পাঠশালায় ফেরা

সেকালে অনেক স্কুল বালিকারই একটি করে ডায়েরি থাকত৷ পেন্সিলে আঁকা ছবি আর আত্মীয়-বন্ধুদের শুভেচ্ছা বার্তা সেই ডায়েরির পাতায় পেত অমরত্ব৷ ইউক্রেনের ছোট্ট মেয়ে লাদুষ্কার স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনে তাঁর ডায়েরিতে বাবা-মা লিখে দিয়েছিলেন এই শুভেচ্ছা বার্তা৷ এ রকম সব স্মৃতিচিহ্ন নিয়েই হিল্ডেসহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল মিউজিয়ামে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী – ‘১০০১ স্কুলের গল্প’৷

শিক্ষার্থীদের মাঝে দাঁড়ানো শিক্ষিকাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ক্লাসে তিনি কতটা কঠোর৷ ১৯৭০ এর দশকে তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নের স্কুলগুলোতে কড়া শাসনই চলত৷ অন্য দেশের পরিস্থিতিও খুব একটা আলাদা ছিল না৷ এখনো বহু দেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের কঠোর নিয়ম-কানুনের মধ্যে বড় হতে হয়৷

উজবেকিস্তানে স্কুলের ছেলে-মেয়েরা প্রতি বছর ২২শে এপ্রিল সাবেক কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের জন্মদিনে স্কুলে হাজির হতো উৎসবের পোশাকে৷ বালিকারা কেউ কেউ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যেত কনের সাজে৷ আর বালকদের কারো গলায় ঝুলত টাই, কারো গায়ে স্যুট৷

স্কুলবেঞ্চিতে বসে বন্ধুর কানে কানে কথা বলতে গিয়ে কানমলা খাওয়ার স্মৃতি কতোই না মধুর! ৭০ বছর আগে যাঁরা নেদারল্যান্ডসের কোনো স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁদেরও হয়েছে এমন অভিজ্ঞতা৷ এইসব স্মৃতির ভিড়ে এখনো তাঁদের চোখে ভাসে বর্ণমালা শেখার সেই বই – ‘ওপা হাস’৷

১৮৮৪ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা ছিল জার্মানির উপনিবেশ৷ সে সময় কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের স্কুলে শিক্ষকরা ছিলেন শ্বেতাঙ্গ৷ ১৯১২ সালের এই পোস্টকার্ড সেই গল্পই বলছে৷

১৯৫০-এর দশকের এই ছবি জার্মানির এক গাঁয়ের৷ সে সময় ফসল কাটার মৌসুমে কৃষক পরিবারের ছেলে-মেয়েরা স্কুল ফেলে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগ দিত মাঠের কাজে৷ কাজের ফাঁকে মাঠে বসেই পুরো পরিবারের মধ্যাহ্নভোজ৷

১৯৮৪ সালে কাজাখস্তান থেকে পরিবারের সঙ্গে জার্মানিতে আসা এক স্কুলছাত্রীর রিপোর্ট কার্ড এটি৷ সে কোন বিষয়ে কতটা ভালো, স্বভাব-চরিত্রে কতটা লক্ষ্মী, তার বিস্তারিত বিবরণ এতে রয়েছে৷

১৯৬৯ সাল৷ কাজাখস্তানের এই ছাত্র-ছাত্রীরা সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক স্কুলের লেখাপড়া শেষ করেছে৷ সেখানে স্কুলের নিয়ম হলো- প্রতিটি শিশু প্রথম দিন ক্লাসে আসবে শিক্ষকের জন্য একগোছা ফুল হাতে৷ আর মাধ্যমিক শেষ হলে স্কুল থেকে তাঁরা ফুল হাতেই বিদায় নেবে৷

উজবেকিস্তানের এই ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের স্কুলের লেখাপড়া শেষ করেছে ১৯৭৫ সালে৷ স্ট্যালিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের পত্রিকায় তাঁদের ছবি পেয়েছে অমরত্ব৷

মাক্স এঙ্গেলকিং অল্প কিছুদিনের মধ্যে নিজেই শিক্ষকতা শুরু করবেন৷ তাঁর হাতের এই গ্লোব দিয়ে এক সময় ছাত্র-ছাত্রীদের দুনিয়া চেনাতেন শিক্ষকরা৷ ১০০১ স্কুলের গল্প নিয়ে এই প্রদর্শনী চলবে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত৷