স্কুল থেকে আশ্রয়কেন্দ্র!
১ সেপ্টেম্বর ২০১৪এসেন শহরের একটি পরিত্যক্ত স্কুলে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বসবাস করছেন শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীরা৷ তাঁরা এসেছন ইরিত্রিয়া, সুদান, আলজেরিয়া, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, বসনিয়া, সার্বিয়া, আলবেনিয়া ও কসোভো থেকে৷
চাপাচাপির মধ্যে থাকতে হয়
বেশ চাপাচাপির মধ্যে থাকতে হয় তাঁদের৷ দুটি পরিবার একটি ক্লাসরুমে ভাগাভাগি করে থাকে৷ একক ব্যক্তিরা ১৪ জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এক কক্ষে বসবাস করেন৷ ধূসর প্রবেশপথগুলি আকর্ষণ জাগানোর মতো নয়৷
সাদামাটা হলেও একটি আশ্রয় পাওয়া যাওয়ায় শরণার্থীরা খুশি৷ সেরকম আরামদায়ক না হলেও নিরাপত্তা তো পাওয়া গিয়েছে৷ একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নও তারা দেখতে পারেন৷ অনেক মানুষই এখন জার্মানিতে আশ্রয় চাইছেন৷ ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৯৭,০৯৩ জন জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে আবেদন করেন৷ বেশিরভাগই এসেছেন সিরিয়া থেকে৷ এরপর রয়েছেন সার্বিয়া ও ইরিত্রিয়া থেকে আসা শরণার্থীরা৷
আহমেদ এসেছেন কসোভো থেকে৷ ৩১ বছর বয়সি আহমেদ রোমা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে ছয় মাস ধরে তিনি এসেনের এই শরণার্থী শিবিরে বসবাস করেছেন৷ তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি এইভাবে: ‘‘আমি এমন একটি আশ্রয় খুঁজছিলাম, যেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদে থাকতে পারবো৷ কসোভোতে সেটা সম্ভব নয়, সেখানে রোমাদের প্রতি খারাপ আচরণ করা হয়৷''
এখন অসুবিধা হয় না
২৯ বছর বয়স্ক সামি এসেছেন ইরিত্রিয়া থেকে৷ প্রথম দিকে একটু কষ্ট হলেও এখন সংকীর্ণ পরিবেশে থাকতে তাঁর তেমন অসুবিধা হয় না৷ অন্য ১৩/১৪ জন শরণার্থীর সঙ্গে এক কক্ষে বসবাস করেন তিনি৷ এখানকার সামাজিক জীবনটা তাঁর কাছে ভালোই লাগে৷ অন্যান্যদের সঙ্গে ফুটবল ও বিলিয়ার্ড খেলে কিংবা টিভি দেখে সময় কেটে যায়৷
আশ্রয়শালার প্রধান মার্টিনি তাঁর শিবিরের বাসিন্দাদের সামাজিক অনুভূতির ব্যাপারে গর্বিত৷ আহমেদ তাঁর পরিবার নিয়ে এক নারী শরণার্থীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে এক কক্ষে থাকেন৷ ঐ নারী একাকী বিদেশ-বিভূয়ে এসেছেন বলে তাঁর প্রতি দায়িত্ব অনুভব করেন তিনি৷ সেজন্য তাঁর দেখভালে সচেষ্ট থাকেন৷
আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা একসাথে খাওয়া দাওয়া করেন৷ নাস্তা ও রাতের খাবারে থাকে রুটি, পনির, দই, ফলমূল৷ দুপুরে থাকে গরম খাবার৷ ধর্মীয় রীতিনীতি ও ডায়বেটিসের মতো অসুখ-বিসুখ বিবেচনা করে খাবার দেওয়া হয়৷ শুয়োরের মাংস ও অ্যালকোহল দেওয়া হয়না৷ থাকে নিরামিষের খাবার৷
অস্থায়ী সমাধান
শরণার্থীদের স্কুলটিতে কোনো নিজস্ব রান্নাঘর নেই৷ কেননা এসেন শহরের জন্য এটি একটি অস্থায়ী সমাধান মাত্র৷ আগামী বছর নতুন আশ্রয়শালায় ওঠার কথা শরণার্থীদের৷ ২০১২ সালে স্কুলে শরণার্থী শিবির খোলার কথা শুনে আশেপাশের বাসিন্দারা এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন৷ তবু শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রটি খোলা হয়৷ আজ প্রতিবেশীরা আশ্রয়প্রার্থীদের ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন, বলেন মার্টিনি৷ অনেকেই শরণার্থীদের কাপড়-চোপড় দান করেছেন৷ কাজ করছেন অবৈতনিকভাবে৷ পড়াচ্ছেন জার্মান৷ প্রতিবেশী ক্যাথলিক গির্জা কমিউনিটিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷
স্বল্প পরিসরে এত লোকজন একসঙ্গে থাকায় ঝগড়া বিবাদ যে হয় না, তা নয়৷ তবে কোলন শহরের শরণার্থী শিবিরের মতো ছুরি চালানোর মতো ঘটনা ঘটেনি এসেনে৷ হয়ত বা বাচ্চাদের সংখ্যা বেশি বলে৷ বাসিন্দাদের অর্ধেক অর্থাৎ ৩৭ বাচ্চা বসবাস করে এখানে৷ স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটিতে বাচ্চারা কমনরুমে বসে টিভি দেখে কিংবা বই পড়ে অথবা আশ্রয় কেন্দ্রের চত্বরে খেলাধুলা করে৷ ‘‘আমরা নিজেদের এক বড় পরিবার বলে করি৷'' বলেন শরণার্থী কেন্দ্রের প্রধান মার্টিনি৷