পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে পারেনি ভারত
১৮ অক্টোবর ২০১৬ভারতের গোয়ায় সদ্য সমাপ্ত ব্রিকস ও বিমস্টেক গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলনের প্রারম্ভিক এবং সমাপ্তি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী সীমান্তপারের সন্ত্রাস এবং জঙ্গি কার্যকলাপে পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদত দেবার অভিযোগে ইসলামাবাদকে চাঁছাছোলা ভাষায় বিদ্ধ করে গেছেন৷ সম্ভবত মোদী ভেবেছিলেন, পাকিস্তানের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ভন্ডুল করে পাকিস্তানকে যেভাবে একঘরে করতে অনেকাংশে সফল হয়েছেন, তেমনি গোয়ার বৃহত্তর ব্রিকস ও বিমস্টেক মঞ্চেও লিখিতভাবে পাকিস্তানকে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের মদতদাতা দেশ হিসেবে কোণঠাসা করতে পারবেন৷ ভেবেছিলেন চীন ও রাশিয়ার দিক থেকে কিছুটা ইতিবাচক সাড়া পাবেন৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি৷ চীন ও রাশিয়ার আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি৷ সম্মেলন শেষে গৃহীত গোয়া ঘোষণাপত্রে এ বিষয়ে পাকিস্তানের নামগন্ধ নেই৷ যদিও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কড়া নিন্দা করা হয়েছে৷ ঘোষণাপত্রে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে ইসলামিক স্টেট এবং সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠনগুলির উল্লেখ থাকলেও পাকিস্তানভিত্তিক জয়সে মহম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার নাম নেই ঘোষণাপত্রে৷
রাশিয়ার সঙ্গে ১৬টি বিপুল অঙ্কের প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য সহযোগিতা চুক্তি সই করে দিল্লির হয়ত মনে হয়েছিল,অর্থনৈতিক তথা বাণিজ্যিক স্বার্থে সন্ত্রাস ইস্যুতে পাকিস্তানকে দোষী সাব্যস্ত করতে ভারতের অবস্থানকে কিছুটা হলেও মস্কো সমর্থন দেবে৷ বেইজিংয়ের মতোই সে পথে পা বাড়ালো না মস্কো৷ অবশ্য মস্কোর সিরিয়া নীতিতেও ভারত সায় দেয়নি৷ এটা কি তারই জবাব?
হতে পারে দিল্লির ওয়াশিংটনঘেঁষা নীতিও একটা কারণ. অর্থাত, ব্রিকস ও বিমস্টেক সম্মেলনে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সব মিলিয়ে সীমান্ত পারের সন্ত্রাসে মদতদাতা হিসেবে পাকিস্তানকে এককভাবে তুলে ধরলেও আপাতত বৃহত্তর মঞ্চে পাকিস্তানকে একঘরে করা মোদীর পক্ষে সম্ভব হলো না৷ এমনটাই মনে করছেন ভারতের কূটনৈতিক মহল৷
বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলির নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও পাকিস্তানের জঙ্গি নীতি চড়া সুরে ও কড়া ভাষায় তুলে ধরেন মোদী৷ বলেন, সন্ত্রাস অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এ বড রকমের হুমকি৷ কিন্তু বাংলাদেশ ও ভুটান ছাড়া তেমন করে ভারত অন্য দেশগুলিকে পাশে পায়নি৷ তবে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি জঙ্গি হামলার নিন্দাতে কিছুটা সমর্থন আদায় করতে পেরেছে দিল্লি৷ ভারতীয় কূটনীতিবিদদের একাংশ অবশ্য মনে করেন, যেসব দেশকে ভারতের মতো সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়নি, সেইসব দেশের পক্ষে নীরব থাকাটাই স্বাভাবিক৷
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানি অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় অবশ্য এটাকে মোদীর ব্যর্থতা বলতে নারাজ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘মনে রাখতে হবে ব্রিকস বা বিমস্টেক আসলে এক অর্থনৈতিক সহযোগিতা-ভিত্তিক সংস্থা৷ তবু মোদী সন্ত্রাসবাদকে শীর্ষ ইস্যু বলে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন৷ ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে সন্ত্রাস যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা মোদী বোঝাতে পেরেছেন৷ সেখানে মোদী সফল৷ চুড়ান্ত ঘোষণাপত্রে না থাকাতে কিছু এসে যায় না৷ চীন ও রাশিয়া যে তাতে সায় দেয়নি, সেটাও আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে৷ সেটা অযৌক্তিক নয়৷''
রাষ্ট্রবিজ্ঞানি অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় আরো বলেন, ‘‘তাছাড়া জাতিসংঘ যেসব সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে জয়সে বা লস্করের নাম নেই৷ কাজেই সেগুলিকে কোনো দেশ সন্ত্রাসী বলে স্বীকার না করলে বলার কিছু নেই, কারণ, ব্রিকস ও বিমস্টেকের সদস্য দেশগুলি মনে করে , সন্ত্রাস ইস্যুতে পাকিস্তানকে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেওয়া উচিত৷ সরাসরি একঘরে করতে গেলে সন্ত্রাসবাদের বিপদ আরও বাড়বে বই কমবে না৷ কাজেই পাকিস্তানকে তার কথা বলতে দেওয়া উচিত, কারণ, ব্রিকস বা বিমস্টেক অন্য দেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক ইস্যু আলোচনার মঞ্চ নয়৷''
ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে আছে ৫টি দেশ৷ ভারত ছাড়াও আছে ব্রাজিল, চীন, রাশিয়া ও দক্ষিন আফ্রিকা৷ আর বঙ্গোপসাগরয় তীরবর্তি দেশগুলির বহুক্ষেত্রীয় কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা ইনিশিয়েটিভ. সংক্ষেপে ‘বিমস্টেক'ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে আছে ৬টি দেশ, অর্থা' ভারত, মিয়ানমার,থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী