শরিফ ফিরে আসায় খুশি ভারত
১৩ মে ২০১৩পাকিস্তানের নির্বাচনে পিএমএল (এন) নেতা নওয়াজ শরিফের জয়লাভে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁকে ভারত সফরের আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং৷ শুভেচ্ছা জানিয়েছে বিরোধী দল বিজেপিও৷ আর ভারতে নওয়াজ শরিফের পৈত্রিক ভিটায় মানুষজনের চোখে মুখে উপচে পড়া আনন্দ৷
নির্বাচনের আগে এবং পরে নওয়াজ শরিফ জোর দিয়ে বলেছেন, ১৯৯৯ সালের ছেঁড়া সুতো আবারো জোড়া দিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন পর্ব শুরু করবেন তিনি৷ কাশ্মীরসহ যাবতীয় ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রয়াসী হবেন৷ এমনকি, তিনি এ কথাও বলেছেন যে, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ এবং ১৯৯৩ সালে মুম্বই ধারাবাহিক বিস্ফোরণকাণ্ডে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিল, তার তদন্ত রিপোর্ট নতুন দিল্লির সঙ্গে ‘শেয়ার' করতেও তাঁর আপত্তি নেই৷
ভারতীয় পত্র-পত্রিকার হেডলাইনে ‘‘আমন কি আশা'', অর্থাৎ শান্তির আশা আবার স্থান পেলেও অতিরিক্ত প্রত্যাশা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে, অন্তত অতীত অভিজ্ঞতার কথা ভেবে৷ ভোটের সময় যা বলা হয়, ক্ষমতায় বসার পর পুরো প্রচ্ছদপট যায় পাল্টে৷ বেনাজির ভুট্টো ভোটের সময় ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ মীমাংসার কথা বলেছিলেন, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তিনি হয়ে যান সেনাবাহিনী, আইএসআই এবং মৌলবাদীদের হাতের পুতুল৷ তাদের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া কিছুই করতে পারেননি৷ ১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরিফ ও অটলবিহারি বাজপেয়ীর লাহোর বাসযাত্রা ভেস্তে গিয়েছিল সেনাবাহিনী নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ায়৷
ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, গদিতে বসার পর নওয়াজ শরিফের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তার মোকাবিলা করতে তিনি কতটা সফল হবেন – সেটাই আসল প্রশ্ন, বিশেষ করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রেক্ষাপটে৷ দুর্নীতি, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোর বেহাল দশা, আর্থিক ভাঁড়ার তলানিতে৷ তারওপর আছে তালিবানি সন্ত্রাস৷ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস দমনে কতটা সক্ষম হবেন তিনি, সেটাই হবে ভারতের চোখে নওয়াজ শরিফের সাফল্যের মাপকাঠি৷
তবে আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি করতে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো যে জরুরি, সেটা উনি ভালোই বোঝেন৷ নওয়াজ শরিফ নিজে একজন ব্যবসাদার৷ কাজেই এক্ষেত্রে তিনি স্বয়ং উদ্যোগী হয়ে ভারতকে সবথেকে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের মর্যাদা দেবেন বলে আশা করা যায়৷ অবশ্য যতক্ষণ তা বাস্তবে না হচ্ছে কিছুই বলা যায় না৷ কথায় বলে, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই''৷
ভারত-পাকিস্তান ঐতিহাসিক সম্পর্কের মাটিটা বড় জটিল৷ কোনো একজন নেতার পক্ষে নাটকীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়, যদি না দেশের রাজনীতির লাগাম সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে৷ অন্যদিকে, ভারতের মনমোহন সিং সরকারের অবস্থাও টলমল দুর্নীতি আর প্রশাসনিক দুর্বলতায়৷ সে জন্য আগামী বছরে সাধারণ নির্বাচনের আগে ভারত-পাক সম্পর্কে হয়ত গতি আসবে না৷ আর তাই সতর্ক পদক্ষেপই ফেলবে দিল্লি এবং ইসলামাবাদ, এমনটাই মনে করছেন ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷