পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর উপায় : পাহাড়ের মানুষেরা যা ভাবছেন
পাহাড়ে এতদিনেও শান্তি ফিরছে না কেন? কী কী করলে শান্তি ফিরতে পারে সেখানে? এ বিষয়ে নিজেদের মত জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং জনপ্রতিনিধিরা৷
কি কি উ মারমা, ছাত্র
আমার মনে হয়, রাজনৈতিক ইস্যুর কারণে সৃষ্টি হয়েছে এসব খুন, গুম, অপহরণ৷ তাই অচিরেই এর রাজনৈতিক সমাধান দরকার৷ সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে সশস্ত্র দলগুলো যে সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে, এতে বলি হচ্ছেন আদিবাসীরাই৷ সেটি অচিরেই বন্ধ না হলে আর কত প্রাণ যাবে জানি না! তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি একটা সমাধানের পথ বের করার জন্য সরকারের কাছে আকুল মিনতি করছি৷
হ্লা য়ই চিং মারমা, শিক্ষক
আমি মনে করি, স্বাধীনতার পর পাহাড়ে যে অশান্তির দাবানল ছড়ায় সেটি ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল৷ বেশ সুন্দর পরিবেশে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ ছিল বান্দরবানের ১১টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ও বাঙালি৷ কিন্তু ইদানীং এই জনপদ অশান্ত হয়ে উঠেছে৷ বিপথগামী কিছু সংগঠনের নেতাদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা যায় কিনা তা বিবেচনার আহবান জানাচ্ছি৷
বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, সাংবাদিক
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সশস্ত্র দলের উপদল সৃষ্টি হওয়ার ফলে হত্যা,পাল্টা হত্যা, গুম,অপহরণ চাঁদাবাজিসহ নানা ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে৷ এগুলো আমার মনে হয় আসল সমস্যা না৷ মূল সমস্যাটা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যা৷ রাজনৈতিক সমস্যাকে যদি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা না হয়, এই উপসর্গগুলো দূর হবে না৷ রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে দূর করতে হলে অচিরেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে৷
খামলাই ম্রো, সাকেব উপজেলা চেয়ারম্যান
আমরা চার-পাঁচ বছর আগে দেখেছি খাগড়াছড়িতে,রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, এখন সেটা বান্দরবানেই বেশি হচ্ছে৷ গত দুই বছর থেকে কেন এভাবে বান্দরবানে শুরু হলো এটা একটু ভাবা উচিত৷ কোনো এক পক্ষ যদি শুধু দায়িত্ব নেয়, তাহলে সমাধান করা সম্ভব না৷ সাধারণ জনগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারকে সততা ও সদিচ্ছার সাথে এক হয়ে কাজ করতে হবে, না হলে সমাধান আসবে না৷
ক্যশৈপ্রম্ন খোকা, অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ও চার্চের যাজক
হিংসা, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ নেয়ার নীতি পবিত্র বাইবেলে যীশু খ্রিষ্টের দেয়া শিক্ষা অনুমোদন ও সমর্থন দেয় না৷ বরং যীশু বলে গেছেন, সবার সাথে সহাবস্থান করতে এবং শত্রুকেও ভালবাসা দিয়ে ক্ষমা করে দিতে৷ ঘাত-প্রতিঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি রাজনৈতিক বিশেষ স্বার্থ উদ্ধারের পন্থা মাত্র৷ ক্ষমাশীল মনোভাব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এলেই আমরা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের শতভাগ শান্তি, সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে পারবো৷
লেলুং খুমি, উন্নয়নকর্মী
জেএসএস ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য যে আন্দোলন করছে, তা নস্যাৎ করতে অন্যান্য দলগুলো সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংঘাত, মারামারি, খুন, গুম বন্ধ করা দরকার৷ সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে অসম্ভব কিছু নেই৷ পাহাড়ি—বাঙালি, কিংবা পাহাড়ি-পাহাড়িদের সংঘাতদূর করা কোনো বিষয় না৷ আরেকটা বিষয়- এখানে যে সিভিল ও মিলিটারি প্রশাসন আছে, তাদের নিরপেক্ষতার অভাব আছে।
কাজী মুজিবর রহমান, নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান
এই স্বাধীন দেশে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই৷ পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশে থাকতে চাই৷ এই দেশ স্বাধীন করার সময় বহু পাহাড়ি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে৷ তারাও আমাদের ভাই৷ আজ ভ্রাতৃত্বে ফাটল ধরেছে৷ সন্ত্রাসীদের কোনো দল থাকে না, কোনো জাত থাকে না৷ সুতরাং এ বিষয়ে সমাধান হওয়া দরকার, এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার৷
লক্ষীপদ দাস, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক
চুক্তির পর পার্বত্য নগরীতে শান্তির সুবাতাস বইছে। পার্বত্য অঞ্চলের আনাচে-কানাচে উন্নয়ন হয়েছে৷ এক সময় দুর্গম অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কিছু ছিল না৷ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রসহ সব জায়গায় আমূল পরির্বতন এসেছে৷ নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে একদল পাহাড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে৷ সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে কেএনএফ-এর কথা৷ আমার মনে হয়, এই সংগঠনটির পিছনে বাইরের কোনো অপশক্তি কাজ করছে।