পাখি রক্ষা করতে খরগোশ নিধন
১৩ মে ২০১১জেমস কুকের অভিযানের গল্প তো অনেকেরই জানা৷ সেই দুরন্ত অভিযানকারী অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকার মধ্যবর্তী এই ম্যাকুয়ারি দ্বীপে পৌঁছাবার অল্প দূরত্ব আগেই আবছা আবছা দেখলেন কোর্ট পরা সব ভদ্রলোক ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে৷ প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন কুক৷ তারপর তীরে নামার পর তাঁর সেই ভুল ভাঙলো৷ এগুলো কোন ভদ্রলোক নয়, এরা আসলে এক ধরণের পাখি৷ পাখা থাকলেও যাদের সমর্থ্য নেই উড়তে পারার, নীল আকাশে ঘুরে বেড়াবার৷ কিন্তু তাতে কি খুবই চমৎকার ভাবেই সাঁতার কাটতে তো পারে তারা!
সংখ্যাগরিষ্ঠ পেঙ্গুইনদের বসবাস বরফ আচ্ছাদিত অ্যান্টার্কটিকার দ্বীপগুলোতে৷ সেখানে পেঙ্গুইনের বেশ কয়েকটি প্রজাতি দেখা যায়৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতির নাম এম্পেরর পেঙ্গুইন৷ জেমস কুক-এর সমুদ্র অভিযানে তাঁর সঙ্গে ফস্টার এম্পেরর নামের এক নাবিক ছিলেন৷ বেশ দশাসই চেহারার৷ তার নামেই এম্পেরর পেঙ্গুইন এর নামকরণ করা হয়৷ সর্ববৃহৎ প্রজাতির এম্পেরর পেঙ্গুইন উচ্চতায় ৪ ফুট৷ ওজনে অন্তত ৪৫ কিলোগ্রাম৷ 'অ্যাডেলি' নামক সেখানে আরেক ধরণের পেঙ্গুইন আছে, এরা সংখ্যায় বেশি এবং অ্যান্টার্কটিকার মূল মহাদেশে থাকে৷ 'অ্যাডেলি'পেঙ্গুইন আকারে ছোট-প্রায় ২ ফুট৷ সেগুলোও বেশ আছে ম্যাকুয়ারি দ্বীপের৷
যে সংবাদটি বেশ পীড়া দিচ্ছে, তা হলো, ম্যাকুয়ারি দ্বীপের পেঙ্গু্ইনদের অবস্থা নাকি খুবই সঙ্কটাপন্ন৷ একই সঙ্গে সেখানে আরও যে সব সমুদ্রচারী পাখি রয়েছে সেগুলোও রয়েছে চরম সঙ্কটের মধ্যে৷
কিন্তু সংঙ্কটটা কী? এই দ্বীপে নাকি বেড়ে গেছে ধাড়ি ইঁদুর আর খরগোশ৷ এই দুই প্রাণী এখন বেশ দাবড়ে বেড়াচ্ছে দ্বীপময়৷ এরাই নাকি খেতে শুরু করেছে পেঙ্গুইন আর অ্যালবাটরস সসহ অন্যান্য সমুদ্রযায়ী পাখিগুলোর ডিম৷ ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে পাখিগুলোর বংশ বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে৷
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসাবে ইউনেস্কো ঘোষিত এই দ্বীপের আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি করছে খরগোশকুল৷ দ্বীপের প্রাণী বিশারদরা বলছেন, এই দ্বীপে চাষ উপযোগী সব স্থানে খরগোশরা খেয়ে চলছে ঘাস আর সবজি৷ এর ফলে সেখানকার মাটি ক্ষয়ে যাবার ঘটনা ঘটছে৷
আর এই অবস্থা থেকে বাঁচতে বেশ কয়েক বছর ধরেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে ইঁদুর আর খরগোশ নিধনের৷ পরিকল্পনা অনুসারে গত বছর এই হত্যাযজ্ঞে নেমেছিল এক দল স্বেচ্ছাসেবী৷ কিন্তু প্রচন্ড খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেই কাজে প্রায় প্রাথমিক অবস্থাতেই ইতি টানতে হয়৷ কিন্তু যেটুকু কাজ তারা করতে পেরেছিলেন, তাতে বেশ ভালো ফল দেখতে পেয়েছেন৷ এবার আবহাওয়াটাও অনুকূলে৷ আর তাই আর অপেক্ষা কেন? নেমে পড়লেন তারা৷
তবে সমস্যা কিন্তু পিছু নিয়েছিল ঠিকই৷ ইঁদুর এবং খরগোশ মারবার জন্য যে বিষটোপ ব্যবহার করেছিলেন ঐ স্বেচ্ছাসেবীরা, সেই বিষাক্ত টোপ অগোচরে খেয়ে নিয়েছিল বেশ কিছু পাখি৷ ফলে তাদের জীবনাবসান৷ এবার সেই ভুল আর করতে চাইছেন না তারা৷ তারপরেও কথা আছে, সেখানে মৃত খরগোশ আর ইঁদুরের দেহবাশেষ কি পাওয়া যাবে, এটাও লক্ষ টাকার প্রশ্ন৷ কারণ, বিষ খেয়ে সেগুলোতে আর সেখানেই মরে যাবে না৷ চলে যাবে অন্য কোথাও৷ আর মরে পড়ে থাকার পর সেই পচন ধরা দেহ যদি আরও কোন প্রাণীর খাদ্য হয়, তাহলে আরও বিপদ৷ তাই এবার নেয়া হয়েছে আগের চেয়ে বেশি লোকবল, সব কাজে রাখা হচ্ছে বিশেষ দৃষ্টি৷ তবে এই কাজে বেশ কয়েক বছর সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে৷ যদিও কিছু কিছু পরিবেশবাদী এহেন হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে তারা যে এতে নাখোশ, তা জানিয়ে দিয়েছেন৷ তবে দ্বীপবাসীর এক কথা - পরিবেশ রক্ষার জন্য তাদের এই কাজ করতেই হবে৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক