পাকিস্তান: অগুনতি সন্ত্রাসী হামলার একটি দশক
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সঙ্গীদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে যোগ দেয়ার পর, চড়া মূল্য দিতে হয়েছে পাকিস্তানকে৷ উগ্রপন্থিদের হাতে দেশটির কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ ছবিঘরে দেখুন সেই মর্মান্তিক কাহিনি৷
২০০৭ – সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তনের দিন করাচিতে হামলা
২০০৭ সালের ১৮ অক্টোবর করাচিতে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর গাড়িবহরে জোড়া বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ সে সময় দীর্ঘ আট বছর পর দেশে ফিরছিলেন তিনি৷ হামলায় বেনজির বেঁচে গেলেও, প্রাণ হারায় ১৩৯ ব্যক্তি৷ কিন্তু এর মাত্র দু’মাস পর, ২৭ ডিসেম্বর, রাওয়ালপিন্ডিতে অপর এক হামলায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী৷
২০০৮ – ওয়াহ বোমা হামলা
ওয়াহ-তে অবস্থিত ‘পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিস’-এ জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারায় ৬৪ ব্যক্তি৷ ২০০৮ সালের ২১ আগস্টের সেই হামলাই এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানে কোনো সামরিক স্থাপনায় সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ (টিটিপি) সে সময় ঐ হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷
২০০৮ – রাজধানীর হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত মারিয়ট হোটেলে বিস্ফোরকভর্তি ট্রাক দিয়ে হামলা চালানো হয়৷ ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের সেই হামলায় প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৬০ ব্যক্তি, আহত ২০০৷ হতাহতদের মধ্যে ২০ জন বিদেশিও ছিলেন৷
২০০৯ – পেশোয়ারে হামলা
পাকিস্তানের পেশোয়ারে নারী ও শিশুদের বাজার হিসেবে পরিচিত ‘মিনা বাজারে’ একটি গাড়ি বোমা হামলায় ১২৫ ব্যক্তি নিহত ও ২০০ ব্যক্তি আহত হয়৷ পাকিস্তান সরকার এই হামলার পেছনে তালেবান জড়িত বলে দাবি করলেও, জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান এবং আল-কায়দা – উভয়েই সেই হামলার দায় অস্বীকার করে৷
২০১০ – ভলিবল ম্যাচে আত্মঘাতী হানা
পাকিস্তানের বানুর একটি গ্রামে ভলিবল খেলা চলাকালে আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারায় ১০১ ব্যক্তি৷
২০১১ – চারসাদার পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা
পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখার চারসাদা জেয়া একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জোড়া বোমা হামলায় ৯৮ ব্যক্তি নিহত ও ১৪০ জন আহত হয়৷ ২০১১ সালে ১৩ মে ক্যাডেটরা যখন প্রশক্ষিণ শেষে দশদিনের ছুটিতে নিজ নিজ বাড়ি যাওয়ার পথে বাসে উঠছিল, তখন হামলার ঘটনাটি ঘটে৷ বলা হয়ে থাকে, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই নাকি ঐ হামলা চালায় তালেবান৷
২০১৩ – পেশোয়ারে চার্চে বোমা হামলা
২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পেশোয়ারের ‘অল সেইন্ট চার্চে’ জোড়া আত্মঘাতী হামলায় ৮২ ব্যক্তি প্রাণ হারায়৷ ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ বা টিটিপি সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জুনদাল্লাহ সেই হামলার দায় স্বীকর করে৷
২০১৪ – পেশোয়ারে স্কুলে হত্যাযজ্ঞ
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর টিটিপি-র সাতজন বন্দুকধারী পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলা চালায়৷ তারা ১৫৪ ব্যক্তিকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ১৩২টি শিশু ছিল৷ পাকিস্তানের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা৷
২০১৫ – করাচিতে বাসে হামলা
২০১৫ সালের ১৩ মে আটজন বন্দুকধারী করাচিতে একটি বাসে হামলা চালিয়ে ৪৬ ব্যক্তিকে হত্যা করে৷ নিহতদের সবাই শিয়া মুসলমান ছিল৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করে জুনদাল্লাহ বা ‘আল্লাহ-র সেনা’ নামের জঙ্গি গোষ্ঠী৷
২০১৬ – হাসপাতালে বোমা হামলা
চলতি বছরের ৮ আগস্ট পাকিস্তানের কোয়েটায় সরকারি হাসপাতালে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং গুলিতে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়৷ নিহতদের অধিকাংশই আইনজীবী, যাঁরা অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত বেলুচিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিলাল আনওয়ার কাসির মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন৷