পুলিশের সব পর্যায়ে ডোপ টেস্ট চায় সংসদীয় কমিটি
২৩ নভেম্বর ২০২০ডোপ টেস্ট এবং পরে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ১০ সদস্যকে চাকরি থেকে বিদায় করা হয়েছে৷ মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ৬৮ জনকে৷ কিন্তু তাদের মধ্যে সাব- ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার ওপরে কোনো পুলিশ সদস্য নাই৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের সব পর্যায়ে এই ডোপ টেস্ট হচ্ছে কিনা৷ সব পদ মর্যাদার পুলিশ সদস্য এই মাদক নজরদারি ও ডোপ টেস্টের আওতায় আসছেন কিনা৷
ডিএমপিতে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ১০ জন বরখাস্ত এবং ১৮ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ এই ১৮ জনসহ ডোপ টেস্টে মোট পজিটিভ হয়েছেন ৬৮ জন পুলিশ সদস্য৷ তাদের মধ্যে অবশ্য ৫০ জনই কনস্টেবল৷ বাকিদের মধ্যে উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাত জন, সার্জেন্ট একজন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসএই) পাঁচ জন এবং নায়েক পাঁচ জন৷
বরখাস্ত এবং সাময়িক বরখাস্ত মিলিয়ে মোট ২৮ পুলিশ সদস্য ছাড়াও আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে৷ মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে ২৫ জনের বিরুদ্ধে৷
ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন জানান, ‘‘প্রত্যেক ডিভিশনের প্রধানেরা প্রথমে নজরদারির মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করেন৷ এরপর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত কিনা তা চিহ্নিত করা হয়৷ পজেটিভ হলে বিভাগীয় মামলা করা হয়৷ বিভাগীয় মামলা পর্যায়েই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়৷ তদন্ত শেষে বরখাস্ত করা হয়৷ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া৷’’
ডিএমপির ৫৭টি বিভাগে মোট ৫৭ জন ডিসি রয়েছেন৷ সদস্য আছে ৩৪ হাজার৷ আর সারদেশে দুই লাখেরও বেশি৷
জনা গেছে, যাদের এখন পর্যন্ত চিহ্নিত এবং এবং যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ২৯ জন মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত৷
ওয়ালিদ হোসেন দাবি করেন, ‘‘সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত শাস্তির আওতায় এলেও কেউই নজদারির বাইরে নাই৷ বিশেষভাবে কোনো পদমর্যাদার কথা উল্লেখ না করেই বলতে পারি এটা সবার জন্য৷ আর শাস্তির আওতায় আসা পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে৷’’
গত জুন মাস থেকে এই নজরদারি ও ডোপ টেস্টের কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ডিএমপির বাইরে এটা শুরু হয়েছে বলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ যদিও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে এটা সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের জন্যই করা হচ্ছে৷ পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, ‘‘পুলিশ সদর দপ্তরের কথা হলো পুলিশের কোনা সদস্য মাদক গ্রহণ করবে না, মাদকের ব্যবসায় জাড়াবে না৷ তাদের কোনো মাদক সংশ্লিষ্টতা থাকবে না৷ ডিএমপির কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে৷ সারাদেশ পুলিশের ইউনিটগুলোর জন্যও একই নির্দেশনা৷ তাদেরও এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে৷ কোনো কোনো ইউনিট এরই মধ্যে ব্যবস্থাও নিয়েছে৷’’ তবে এ নিয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি৷
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘পুলিশ সদস্য বলতে সব পুলিশ সদস্য ৷ এখানে কোনো র্যাংকের বিষয় নেই৷ সবাই এই নির্দেশের আওতায়৷’’
কিন্তু পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কোন প্রক্রিয়ায় নজরদারি করা হচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ আর এখন পর্যন্ত এসআই-এর উপরে কাউকে শাস্তি পেতে বা চিহ্নিত হতে দেখা যায়নি৷ বিষয়টি পুলিশের সাবেক আইজি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ এমপির নজরেও এসেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের সব পর্যায়ের সদস্য এবং কর্মকর্তাদেরই এই ডোপ টেস্টের আওতায় আনা দরকার৷ মাদকাসক্ত যে কেউ হতে পারেন৷ শুধু কনস্টেবল বা ইন্সপেক্টর কেন, এসপিও মাদকাসক্ত হতে পারেন৷ তাই কাউকেই এর বাইরে রাখা যাবেনা৷ আর সব পর্যায়ে নজরদারি সম্ভব৷ পুলিশের আইজিও তো নজরদারির বাইরে নাই৷ তাকেও তো কোনো কোনো প্রক্রিয়ায় নজরদারী করা হয়৷’’
সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাই এই নজরদারি ও ডোপ চেস্ট পুলিশের সব পর্যায়ে করার জন্য সুপারিশ করেছে৷ শুধু তাই নয়, পুলিশের বাইরেও যারা সরকারি চাকরি করেন তাদেরও ডোপ টেস্টের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘শুধু পুলিশ কেন যে কোনো সরকারি চাকরিজীবী মাদকাসক্ত হতে পারেন৷ চাকরিতে নিয়োগের সময় তো একবার পরীক্ষা করা হয়৷ কিন্তু তারপর যে সে আর মাদকাসক্ত হবে না তা তো বলা যায় না৷’’
তবে তিনি এই কাজে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও পেশাদারত্ব নিশ্চিতের দাবি করেছেন৷ কারণ তার মতে, ‘‘পুশিলসহ সব সার্ভিসে সিনিয়র অফিসারেরা এক ধরনের সুবিধা বা সুযোগ পায়৷ সেটা যেন না হয়৷ আর তারা যে এলাকায় কাজ করেন সেখান থেকেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে রিপোর্ট নেয়া যেতে পারে৷’’