পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের অন্যতম ঘাঁটি ফাটা
পাকিস্তানে ‘ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্টার্ড ট্রাইবাল এরিয়াস’ (ফাটা) এলাকাকে বিশ্বের ত্রাস বলা হয়৷ আল-কায়েদা ও তালেবানি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থলটি এখন খাইবার পাখতুন খোয়া প্রদেশে যুক্ত করা হচ্ছে৷ ছবিঘরে দেখুন এই এলাকার বিশেষত্ব৷
সবচেয়ে ভয়ানক জায়গা
অ্যামেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পাকিস্তানের এই ‘ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্টার্ড ট্রাইবাল এরিয়াস’ বা ফাটা এলাকাটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর এলাকা বলেছিলেন৷ এই পাহাড়ি এলাকাই তালেবান এবং আল-কায়দা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষিত ঘাঁটি৷
খাইবার পাখতুনের অংশ
এখন এই অর্ধস্বায়ত্ত এলাকাটিকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন (পাশতুন) খোয়া প্রদেশের অংশ করে দেওয়া হচ্ছে৷ এবার উপজাতি নিয়ম-কানুন আর চলবে না৷ এখন এখানে পাকিস্তান সরকারের প্রশাসন এবং নিয়মকানুন চালু হবে৷
সাতটা জেলা
আফগানিস্তানের সীমায় অবস্থিত পাকিস্তানের উপজাতি এলাকাটিতে সাতটা জেলাকে সাতটা এজেন্সি নামে চিহ্নিত করা হয়৷ সংঘবদ্ধভাবে প্রশাসিত এই উপজাতি এলাকাকেই ‘ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্টার্ড ট্রাইবাল এরিয়াস’ বা ইংরেজিতে ফাটা বলা হয়৷
কারও বশ্যতা পছন্দ নয়
ফাটা-র জনসংখ্যা কমপক্ষে ৫০ লক্ষ৷ এর মধ্যে পাখতুন বা পাশতুনের লোকই বেশি৷ ইংরেজ শাসন আমলেই এই এলাকাকে ‘ফাটা’ নাম দেওয়া হয়েছিল৷ এখানের পাঠান যোদ্ধারা নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল ৷
সস্তায় বন্দুক
এখনও পর্যন্ত এই এলাকা পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মাঝে এক ‘বাফার জোন’ হিসেবে আছে৷ এই এলাকা সস্তা বন্দুকের বাজার হিসেবে বেশ বদনাম কুড়িয়েছে৷ খোলা বাজারে আফিমের সঙ্গে চোরাই মালও বিক্রি হয়৷
উপজাতির রাজত্ব
১৯০১ সালে ইংরেজ কর্তারা এই এলাকার জন্য ‘ফ্রন্টিয়ার ক্রাইমস রেগুলেশন’ তৈরি করেছিলেন৷ এর উপর নির্ভর করেই রাজনীতিতে যুক্ত মানুষেরা এখানে শাসনের অধিকার পান৷ এমনকি এঁদের একজন ব্যক্তির অপরাধের সাজা পুরো গোষ্ঠীকে দেওয়ার ক্ষমতা আছে৷
স্বায়ত্ত শাসনের লোভ
১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের জন্মের পরেও ফাটা এলাকায় আগের মতোই শাসন চলতে থাকে, যেমনটা ইংরেজ আমলে চলছিল৷ পাকিস্তান সরকার এই এলাকার বাসিন্দাদের স্বায়ত্ত শাসনের লোভ দেখায়, যাতে কিনা এরা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়৷
উন্নতি হয়নি
স্বায়ত্তশাসনের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে এই এলাকাকে৷ এলাকার উন্নতির জন্য কোনো অনুদান এখানে কোনোদিনই পৌঁছাতে পারেনি৷ এর ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে এই এলাকার আকাশ পাতাল পার্থক্য হয়েছে৷
সন্ত্রাসের পীঠস্থান
বঞ্চিত মানুশের মধ্যেই হতাশা জন্মে৷ তাই এই এলাকা চরমপন্থার পীঠস্থান হয়ে দাঁড়াল৷ পাকিস্তান তো বটেই এমনকি প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানের সুরক্ষার জন্যও ফাটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল৷
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে যখন রাশিয়ার হামলা হলো, ফাটা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সিআইএ সমর্থিত মুজাহিদিন লড়াইয়ের মুখ্য ঠিকানা হয়ে দাঁড়াল৷ বিশ্বের সব ইসলামি যোদ্ধারা এখানে এসে পৌঁছাল, যাদের মধ্যে কিছু যোদ্ধা কিছুদিন পরে আল-কায়েদা তৈরি করল৷
চরমপন্থার আশ্রয়স্থল
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর যখন অ্যামেরিকা আফগানিস্তানে হামলা করেছিল, তখন ওখান থেকে তালেবান আর আল-কায়দা জঙ্গিরা এখানেই আশ্রয় নিয়েছিল৷ এখানেই জন্ম হয়েছে ‘তাহরিক-ই-তালেবান’-এর৷
ড্রোন হামলা
অ্যামেরিকা বহু বছর ধরে এই এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়ে জঙ্গি নিধন চালিয়েছে৷ অবশ্য পাকিস্তান সবসময় এরকম হামলাতে নিজের সার্বভৌম ক্ষমতা নষ্ট করা হচ্ছে বলে দাবি করে আসছে৷
পাকিস্তান সরকারের দাবি
পাকিস্তান সরকার অবশ্য বারবারই বলে আসছে যে এই এলাকায় সন্ত্রাসবাদী আশ্রয়স্থলগুলি ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু অ্যামেরিকার দাবি, আফগানিস্তানে নাটো এবং আফগান সেনার উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীরা ফাটাকেই আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে৷