1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে শুরু বিজেপির রাজনৈতিক রথযাত্রা

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

নির্বাচনের মুখে পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রা শুরু করল বিজেপি। মোট পাঁচটি রথ বের হবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।

https://p.dw.com/p/3p5v6
BJP Unterstützer
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি পাঁচটি রথযাত্রা বের করছে। ছবি: DW/P. Mani

পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিজেপির রথযাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে। গত শনিবার প্রথম রথটি বের হয়েছে নবদ্বীপ থেকে। যাত্রার উদ্বোধন করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। চলতি সপ্তাহেও আরো রথযাত্রার উদ্বোধন হওয়ার কথা। নির্বাচনের আগে বিজেপির এই রথযাত্রা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন মোড় তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এই রথযাত্রাতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজেপি নেতাদের রাজ্যে উড়িয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সকলেরই এতে যোগ দেওয়ার কথা।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পাঁচটি সাংগঠনিক জোন আছে। পাঁচটি জোন থেকে পাঁচটি রথ বের করার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। পাঁচটি রথ রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকার মধ্য দিয়ে যাবে। প্রায় প্রতিদিনই এই রথযাত্রাীকে কেন্দ্র করে এক বা একাধিক সভার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। সেই সভাগুলিতেই কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের যোগ দেওয়ার কথা।

নির্বাচনে রথযাত্রা বিজেপির রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে উত্তর ভারতে, বিশেষ করে হিন্দি বেল্টে বিজেপি নির্বাচনের আগে রথযাত্রা করেছে। মূলত একটি বাসকে রথ হিসেবে সাজানো হয়। বাসের উপর একটি স্বয়ংক্রিয় মঞ্চ তৈরি করা হয়। নেতারা ওই মঞ্চ থেকে ভাষণ দেন। বাসটির একটি নির্দিষ্ট রুট থাকে। বাসের সামনে এবং পিছনে গাড়ি এবং বাইক নিয়ে কর্মীরা যোগ দেন। অর্থাৎ, একাধিক দিন ধরে মিছিল এবং জনসভা হয় এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগেও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাত্রার অনুমতি দেননি। যা নিয়ে দীর্ঘ দিন কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও চলেছিল। সে সময় নির্বাচনী সভায় নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা অভিযোগ করেছিলেন, ভয় পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের রথযাত্রা করতে দিচ্ছেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য ছিল, বিজেপির রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াতে পারে। যদিও বিজেপি সে কথা কখনোই মানতে চায়নি।

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, ২০১৯ সালে বিজেপিকে রথযাত্রা করতে না দিয়ে মমতা ভুল রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মানুষের ভাবাবেগ বিজেপির দিকে গিয়েছিল। সম্ভবত অতীতের সেই ভুল থেকে এবার শিক্ষা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবছর বিজেপির রথযাত্রায় রাজ্য সরকার কোনোরকম বাধা দেয়নি। এর পিছনে প্রশান্ত কিশোরের হাত রয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। প্রশান্ত কিশোরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আইপ্যাকের এক কর্মী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার এবার বিজেপির কোনো প্রচারেই হস্তক্ষেপ করবে না। নেগেটিভ প্রচারের কোনো সুযোগই তাদের দেওয়া হবে না।

প্রশ্ন হলো, বিজেপির রথযাত্রা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে? রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা ডয়চে ভেলেকে অফ দ্য রেকর্ড বলেছেন, রাজ্য সরকার রথযাত্রায় বাধা দিলে বিজেপির লাভ হতো বেশি। গতবার বিজেপি সেই লাভ পেয়েছে। তবে এবারও রথযাত্রা থেকে বিজেপির লাভ হবে বলেই তাঁর ধারণা। একমাসে রাজ্যের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে বিজেপির রথ ঘুরবে। সঙ্গে জনসভা হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা দেবেন। ফলে প্রচারের সমস্ত আলো বিজেপির দিকে থাকবে বলে তিনি মনে করেন।

তৃণমূল নেতা সৌগত রায় অবশ্য মনে করেন, এ সব রথযাত্রা করে বিজেপি শেষ পর্যন্ত বিশে সুবিধা করতে পারবে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে রথযাত্রার প্রভাব হিন্দি বলয়ের মতো হবে না।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ায় কি না, সেটাই এখন দেখার। যদি তেমন কোনো ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে নির্বাচনের ইস্যুই ঘুরে যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন। তবে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো সম্ভাবনা রাজ্যে তৈরি হয়নি।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷