1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানে নারীরা বিচার পান না

২৮ মে ২০২২

২০১৬ সালে পাকিস্তানের সোশাল মিডিয়া তারকা কান্দিল বালুচকে হত্যা করে তার ভাই মুহাম্মদ ওয়াসিম৷ ২০১৯ সালে ওয়াসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ আইনের ফাঁক গলিয়ে এই ফেব্রুয়ারিতে তিনি মুক্তি পেয়ে গেছেন৷

https://p.dw.com/p/4Bz4z
Pakistan Frauen protestieren gegen Ehrenmorde
ছবি: ARIF ALI/AFP/Getty Images

ফেসবুকে ছোট স্কার্ট পরে নাচের ভিডিও আপলোড করে আলোচিত হয়েছিলেন কান্দিল বালুচ৷ এসব কারণে পরিবারের সম্মানহানি হয়েছে ধরে নিয়ে কান্দিলকে মেরে ফেলা আবশ্যক হয়ে পড়েছিল বলে সেই সময় পুলিশকে জানিয়েছিলেন ওয়াসিম৷

ঐ হত্যাকাণ্ডের পর সমালোচনার ঝড় উঠলে সরকার অনার কিলিং আইনে কিছু পরিবর্তন এনেছিল৷ যেমন হতাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবার আত্মীয়-স্বজনকে ক্ষমা করতে পারবেন না৷ এছাড়া আদালতে বাইরে ‘ব্লাড মানি' দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করা যাবে না ইত্যাদি৷

কিন্তু যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর ওয়াসিমের আইনজীবীরা আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে ওয়াসিমের ক্ষেত্রে ঐ আইনের পরিবর্তনগুলো প্রযোজ্য হবে না৷ সে কারণে ওয়াসিমের মা তাকে ক্ষমা করে দিলে এই ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পান তিনি৷

কান্দিল বালুচের এই ঘটনা এটিই প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থা এমন যে, পুরুষরা নারীদের হত্যা ও ধর্ষণ করেও পার পেয়ে যান৷

অধিকারকর্মী নায়েব গোহর জান এএফপিকে বলেন, ‘‘পাকিস্তানে নারীর প্রতি অপরাধের শুরু থেকে পুলিশের কাছে মামলা করতে যাওয়া, এরপর বিচার প্রক্রিয়া- সবকিছু এমনভাবে সাজানো যে বিচার অধরাই থেকে যায়৷’’

আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, বিচার ব্যবস্থায় পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের উপস্থিতি এবং পর্যাপ্ত নারী আইনজীবী ও বিচারকের অভাবের কারণে অনার কিলিংয়ের রায়গুলো পালটে যাচ্ছে৷

পাকিস্তানের আদালতগুলোতে নারী বিচারকের সংখ্যা পুরুষদের এক পঞ্চমাংশেরও কম৷

পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে নারী ভুক্তভোগীরা সাধারণত বিচারের সুযোগ পান না৷ কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় মুরুব্বিরা (সবসময় পুরুষ হয়ে থাকে) সালিশ করে থাকেন৷ তারা সাধারণত নারীর প্রতি সহিংসতাকে ‘সম্মান' রক্ষার উপায় হিসেবে দেখে থাকেন৷

এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত বিচার হওয়ায় অনেকে এটি সমর্থন করেন৷ কিন্তু সেখানে সাধারণত আপিলের সুযোগ থাকে না৷

ভুক্তভোগীকে দোষী বানানোর চেষ্টা

খাদিজা সিদ্দিকিকে তার সাবেক ছেলেবন্ধু ২৩ বার ছুরিকাঘাত করে মৃত মনে করে ফেলে রেখে গিয়েছিল৷ এরপর তার বন্ধুটিকে হত্যা চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়৷ কিন্তু আপিল করে সে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল৷ পরে আবারও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়৷ পরে ভালো আচরণের যুক্তি দেখিয়ে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷

সিদ্দিকির ঘটনায় তাকেই দোষী প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে আইনজীবীর বলছেন৷

ভুক্তভোগীকে দোষ দেয়ার এমন ঘটনা পাকিস্তানে সাধারণ একটি বিষয়৷ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নারীর প্রতি সহিংতার জন্য মেয়েদের ‘খুব সামান্য পোশাক পরাকে' প্রায়সময় দায়ী করতেন৷ ২০২০ সালে একটি রাজ্যের পুলিশ প্রধান গণধর্ষণের শিকার এক নারী রাতে পুরুষ সঙ্গী ছাড়া গাড়ি চালাতে বের হওয়ায় তাকে ভর্ৎসনা করেন৷

আলোচিত হলে কাজ হয়

গতবছর সাবেক রাষ্ট্রদূতের কন্যা নুর মুকাদমকে অপহরণ করে হত্যা করেছিল তার ছেলেবন্ধু৷ তাকে গ্রেপ্তারের আট মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ সামাজিক মাধ্যমে মুকাদমের বন্ধুদের তৎপরতা এবং মুকাদম ও তার ছেলেবন্ধুর পরিচিতির কারণে এত অল্প সময়ে মামলার রায় এসেছে৷

অথচ মুকাদম হত্যা মামলার রায় যখন পড়া হচ্ছিল তখনও মুকাদম হত্যার কয়েকদিন আগে হত্যার শিকার হওয়া কুরাতুলাইন বালুচের মামলার বিচার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি৷

জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)