পাকিস্তানে নারীরা বিচার পান না
২৮ মে ২০২২ফেসবুকে ছোট স্কার্ট পরে নাচের ভিডিও আপলোড করে আলোচিত হয়েছিলেন কান্দিল বালুচ৷ এসব কারণে পরিবারের সম্মানহানি হয়েছে ধরে নিয়ে কান্দিলকে মেরে ফেলা আবশ্যক হয়ে পড়েছিল বলে সেই সময় পুলিশকে জানিয়েছিলেন ওয়াসিম৷
ঐ হত্যাকাণ্ডের পর সমালোচনার ঝড় উঠলে সরকার অনার কিলিং আইনে কিছু পরিবর্তন এনেছিল৷ যেমন হতাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবার আত্মীয়-স্বজনকে ক্ষমা করতে পারবেন না৷ এছাড়া আদালতে বাইরে ‘ব্লাড মানি' দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করা যাবে না ইত্যাদি৷
কিন্তু যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর ওয়াসিমের আইনজীবীরা আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে ওয়াসিমের ক্ষেত্রে ঐ আইনের পরিবর্তনগুলো প্রযোজ্য হবে না৷ সে কারণে ওয়াসিমের মা তাকে ক্ষমা করে দিলে এই ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পান তিনি৷
কান্দিল বালুচের এই ঘটনা এটিই প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থা এমন যে, পুরুষরা নারীদের হত্যা ও ধর্ষণ করেও পার পেয়ে যান৷
অধিকারকর্মী নায়েব গোহর জান এএফপিকে বলেন, ‘‘পাকিস্তানে নারীর প্রতি অপরাধের শুরু থেকে পুলিশের কাছে মামলা করতে যাওয়া, এরপর বিচার প্রক্রিয়া- সবকিছু এমনভাবে সাজানো যে বিচার অধরাই থেকে যায়৷’’
আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, বিচার ব্যবস্থায় পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের উপস্থিতি এবং পর্যাপ্ত নারী আইনজীবী ও বিচারকের অভাবের কারণে অনার কিলিংয়ের রায়গুলো পালটে যাচ্ছে৷
পাকিস্তানের আদালতগুলোতে নারী বিচারকের সংখ্যা পুরুষদের এক পঞ্চমাংশেরও কম৷
পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে নারী ভুক্তভোগীরা সাধারণত বিচারের সুযোগ পান না৷ কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় মুরুব্বিরা (সবসময় পুরুষ হয়ে থাকে) সালিশ করে থাকেন৷ তারা সাধারণত নারীর প্রতি সহিংসতাকে ‘সম্মান' রক্ষার উপায় হিসেবে দেখে থাকেন৷
এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত বিচার হওয়ায় অনেকে এটি সমর্থন করেন৷ কিন্তু সেখানে সাধারণত আপিলের সুযোগ থাকে না৷
ভুক্তভোগীকে দোষী বানানোর চেষ্টা
খাদিজা সিদ্দিকিকে তার সাবেক ছেলেবন্ধু ২৩ বার ছুরিকাঘাত করে মৃত মনে করে ফেলে রেখে গিয়েছিল৷ এরপর তার বন্ধুটিকে হত্যা চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়৷ কিন্তু আপিল করে সে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল৷ পরে আবারও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়৷ পরে ভালো আচরণের যুক্তি দেখিয়ে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷
সিদ্দিকির ঘটনায় তাকেই দোষী প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে আইনজীবীর বলছেন৷
ভুক্তভোগীকে দোষ দেয়ার এমন ঘটনা পাকিস্তানে সাধারণ একটি বিষয়৷ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নারীর প্রতি সহিংতার জন্য মেয়েদের ‘খুব সামান্য পোশাক পরাকে' প্রায়সময় দায়ী করতেন৷ ২০২০ সালে একটি রাজ্যের পুলিশ প্রধান গণধর্ষণের শিকার এক নারী রাতে পুরুষ সঙ্গী ছাড়া গাড়ি চালাতে বের হওয়ায় তাকে ভর্ৎসনা করেন৷
আলোচিত হলে কাজ হয়
গতবছর সাবেক রাষ্ট্রদূতের কন্যা নুর মুকাদমকে অপহরণ করে হত্যা করেছিল তার ছেলেবন্ধু৷ তাকে গ্রেপ্তারের আট মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ সামাজিক মাধ্যমে মুকাদমের বন্ধুদের তৎপরতা এবং মুকাদম ও তার ছেলেবন্ধুর পরিচিতির কারণে এত অল্প সময়ে মামলার রায় এসেছে৷
অথচ মুকাদম হত্যা মামলার রায় যখন পড়া হচ্ছিল তখনও মুকাদম হত্যার কয়েকদিন আগে হত্যার শিকার হওয়া কুরাতুলাইন বালুচের মামলার বিচার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)