পুঁজিবাদ বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে জি ২০ বৈঠক
২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের পিটসবার্গে চলছে এই বৈঠক৷ বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জি ২০ বৈঠকের প্রাক্কালে আবারও বিশ্ব অর্থনীতির বাজার নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি করার জন্য জোর দিলেন৷ ম্যার্কেল বলেন, বৈষম্য অবশ্যই একটি আলোচনার বিষয়৷ বিভিন্ন পর্যায়ের বৈষম্য এবং সেগুলোর পেছনের কারণও রয়েছে৷ রয়েছে মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন৷ কিন্তু অন্যান্য বিষয়ের ভিড়ে অর্থনৈতিক বাজারের জন্য কড়া নীতিমালার কথা বাদ পড়লে চলবে না৷ ম্যার্কেলের কথার সাথে সুর মিলিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়ুকিও হাতোয়ামা৷ তিনি বলেন, তাঁর দেশ 'লাগামহীন অর্থ লুটে নেওয়ার খেলা' বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক নীতিমালার জন্য কাজ করতে চায়৷ এছাড়া জার্মানি ও ফ্রান্স বেশ ক'দিন আগে থেকেই ব্যাংক নির্বাহীদের বেতন-ভাতায় লাগাম দেওয়ার পক্ষে বেশ সোচ্চার৷ একই সুর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কণ্ঠেও৷
বৃহস্পতিবার আমেরিকার পক্ষ থেকেও ঘোষণা করা হলো, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারই পিটসবার্গ বৈঠকের প্রধান আলোচ্য৷ তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে জি ২০ বৈঠকে৷ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র রবার্ট গিবস পিটসবার্গ যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের বলেন, 'অর্থনৈতিক বাজার নিয়ন্ত্রণ কাঠামোয় সংস্কার হবে বৈঠকের প্রধান সুর'৷ তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, বিশ্ব মন্দা থেকে যে উত্থান কিছুটা শুরু হয়েছে তা টেকসই করা এবং আবারও যেন মন্দা ফিরে না আসে সেটিই পিটসবার্গ বৈঠকে বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল - আইএমএফ'এর মুখপাত্র ক্যারোলিন এ্যাটকিনসনও ঠিক সেদিকেই ইঙ্গিত করলেন৷ ওয়াশিংটনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, তিনি আশা করেন যে, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনীর শুরুটাকে স্থায়ী করার দিকে বেশি দৃষ্টি দেবেন৷
পুঁজিবাদ বিরোধীদের বিক্ষোভ
এদিকে, এই ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন স্থলে দারিদ্র্য বিরোধী এবং সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ বিরোধী মহলের বিক্ষোভের ব্যতিক্রম ঘটেনি পিটসবার্গেও৷ তাই সভাস্থলের নিরাপত্তার জন্য পিটসবার্গ শহরে অতিরিক্ত চার হাজার পুলিশ ও বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ বিক্ষোভকারীদের নিবৃত করতে পুলিশ প্রথমে ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষায় ধারণকৃত ঘোষণা প্রচার করে৷ তবুও পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা সভাস্থলের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে দাঙ্গা পুলিশ৷ পুলিশের ভাষায়, বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ কর্মসূচির কোন অনুমতি নেয় এবং এটা অবৈধ৷
বিক্ষোভকারীদের হাতে লাল এবং কালো রঙের পতাকা এবং পুঁজিবাদ বিরোধী স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড ছিল৷ বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ৷ তারা নিজেদের নৈরাজ্যবাদী এবং সাম্যবাদী বলে পরিচয় দেয়৷ ফিলাডেলফিয়া থেকে আসা ২০ বছর বয়সী মার্টিন ড্রল বলেন, আমরা এখানে সমবেত হয়েছি জি ২০ নেতৃবৃন্দের জানাতে যে, তারা শুধু নিজেদের নয় বরং আমাদের মতো আরো অসংখ্য মানুষের জীবনের ক্ষতি করছে৷ এদিকে, তাদের পাশাপাশি তিব্বত এবং আমেরিকার পতাকা নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেয় প্রায় ২০০ তিব্বতি নাগরিক৷ তাদের দাবি, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যেন বৈঠকে উপস্থিত চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও'কে তিব্বতে মানবাধিকার রক্ষার জন্য চাপ দেন৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার