‘আল্লামা শফিকে ব্যবহার করা হয়েছে’
৭ মে ২০১৩
সমাবেশে আসলে তিনি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে সমাবেশের সমাপ্তি টানতেন, যা ছিল একটি গ্রুপের জন্য বাধা৷
রবিবার ঢাকা অবরোধ শেষে মতিঝিল শাপলা চত্তরে সমাবেশ শুরু করে হেফাজতে ইসলাম৷ পুলিশ এই সমাবেশের অনুমতি দেয় শর্ত সাপেক্ষে৷ শর্ত হলো, সমাবেশ বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করতে হবে এবং তা হতে হবে শান্তিপূর্ণ৷ একই শর্তে প্রায় এক মাস আগে শাপলা চত্বরে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবশে করেছিল৷ কিন্তু দুপুর ২টায় সমাবেশের শুরু থেকেই তারা আশেপাশে সহিংসতা শুরু করে৷
সে সময় আল্লামা আহমদ শফি লালবাগ মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলেন৷ তাঁর মাগরেবের নামাজের আগেই সমাবেশে এসে বক্তৃতা করার কথা ছিল৷ কিন্তু নিরাপত্তার কথা বলে হেফাজতের কয়েকজন নেতা তাঁকে সমাবেশে আসা থেকে বিরত রাখেন৷ মহানগর পুলিশের লালবাগ জোনের ডেপুটি কমিশনার হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেক জানান, নিরাপত্তা চাইলে তিনি নিজে ফোর্সসহ লালবাগ মাদ্রাসায় গিয়ে রাত ৯টার দিকে আল্লামা শফিকে নিয়ে মতিঝিলের সমাবেশস্থলে রওয়ানা হন৷ তখন তাঁর সঙ্গে কয়েকজন নেতাও ছিলেন৷ নেতারা গাড়িতে বসেই বার বার সমাবেশস্থলে অবস্থানরত নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আল্লামা শফিকে বলেন যে, মতিঝিলে যাওয়া তাঁর জন্য নিরাপদ নয়৷ তখন আল্লামা শফি মাঝ পথ থেকেই আবার লালবাগ মাদ্রাসায় ফিরে যান৷ অথচ মতিঝিলে প্রচার হতে থাকে যে আল্লামা শফি যত রাতই হোক আসবেন৷ সবাই যেন অবস্থান নিয়ে থাকেন৷
এরপর শেষ পর্যন্ত তিনি না আসায়, তাঁর নামে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়৷ ডেপুটি কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, হেফাজতের এই গ্রুপটি চাচ্ছিল আল্লামা শফি যাতে মতিঝিলে না আসেন এবং তাতে অবস্থান দীর্ঘায়িত করতে পারলে সরকার বেকায়দায় পড়বে৷ তবে গভীর রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে উঠিয়ে দিলে তাদের সে পরিককল্পনাও ব্যর্থ হয়৷
সোমবার পুলিশের উপ-কমিশনার হারুন অর রশীদ আবার লালবাগ মাদ্রাসায় গিয়ে আল্লামা শফির সঙ্গে বেঠক করেন৷ বৈঠকে শফি জানান যে, তাঁকে ভুল বোঝানো হয়েছে৷ তাই তিনি মতিঝিলে যাননি৷ তিনি গেলে সমাবেশ শেষে সবাই চলে যেত এবং পুলিশি অভিযান এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো না৷ তিনি তাঁকে ভুল বোঝানোর জন্য কয়েকজন নেতাকে দায়ী করেন৷ এরপর পুলিশ তাঁকে চট্টগ্রাম চলে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন এবং তাঁকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেয় পুলিশ৷
ঢাকা মাহনগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, আল্লামা শফি এই ঘটনার জন্য বিব্রত এবং অনুতপ্ত৷ তিনি চাননি কোনোভাবেই সংঘাত-সংঘর্ষ হোক৷ কিন্তু হেফাজতের ভিতরে জামায়াত শিবিরের পক্ষের একটি গ্রুপ পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য কাজ করেছে৷ মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, এ জন্য তারা বড় আকারের সুবিধাও নিয়েছেন৷ তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে৷ তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে জানান তিনি৷
এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ দাবি করেছেন, হেফাজতের মতিঝিলে বসে যাওয়ার সঙ্গে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের সম্পর্ক আছে৷ তার প্রমাণ রবিবার রাতে হেফাজত অবস্থান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়ার পর, খালেদা জিয়া তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের হেফাজতের পাশে থাকার নির্দেশ দেন৷ এর জবাবে খালেদা জিয়ার উপদেষ্ট শামসুজ্জামান দুদু বলেন, হেফাজতের কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির আল্টিমেটামের কোনো সম্পর্ক নেই৷ আর মানবিক কারণে তাদের পাশে থাকতে বলা হয়েছে৷
এই সব পরিস্থিতির কারণে সোমবার আল্লামা শফি চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে ঢাকায় কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেন নি৷ শুধু দোয়া দিবসের কথা বলেছেন৷