পাকিস্তানে ওষুধের আকাশছোঁয়া দাম, রোগীদের মহাসংকট
২৮ অক্টোবর ২০২৩৩৫ বছর বয়সি ইয়াসির আলির দৈনিক আয় বাংলাদেশি টাকায় ৪৪০ টাকারও কম৷ পেশায় দিনমজুর ইয়াসিরের মৃগী রোগ আছে, ফলে তাকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়৷
ডয়চে ভেলেকে ইয়াসির জানান, মৃগীরোগের ওষুধের একটি পাতার দাম বাংলাদেশি টাকায় ১০০ টাকার সমান৷ কিন্তু কালো বাজারে একই ওষুধের দাম প্রায় পাঁচগুণ৷ এর কারণ, বাজারে বর্তমানে ওষুধের চরম সংকট৷
গত দুই দশক ধরে ওষুধের ব্যবসা করা খালিম আঞ্জুমও এই সংকটে আছেন অনেক দিন ধরে৷
তিনি জানান, কাঁচামাল কিনতে কয়েক বছর আগের তুলনায় কয়েকগুণ দাম মেটাতে হয় এখন৷
দাম কবে কমবে তার কোনো ঠিক নেই, জানান তিনি৷ আঞ্জুম আরো বলেন, ‘‘এই সংকট আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ৷''
সংকটের সুযোগ নিচ্ছে যারা
চলমান সংকটের অন্যতম কারণ মুদ্রাস্ফীতি৷ ওষুধ বা ওষুধের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাকিস্তানকে আমদানি করতে হয়৷ পাকিস্তানি রুপির দাম কমতে থাকায় বিদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ওষুধ কেনা পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে৷
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাবেক সহকারী ড. ফয়সাল সুলতান বলেন, ‘‘এখন আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় বা জীবনদায়ী ওষুধ বাজারে বাজারে নেই বা থাকলেও খুবই কম আছে৷''
অনেকের মতে, এই সংকটকে আরো কঠিন করছে কিছু বিবেকহীন দালাল, যারা বেশি বেশি করে ওষুধ কিনে পরে তা চড়া দামে বিক্রি করে৷ এদের ‘ড্রাগ মাফিয়া' বলা হয় পাকিস্তানে৷
২০২৩ সালে গোটা পাকিস্তানজুড়ে এমন বেশ কয়েকটি চোরাই ওষুধের গুদামে অভিযান চালায় পুলিশ৷
হাসপাতালে নেই প্রাণরক্ষাকারী ওষুধ
কিন্তু সবচেয়ে খারাপ সময় আসে এ বছরের এপ্রিলে৷ তখন পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জরুরি ওষুধের দাম ১৪ শতাংশ বাড়ায়, অন্য ওষুধের জন্য দাম বাড়ে ২- শতাংশ৷
সেপ্টেম্বরে কার্যকর হওয়া এই নীতির প্রভাব পড়ে ৮০ হাজারেরও বেশি ওষুধের ওপর৷ কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত নতুন নয়৷ গত পাঁচ বছরে এমনভাবে দাম বেড়েছে ১৫বার৷ কিন্তু একধাপে এতটা দাম কখনোই বাড়েনি৷
আইনজীবী ও সমাজকর্মী নূর মেহেরের মতে, প্রভাব পড়ছে হাসপাতালগুলিতেও৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রায় একশটির কাছাকাছি প্রাণরক্ষাকারী ওষুধ পাচ্ছে না রোগীরা৷''
পাকিস্তানে প্রায় চার হাজার ফার্মেসির বৈধ কাগজপত্র আছে, কিন্তু ফার্মাসিস্টা অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্রায় এক লাখ ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ওষুধের ব্যবসা করছেন৷
পেশোয়ারের মতো শহরে অবৈধ ব্যবসায়ী বা দালালরা যে কোনো ওষুধ এনে দিতে পারে, সঠিক দামের বিনিময়ে৷
মুছে যাওয়ার পথে পাকিস্তানের ওষুধের ছোট ব্যবসাগুলি
কালো বাজারের রমরমার সময়ে সংকট বাড়ছে দেশের ওষুধ সংস্থাগুলোতে৷ সংকটের আগে পাকিস্তানে অন্তত ৬০০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানা ছিল৷ তবুও বিদেশি নির্ভরতা কমানো যায়নি, কারণ কাঁচামালের জন্য নির্ভর করতে হয়৷
আনাস আহমেদ/এসএস