পানির লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রকল্প
২৫ অক্টোবর ২০১০ইংল্যান্ডের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে জার্মানির অধিকাংশ জায়গার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের চেয়েও কম বৃষ্টি হয়৷ তাই রাজধানীতে পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা চিন্তা করে, এ বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের প্রথম লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রকল্প যাত্রা শুরু করে৷
পূর্ব লন্ডনের বেক্টন এলাকা৷ টেমস নদীর তীরে রোদমাখা একটি দিন৷ এর ঠিক উল্টোদিকে ধূসর কিছু বাড়ি৷ সেখানেই ট্যাংকে পানি সংগ্রহ করার ব্যবস্থা৷ লন্ডনবাসীদের পানি সরবরাহের সুযোগ সুবিধা দিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে এখানে৷ জুন মাসে এখানেই ব্রিটেনের প্রথম লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রকল্প গড়ে তুলেছে ‘টেমস ওয়াটার'৷ যে প্রকল্পটি খরা মৌসুমে দশ লাখ মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে৷ এই ধরণের প্রকল্প এই দেশে এই প্রথম৷ তেমনি এখানে যে চার স্তরের লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হচ্ছে তাও বিশ্বের প্রথম৷
‘গ্লোবাল ওয়াটার ইনটেলিজেন্স' ম্যাগাজিনের ক্রিস্টোফার গ্যাসন এই প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘এক্ষেত্রে অতি সুক্ষ্ম ফিল্টার ব্যবহার করতে হয়, যাকে বলা হয় রিভার্স অসমোসিস মেমব্রেন৷ এটি এমন ছাঁকনি যা দিয়ে শুধু পানির অণুগুলো যেতে পারে, লবণের অণু নয়৷''
এক্ষেত্রে সরাসরি সমুদ্রের পানি ব্যবহার না করে জোয়ারের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এই ফিল্টার দিয়ে বারবার ছাঁকার ফলে ‘টেমস প্ল্যান্ট' ৮৫ শতাংশ লবণাক্ত পানিকে বিশুদ্ধ পানীয় জলে পরিণত করতে পারছে৷ আর মধ্যপ্রাচ্যের মতো শুষ্ক অঞ্চলের দেশগুলো থেকে এই ধরণের প্রযুক্তি আনা হয়েছে৷ ক্রিস্টোফার গ্যাসন আরও বলেন, ‘‘বর্তমানে পৃথিবীতে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন ৬ কোটি ৮০ লাখ ঘনমিটার পর্যন্ত পানির লবণাক্ততা দূর করা সম্ভব৷ আমরা আশা করছি, এই জল পরিশোধনাগারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করে ২০১৬ সাল নাগাদ প্রতিদিন ১৩ কোটি ঘনমিটার পর্যন্ত পানি লবণমুক্ত করতে পারবো৷''
লন্ডন শহরের অন্য দিকে আরো বেশি দক্ষতাসম্পন্ন প্রযুক্তির এতো উন্নতি হচ্ছে যে, সেসব প্রযুক্তিকে সারা বিশ্বে পানির সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ ব্রিটিশ কোম্পানি ‘মডার্ন ওয়াটার' এখনই পানির লবণাক্ততা দূরীকরণের জন্য রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়াকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে যাচ্ছে৷ মডার্ন ওয়াটারের নির্বাহী সভাপতি নিল ম্যাকডুগাল বলছেন, ‘‘সমুদ্রের পানিতে শুধু লবণ থাকেনা, অন্যান্য উপাদানও থাকে৷ এই প্রক্রিয়ায় আমরা বিভিন্ন ধরণের পদার্থ যোগ করে এগুলোকে পরিস্কার করছি৷''
এতক্ষণতো গেলো প্রযুক্তির কথা৷ কিন্তু তা থেকে মানুষ আসলেই কি পাবে? নিল ম্যাকডুগাল বলছেন, ‘‘পানিকে লবণমুক্ত করার প্রচলিত যেসব পদ্ধতি আছে সেগুলোর জন্য জ্বালানিতে খরচ হয় সবচেয়ে বেশি, যা মোট খরচের প্রায় ৫০ শতাংশ৷ নতুন এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আমরা জ্বালানি খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারি৷ এই খরচটা আরও কমিয়ে আনার উপায় বের করার চেষ্টা করছি আমরা৷''
এখানেই শেষ নয়৷ আরও সম্ভাবনাময় পদ্ধতির ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে৷ ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড'এর ফিল ডিকি বলছেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খাবার পানি অথবা শিল্পকারখানা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আরো পানির সহজতম উৎস হতে পারে পানির অপচয় কমিয়ে ফেলা৷ আর পানির অপচয় কমিয়ে আনতে যে খরচ হবে তা সমুদ্রের লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে সুপেয় পানিতে পরিণত করার খরচের চেয়ে কম হবে৷''
কলকারখানার সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশবিদরা বলছেন, সারা বিশ্বে এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ পানির অভাবে ক্লিষ্ট৷ তবে পানির লবণাক্ততা দূরীকরণের নতুন এই পদ্ধতি মানুষকে সুপেয় পানি সরবরাহের বিপুল সম্ভাবনার আশাই দেখাচ্ছে৷
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক