি এই ছবি দেখা যায়, তা হলে কিছু বলার নেই। আমাদের করের টাকা খরচ হলো, সেটাই ব্যাপার। এতে সত্যি আমাদের কিছু যায়-আসে না।" 

এই উন্মাদনা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছেন বিশিষ্টরা। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, "এই প্রবণতা তো ধীরে ধীরে তৈরি করা হয়েছে, তাই সহজে থামবে না। তবে যারা মনে করেন, ভক্তিতে মুক্তি নয়, যুক্তিতে মুক্তি, তারা যদি কেউ কিছু করেন, তা হলে এই ঢেউ থামানো যেতে পারে।" 

রামপুজোর উন্মাদনা

যে শহরে দুর্গা বাকালীপুজো ঘিরে উৎসবের মেজাজ দেখা যায়, তাযেন বদলে গিয়েছিল সোমবার। দিকে দিকে ছিল রামপুজোর উন্মাদনা। গেরুয়া পতাকা,ফেস্টুনে সেজেছিল মহল্লা। পাড়ায় পাড়ায়পুজোর পর প্রসাদ বিতরণ করা হয়। ছোট আকারে হয় এলাকা পরিক্রমা। 

শহরের বিভিন্নসরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল রামপুজোর কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। শহরের প্রায় সববেসরকারি হাসপাতালে স্থায়ী মন্দির রয়েছে। সেখানে সাধারণভাবে রাধাকৃষ্ণ, গণেশ, নারায়ণেরবিগ্রহে নিত্যপুজো হয়। সেই মন্দিরগুলিতে কর্তৃপক্ষ গতকাল আয়োজন করেছিলেন রামপুজোর। অন্য দেবতার বিগ্রহের পাশে রামের ছবি বসিয়ে, পুরোহিত ডেকে পুজোর আয়োজন করা হয়। 

অযোধ্যায় মুসলমানেরা যেমন আছেন

কেন্দ্রীয় সরকারেরনিয়ন্ত্রণাধীন বিআর সিং হাসপাতাল ও জোকা ইএসআই হাসপাতালে পুজো হয়। এই দুইটি হাসপাতালে বহির্বিভাগের চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ থাকার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে দূরদূরান্ত থেকে ডাক্তার দেখাতে আসা অনেক রোগী ও তার পরিবার হয়রান হয়েছেন।

প্রশ্ন উঠেছে,অযোধ্যায় মন্দির উদ্বোধন হচ্ছে বলে কলকাতায় কেন জরুরি পরিষেবা বন্ধ থাকবে? ডা. অর্জুনদাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ব্যক্তিগতভাবেধর্মাচরণ কেউ করতেই পারেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে কিছু বলার নেই। তবেহাসপাতালে ধর্ম বিষয়টা থাকা উচিত নয়, যদিও বেশিরভাগ জায়গায় থাকে। থাকলে সব ধর্মের জন্যই প্রার্থনার জায়গা থাকা উচিত।যেহেতু অসুস্থতার সময় মানুষ মানসিকভাবে খুব ভঙ্গুর জায়গায় থাকে।" 

ছুটির মেজাজ 

রাম মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে সোমবার কলকাতার নামজাদা বেসরকারি স্কুলে ছুটি দেয়া হয়েছিল। যেগুলি খোলা ছিল, সেখানেও পড়ুয়াদেরহাজিরা ছিল কম। রাস্তাঘাট ও গণপরিবহন ছিল কিছুটা ফাঁকা। ট্রেন ও বাসে ভিড়অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। অতি ব্যস্ত হাওড়া ও শিয়ালদা স্টেশনের বাইরেঅন্যদিনের পরিচিত ভিড় ছিল না। 

যদিও রাজ্য সরকারেরঅফিসে হাজিরা ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। বিজেপি দাবি করলেও সোমবার রাজ্যে ছুটিঘোষণা করা হয়নি। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করেছিল।  

অল বেঙ্গল সেভএডুকেশন কমিটির সহ-সভাপতি, অধ্যাপক তরুণ নস্করবলেন, "ভারত ধর্মনিরপেক্ষদেশ। সেখানে কোনো একটি বিশেষ ধর্মের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছুটি কেন থাকবে? এটা তো কোনো উৎসব নয়! এতে কর্মদিবস শুধু নষ্ট হলো না, মানুষের মধ্যে একটা বিভাজন তৈরি করা হল।" 

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য