চট্টগ্রাম ধর্ষণের মামলা নিতে গড়িমসি কেন?
২৮ ডিসেম্বর ২০১৭মামলাটি এখন তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন৷ তারা এরইমধ্যে মোট তিনজনকে ঐধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার করেছে৷ তাদের মধ্যে দু'জন আদালতে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন৷ এই তিনজনের একজন হলো আব্দুল হান্নান ওরফে হান্নান মেম্বার৷ তাকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়৷ সে পুলিশের এসআই আব্দুল মান্নানের বড় ভাই৷ এসআই মান্নান কিছুদিন আগেও চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় কাজ করতেন৷ সম্প্রতি খাগড়াছড়ি বদলি হয়ে গেছেন তিনি৷
এর আগে আটক আরেক আসামি আবু সামা আদালতে দেয়া তার জবানবন্দিতে হান্নানকেই মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে জানিয়েছে৷ তার সেই জবানবন্দির ভিত্তিতেই চট্টগ্রামের কোতোয়ালী এলকা থেকে পুলিশ হান্নানকে গ্রেপ্তার করে৷
বৃহস্পতিবার আদালতে আবু সামার জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আটক আব্দুল হান্নান কর্ণফুলি উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ইউপি মেম্বার প্রার্থী ছিলেন৷ তাই এলাকায় তিনি হান্নান মেম্বার নামে পরিচিত৷ হান্নান সরকারি প্রজেক্ট থেকে মাছ চুরির করে৷ আর মূলত সেই মাছ চুরি করতে গিয়েই হান্নানের সঙ্গে আবু সামার পরিচয় হয়৷ সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে বড়উঠান এলাকায় পুরুষশূন্য দুবাইওয়ালার বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়৷
চট্টগ্রামে ‘বাংলা ট্রিবিউন'-এর সাংবাদিক হুমায়ূন মাসুদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই ঘটনায় মোট পাঁচজন জড়িত বলে আটকদের জবানবন্দি থেকে জানা গেছে৷ এছাড়া আটকদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তার ভাই৷ কর্ণফূলি থানার ওসির বিরুদ্ধে মামলা নেয়ায় অনেক গড়িমসির অভিযোগ রয়েছে৷ আদালত ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর এবং শোকজের নির্দেশ দিয়েছে৷''
ডাকাতি ও চার নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ১২ ডিসেম্বর রাতে৷ কিন্তু কর্ণফুলি থানার ওসি সৈয়দুল মোস্তফা ঘটনাস্থল তাঁর থানা এলাকায় না, এমন কথা বলে মামলা নিতে অনেক দেরি করেন৷ পরে একজন মন্ত্রীর নির্দেশের পর ১৭ ডিসেম্বর রাতে মামলা নেয়া হয়৷
ওসি সৈয়দুল মোস্তফা অবশ্য ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘ভিক্টিমের স্বজনরাই বাসা কোন এলাকায় ঠিকমত বলতে না পারায় মামলা নিতে দেরি হয়েছে৷ তাছাড়া তারাও প্রথমে ধর্ষণের কথা আমাকে জানায়নি৷''
পুলিশের ভাই জড়িত এ কারণে মামলা নিতে দেরি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘‘আমরা তো মামলা ডিটেক্টই করতে পারিনি৷ জানতেই পারিনি কারা এরসঙ্গে জড়িত৷ এখন পিবিআই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ তারা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে৷ আমরা সন্দেহভাজন কয়েকজনকে ধরেছিলাম৷ কারা ঘটিয়েছি তা-ই যখন আমরা জানতে পারিনি, তখন পুলিশের ভাই জড়িত থাকায় মামলা না নেয়ার অভিরযোগ কীভাবে আসে?''
একইভাবে ঢাকায় বনানির রেইন্ট্রি হোটলে ধর্ষণের মামলাও পুলিশ প্রথমে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল৷ তবে সংবাদমাধ্যমে ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় পুলিশ৷ চট্টগ্রামের ঘটনাও সংবাদমাধ্যমে আসার কারণে ধামাচাপা দিতে পারেনি পুলিশ৷
মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে প্রভাবশালী মহলকে বাঁচাতেই মামলা না নেয়ার চেষ্টা করেছিল পুলিশ৷ এই ঘটনায় পুলিশের এক কর্মকর্তার ভাইও জড়িত৷ অতীতেও পুলিশ ধর্ষণের একাধিক ঘটনায় প্রভাবশালীদের বাঁচাতে এরকম নানা ফন্দি করেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সাসপেন্ড বা প্রত্যাহার নয়, কর্ণফূলি থানার ওসির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন৷''
এ সম্পর্কে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷