পানির ভয় দূর করতে সাঁতার প্রশিক্ষণ
৭ আগস্ট ২০১৭১১ বছরের এই মেয়ে একসময় পানি দেখলেই ভয় পেত৷ এখন সে বাঁশ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী এক সুইমিং পুলে সাঁতার শিখছে৷ সে যখন এক পাশ থেকে সাঁতরে পুলের অন্যপাশে যেতে পারলো, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য শিশুদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে সে উচ্ছ্বাস৷
বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেশি৷ ২০০১ সালের এক সরকারি প্রতিবেদন বলছে, প্রতি বছর পানিতে ডুবে ১৮ হাজার শিশু মারা যায়৷ এদের সবাই ১৮ বছরের কম বয়সি এবং এর মধ্যে ৪৩ শতাংশের বয়সই পাঁচ বছরের কম৷
রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের শ্রীপুর৷ গৃহবধূ সামেলা বেগম নিজের দুই ছেলে এবং ভাতিজাকে হারিয়েছেন নদীতে৷ তারা কেউই সাঁতার জানতো না৷ সামেলা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘সব মা-বোনদের আমি বলবো, সাবধান হন৷ দয়া করে আপনাদের সন্তানকে সাঁতার শেখান৷ আপনাদের যেন আমার মতো কোল খালি না হয়৷’’
সামেলার মতো যাতে আর কোনো মাকে এমন অসহায় হতে না হয়, সেজন্য বাংলাদেশের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে সাঁতার শেখানোর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এক ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা৷ শ্রীপুর গ্রামের শিশুদের মন থেকে দূর করা হচ্ছে জলভীতি৷
‘‘আমরা মনে করি শিশুমৃত্যুর হার কমাতে সাঁতার একটা ওষুধের মতো কাজ করতে পারে’’, বলছিলেন ঢাকা-ভিত্তিক সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান গবেষক আমিনুর রহমান৷ এই সংস্থা শ্রীপুর ছাড়াও দেশের অন্যান্য গ্রাম এমনকি ঢাকাতেও সাঁতার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে৷
শ্রীপুর গ্রামের নামেই ব্রিটেনের কেন্টের এই দাতব্য সংস্থার নাম দ্য শ্রীপুর ভিলেজ৷ ১৪২ জন মা এবং তাদের ২৮০ শিশুকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচন করা হয়েছে৷ মায়েদের ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা বিষয়ে দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি নানা বিষয়ে তাদের সন্তানদের দেয়া হচ্ছে সাঁতার প্রশিক্ষণও৷ এরা নিজেদের এলাকায় ফিরে গিয়ে অন্য মা ও শিশুদের নিজেরাই প্রশিক্ষণ দেবেন, এটাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷
মায়েরা শ্রীপুর গ্রামে থাকেন প্রায় তিন বছর৷ এক ব্রিটিশ দাতব্য কর্মী ১৯৮০ সালে এই গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন৷ লক্ষ্য ছিল, দরিদ্র নারীদের সহায়তা করা৷ এই গ্রামে কংক্রিটের বাড়ি, খেলার জায়গা, ক্লিনিক এবং ১৮ একর (৮ হেক্টর) কৃষি জমি আছে৷
লন্ডন থেকে কাজ করতে আসা শিশু উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ সিলভেস্টার বলছেন, ‘‘এই শিশুদের আমরা পেশাদার সাঁতারু বানানোর চেষ্টা করছি না৷ শিশুরা যাতে নিজেদের রক্ষা করতে পারে সেজন্য তাদের যতটুকু দক্ষতা দরকার, আমরা তাই দিচ্ছি৷’’
শুরুতে ছোট বাচ্চাদের তিন ফুট গভীর এই সুইমিং পুলে আধা ঘণ্টা হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি করতে দেয়া হয়৷ পাশেই একটি পুকুরে তুলনামূলক বড় বাচ্চাদের ভেসে থাকা এবং পানিতে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল শেখান আরেক প্রশিক্ষক৷
প্রশিক্ষক মুক্তা তরফদার বলছেন, ‘‘পুরোটাই আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার৷ একসময় যারা জলে ভীষণ ভয় পেত, এখন তারা একেবারেই স্বাভাবিক৷’’
এডিকে/ডিজি (এপি)