ফরহাদ মজহারের ‘নিখোঁজ রহস্য’
৫ জুলাই ২০১৭সিসি ক্যামরার ফুটেজ বলছে, ফরহাদ মজহার ঢাকার শ্যামলী রিং রোডের হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হয়ে যান সোমবার ভোর ৫টা ৫ মিনিটের দিকে৷ তাঁর স্ত্রী ফরিদা আখতার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘উনি ভোর রাতে লেখালেখির কাজ করতেন৷ তখন সাধারণত কি-বোর্ডের শব্দ পেতাম৷ ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে জেগে উঠি৷ তখন তাঁর কাজের শব্দ না পেয়ে গিয়ে দেখি উনি নাই৷ আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম৷ এরপর আমার মোবাইলে ফোন আসে৷ ওনার মোবাইল থেকেই৷ তিনি বলেন, ‘ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে মেরে ফেলবে৷' এটাই আমার প্রথম তাঁর অপহরণ সম্পর্কে জানা৷''
ফরিদা অখতার বলেন, এর এক ঘণ্টা পর আবারো ফোন করেন এবং বলেন, ‘১০টা থেকে ১১টার মধ্যে যদি ৩৫ লাখ টাকা দেয়া যায় তাহলে ওরা আমাকে ছাড়বে৷' ফরিদা আখতার এরপর স্থানীয় পুলিশ স্টেশনকে বিষয়টি জানিয়ে জিডি করেন৷
১৬ ঘণ্টা পর সোমবার রাত ১১টার দিকে যশোরের নওয়াপাড়া এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে র্যাব ও পুলিশ উদ্ধার করে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়৷ সেখান থেকে মঙ্গলবার সকালেই তাঁকে ঢাকায় আদাবর থানায় আনা হয়৷ তারপর গোয়েন্দা দপ্তরে নিয়ে তার প্রাথমিক বক্তব্য নেয়া হয়৷ বিকেলে আদালতে পাঠানো হয় জবানবন্দির জন্য৷
পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘তাকে (ফরহাদ মজহার) সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে৷ তার সঙ্গে একটা ব্যাগ আছে৷ সেই ব্যাগে বাড়তি একটা জামা আছে৷ একটা গেঞ্জি আছে৷ কিছু টাকাপয়সা আছে৷ একটা মোবাইল আছে৷ একটা চার্জার আছে৷''
ফরহাদ মজহারের স্ত্রী বলেন,‘‘আমি টেলিভিশনে দেখেছি৷ সেখানে যে ধরনের পোশাক দেখান হয়েছে ফরহাদ মজহার ঐ ধরনের পোশাক ব্যবহার করেন না৷ উনি সাদা জামা পড়েন৷ ওনার পোশাকগুলো বিশেষভাবে বানানো হয়৷''
পুলিশ বলছে, ‘ফরহাদ মজহার একাই ভিন্ন নামে টিকেট কেটে সোমবার রাতে হানিফ পরিবহণের একটি বাসে খুলনা থেকে যশোর যাচ্ছিলেন৷ পথে নওয়াপাড়া এলকায় বাস থামিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়৷'
কিন্তু ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘গত দশ বছরে তিনি কোনো বাস বা পাবলিক পরিবহনে ভ্রমণ করেননি৷ বাইরে গেলে আমাদের নিজস্ব প্রাইভেট কার ব্যবহার করেন৷ তাছাড়া তিনি কখনো একা ভ্রমণ করেন না৷ কেউ একজন সঙ্গে থাকে৷''
সকালে আদাবর থানায় আনার পর তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ব্যাগ সঙ্গে নিয়েছেন কিনা, তা তো জানি না৷ বাট উনি প্রায়ই একটা ব্যাগ সঙ্গে রাখেন, যার মধ্যে পড়ার জন্য বই ও ওষুধ থাকে৷ তবে তাঁর কাছে যেমন ব্যাগ দেখা গেছে, তেমন ব্যাগ উনি ‘ইউজ' করেন না৷ এ ব্যাগ কোথা থেকে আসলো?''
এদিকে সোমবার যখন ফরহাদ মজহার যখন বাসা থেকে বের হন, সে সময়কার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে ডয়চে ভেলে৷ তাতে বের হওয়ার সময় ফরহাদ মাজহারের হাতে কোনো ব্যাগ স্পষ্ট নয়৷
মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় আনার পর ফরহাদ মজহারের সঙ্গে আদাবর থানায় তাঁর স্ত্রী ফরিদা আখতারের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়৷ এরপর তিনি ফরহাদ মজহারের সঙ্গে আদালতেও যান৷ তবে তাঁর সঙ্গে ফরহাদ মজহারের স্বাস্থ্যগত বিষয় ছাড়া আর কোনো কথা হয়নি৷ ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘উনি খুবই বিধ্বস্ত৷ উনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি ট্রমাটাইজড, ভীষণ ক্লান্ত, ভীষনণ অসুস্থ লাগছে৷' এর বাইরে আমার সঙ্গে তাঁর আর কোনো কথা হয়নি৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ফরহাদ মাজহারকে কেন অপহরণ করা হলো এবং কারা করল তা ধারণা করতে পারছি না৷ কাউকে সন্দেহও করতে পারছি না৷''
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ফরহাদ মজহারের সঙ্গে কথা বলেছি৷ তিনি আমাদের প্রথমিকভাবে জানিয়েছেন, ‘উনি রাত তিনটা থেকেই জেগে কাজ করছিলেন৷ চোখে কিছুটা সমস্যা থাকায় ভোর রাতে ঔষধ কিনতে বের হন৷ বের হওয়ার পর রাস্তা থেকে তাঁকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেধে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আমরা আর বেশি কিছু জানতে পারিনি৷ এখন তাঁর বক্তব্য ধরে তদন্ত করবো৷ এরইমধ্যে একটি অপহরণ মামলাও হয়েছে৷''
বিকেলে ফরহাদ মজহার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন৷ জবানবন্দি নেয়ার পর আদালত তাঁকে নিজ জিম্মায় বাড়ি ফেরার অনুমতি দিয়েছে৷
কারা তাঁকে অপহরণ করলো এবং ১৬ ঘণ্টা তিনি কেথায় ছিলেন জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘তাঁর জবানবন্দি ধরে আমাদের তদন্ত শেষ হলেই সব কিছু জানা যাবে৷ আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁকে এত বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করিনি৷''