পাঁচ বছরের মেয়াদ নিয়ে যদি এবং কিন্তু
২২ এপ্রিল ২০১৩আবদুল হামিদ সংবিধানের ৫০ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে শপথ গ্রহণের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন৷ তাই বর্তমান সরকারের শেষ আট মাস এবং পরবর্তী সরকারের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে তাঁর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের কথা৷ জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই পাঁচ বছরে সংবিধানের ৫২ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একমাত্র অভিশংসন ছাড়া তাঁকে অপসারণের সুযোগ নেই৷ অবশ্য অভিশংসনও প্রায় অসম্ভব৷ কারণ সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের জন্য যে অভিশংসনের কথা সংবিধানে বলা হয়েছে, সেই অভিযোগ আনতেই সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বাক্ষর লাগবে৷ স্পিকারের কাছে পাঠানো অভিশংসন প্রস্তাবে সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের বিবরণ থাকতে হবে৷ শুধু তাই নয়, অভিশংসন করতে সংসদের কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট লাগবে৷
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসে তাহলে যারা ক্ষমতায় আসবে এবং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ –উভয়ের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে৷ তিনি যতই নিরপেক্ষ হন বা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান, তাঁর সে সুযোগ নেই৷ কারণ মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি কাজ করেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে৷ এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ তাঁর নেই৷ এমনকি তাঁর অফিসিয়াল বক্তব্যও মন্ত্রিসভা ঠিক করে দেবে৷ তাই বিপরীত ঘরানার সরকার ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতি বিব্রতকর হবে – এটাই স্বাভাবিক৷ তিনি বলেন, এর আগে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে যাওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল৷ এছাড়া, বিএনপির শাসনামলে তখনকার রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের কারণে পদত্যাগে করতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ সুতরাং আগামী নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসে তার উপরই নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন কিনা৷ হাফিজুর রহমান বলেন, অভিশংসনের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হলো পরবর্তীতে যারা ক্ষতায় আসবে তারা তাঁকে চাইবেন কি চাইবেন না৷
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, আগামী নির্বাচনে কারা ক্ষমতায় আসবে তার আগে নির্বাচন কিভাবে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে৷ বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না৷ স্বাভাবিকভাবেই, এ নিয়ে এখন রাজনৈতিক সংকট চলছে৷ এই সংকট নিরসনে নতুন রাষ্ট্রপতি কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন না৷ হান্নান শাহ বলেন, নতুন রাষ্ট্রপতি ভালো মানুষ এবং ভালো রাজনীতিদি হলেও আওয়ামী লীগের চিন্তা বা পরামর্শের বাইরে তাঁর কিছু করার নেই৷ সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদ অলংকারিক৷ রাষ্ট্রে তাঁর নিজস্ব কোনো মতামত বা ক্ষমতা নেই৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরমর্শে কাজ করেন৷ তাই আওয়ামী লীগ যা চাইবে তাই তাঁকে করতে হবে৷
তিনি বলেন, তাদের দাবি ছিল সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজনকে রাষ্ট্রপতি করার৷ কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি৷ এ থেকেই বোঝা যায় আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য৷ যদি সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হতো, তাহলে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তাঁর ভূমিকা থাকার আশা থাকত৷ অন্তত তিনি সমাধানের একটা ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিতে পারতেন৷ আর তা হলে কোন দল আগামীতে ক্ষমতায় আসবে – রাষ্ট্রপতির মেয়াদের সঙ্গে এই প্রশ্নটি আর আসত না৷