পার্ক সার্কাসে কারখানায় আগুন, কেন বারবার আগুন লাগে কলকাতায়?
আবার বড় আগুন লাগলো কলকাতায়। পার্ক সার্কাস স্টেশনের পাশেই একটি কারখানায়। বন্ধ থাকলো ট্রেন চলাচল।
পার্ক সার্কাসে কারখানায় আগুন
সোমবার বেলা তিনটে নাগাদ পার্ক সার্কাস রেলস্টেশান সংলগ্ন একটি কারখানায় আগুন লাগে। পুলিশ জানিয়েছে, রবার কারখানা ও বেকারিতে আগুন লাগে। স্থানীয় কিছু মানুষের দাবি, চামড়ার কারখানায় আগুন লেগেছিল। দাহ্যবস্তু হওয়ার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যে জায়গায় আগুন লেগেছিল, তা পার্ক সার্কাস রেলস্টেশনের একেবারে পাশে।
কীভাবে আগুন লাগলো জানা যায়নি
কী ভাবে সেখানে আগুন লাগলো, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিকেল ৩টে নাগাদ ওই কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। মুহূর্তের মধ্যে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। সাড়ে তিনটে নাগাদ খবর দেওয়া হয় দমকলকে।
আগুন নেভাতে দমকলের ১৪টি ইঞ্জিন
ঘটনাস্থলে দমকলের ১৪টি ইঞ্জিন পোঁছে যায়। তবে ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ার কারণে কারখানা পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি দমকলের গাড়ি। বেশ খানিকটা দূর থেকে পাইপের মাধ্যমে জল দিতে হয়েছে। আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে দমকলকে। প্রথম দিকে স্থানীয় মানুষই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। সন্ধ্য়া পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ট্রেন চলাচল বন্ধ
কারখানার পাশেই রয়েছে পার্ক সার্কাস স্টেশনের অফিস। কালো ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে দেখে প্ল্যাটফর্ম, ওভারব্রিজে ভিড় জমান ট্রেনযাত্রীরা। বেশ কিছুক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। একটা ওভারহেড লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে রেলপুলিশ এসে যাত্রীদের সরায়। তার পর প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়েই নিয়ে আসা হয় দমকলের পাইপ।
মেয়র যা বললেন
দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ''ছোটো ছোটো প্রচুর কারখানা থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই এই অঞ্চল থেকে অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। এই অঞ্চলে একটা সচেতনতা শিবির করা খুবই জরুরি।''
বিধায়কের বক্তব্য
স্থানীয় বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহাও উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে। তিনি স্থানীয় মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ার কারণে দমকল ভেতরে ঢুকতে সমস্যা হয়েছিল, কিন্তু স্থানীয় মানুষ দমকলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন বলেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
বার বার আগুন কেন?
কখনো শর্ট সার্কিট হয়ে, কখনো গ্যাস সিলিন্ডার থেকে, কখনো বা অসাবধানতার কারণে — কলকাতা শহরে বার বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। ডিসেম্বরেই পর পর দু’দিন দুটো বড় আগুন লেগেছিল কলকাতায়। একদিনের ব্যবধানে তপসিয়া এবং নিউ আলিপুরের বস্তিতে আগুন লাগে। সোমবারেও পার্ক সার্কাস স্টেশনের কাছে একটি কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগলো।
বিরোধীদের অভিযোগ
বিরোধীরা অভিযোগ তুলছেন, ঘিঞ্জি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এত কারখানা— এটা শুধু পার্কসার্কাস নয় কলকাতা শহরের বহু জায়গাতেই এমন রয়েছে। এইসব কারখানাগুলোর বেশিরভাগেরই বৈধ লাইসেন্স নেই। এমনকী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও যথাযথ নয়। দমকল ঢোকার জায়গা নেই অথচ সেখানে কারখানা চলছে।
এলাকার বাসিন্দারা কী বলছেন?
ওই অঞ্চলেরই এক বাসিন্দার গুরুতর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে এখনও অনেক চামড়ার কারখানা রয়ে গিয়েছে, যা এখানে থাকারই কথা নয়। ঘিঞ্জি এলাকা, সংকীর্ন রাস্তা— যেখানে একটা বড় গাড়ি ঢোকার রাস্তা নেই। আগুন লাগ্লে মানুষের পালাবার পথ নেই।”
পুরসভায় বিরোধী নেতার বক্তব্য
পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলর সজল ঘোষের বক্তব্য, কলকাতায় কিছু অঞ্চল আছে, যা আগুন লাগার ক্ষেত্রে খুবই বিপজ্জনক। চাঁদনি চক, পার্ক সার্কাস, বড়বাজারের বেশ কিছু এলাকা, নন্দরাম মার্কেট, মেছুয়া, মঙ্গলাহাটের মতো জায়গায় বহুবার আগুন লেগেছে। কিন্তু কিছুই বদলায়নি। মানুষের মানসিকতা, সরকারের সক্রিয়তা কোনো কিছুরই বদল হয়নি। রাস্তা দিয়ে দমকল ঢুকতে পারে না, ফুটপাথ অবৈধ দখলদারদের হাতে। ফলে আগুন লাগলে তা ভয়ংকর হয়।