পাকিস্তানে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭করাচির আরাকানাবাদ এলাকায় থাকেন রোহিঙ্গা মুফিজুর রেহমান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা হলেও বাংলায় কথা বলতে পারেন তিনি, এ কারণে স্থানীয়রা তাকে বাঙালি বলেই মনে করে৷ ‘‘তারা আমাকে পাকিস্তানি হিসেবে মেনে নেয় না৷'' জানালেন মুফিজুর৷ আরাকানাবাদের নাম হয়েছে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের নাম অনুসারে, যা বর্তমানে রাখাইন রাজ্য নামে পরিচিত৷ গত মাসের শেষের দিকে সেখানে সেনা অভিযানের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা৷
মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরবেও রোহিঙ্গারা বসবাস করছেন৷ পাকিস্তানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আড়াই লাখ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়৷ সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরুর পর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ কিন্তু মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে তাদের সাথে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তাতে এই প্রতিবাদ এক ধরনের ভণ্ডামি ছাড়া যেন কিছুই নয়!
নাসির আহমেদ আর একজন রোহিঙ্গা, যিনি আরাকানাবাদ বস্তিতে থাকেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‘আমরা বস্তিতে থাকি৷ এখানে জীবনযাপন ভয়াবহ৷'' একজন মানুষের যেসব মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তা এখানে নেই৷ আরাকানাবাদে নেই কোনো হাসপাতাল৷ ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকেন তাঁরা, ছোট ছোট বাড়িতে অনেক মানুষ একসাথে থাকতে হয়৷ একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে মুফিজুর রেহমান আরো ২০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে থাকেন৷
বার্মিজ মুসলিম কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নূর হুসাইন আরকানি জানালেন, আরাকানাবাদেই অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গার বাস৷ এদের বেশিরভাগই জেলে, কেউ কেউ পোশাক কারখানায় কাজ করে৷ মুফিজুর জানালেন, ‘‘আমি কখনো মিয়ানমারে ছিলামই না৷ আমার বাবা মিয়ানমার থেকে পাকিস্তানে এসেছিলেন৷ কিন্তু আমি টেলিভিশনে দেখেছি মিয়ানমারে কী ঘটছে৷''
অপর একজন রোহিঙ্গা রহমত আলীর বয়স ৭৫ বছর৷ ৭০ এর দশকে তিনি মিয়ানমার থেকে পাকিস্তানে এসেছিলেন৷ তিনি জানালেন এখনকার পরিস্থিতি সেসময়ের চেয়ে ভয়ংকর৷ তবে এও বললেন পাকিস্তানে থাকাটাও অনেক কষ্টকর৷ জানালেন, ‘‘আমি রাখাইনে থাকতাম, গণহত্যা শুরু হলে ৭০ এর দশকের শুরুতেই বাংলাদেশ হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে আসি৷ আমার এক মেয়ে জোহরা খাতুন এখনও ঢাকায় থাকে৷'' আলী বললেন, ‘‘আমি পাকিস্তানে আছি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, কিন্তু পাকিস্তান আমাকে নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নেয়নি৷ পাকিস্তানিদের কাছে আমরা বাঙালি এবং শরণার্থী৷''
তাঁর মতো আরও অনেক রোহিঙ্গা জানালেন যে পাকিস্তানে সরকারি চাকুরিতে আবেদন করার অনুমতিও তাঁদের নেই৷ এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয় না তাঁদের৷ করাচির এক রিকশাওয়ালাকে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাকিস্তানে রোহিঙ্গাদের কোনো স্থান নেই৷ তারা ভারতের গুপ্তচর৷ আমাদের দেশ থেকে তাদের বের করে দেয়া উচিত৷ কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে সঠিক আচরণই করছে৷ তারা তো পাকিস্তানি না৷''
শাহ মীর বালোচ/এপিবি
প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো, লিখুন নীচের ঘরে৷